বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অর্থায়নে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩-এর অংশ হিসেবে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকার হোটেল শেরাটনে আয়োজিত ‘ওয়াটার অ্যান্ড ওয়েস্ট : স্ট্রেন্থনিং লোকাল গভর্নেন্স ফর আরবান রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি’ শীর্ষক এই সেশনে মন্ত্রী এ কথা জানান।
সুইস দূতাবাসের সহযোগিতায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশ আয়োজিত সেশনে তিনি বলেন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ওয়েস্ট ইনসিনারেটর নির্মাণ করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় আমরা এই প্ল্যান্ট তৈরি করব এবং এই বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। সেখানে দিনে তিন-চার হাজার টন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা হবে এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে প্ল্যান্টের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সুইস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কোঅপারেশন কোরিন হেনচোজ পিগনানি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের উদ্বেগের জায়গা বের করাই হচ্ছে সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা স্থানীয় সরকার, নাগরিক, সুশীল সমাজ ও তৃণমূলের সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ। ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টিং ও কমিউনিটি সেনসিটাইজেশনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সমস্ত অংশীদারদের সাথে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।’
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে, যা পানি ও স্যানিটেশনের (পয়ঃব্যবস্থা) ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমাদের জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের বিশেষ করে নারীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে কাজ করতে হবে। তাহলে নারীরা দুর্যোগের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম উপায় হলো নারীদের পানি শোধনাগার ও অন্যান্য জলবায়ু-সহিষ্ণু অবকাঠামো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এই পদক্ষেপ তাদের জীবিকা অর্জনে এবং পানি উদ্যোক্তা হয়ে স্বনির্ভর হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট ইন্ডিয়ার সদস্য আগাথা সাংমা এমপি এবং ক্লাইমেট পার্লামেন্ট নেপালের সদস্য মাধব সাপকোটা এমপি।
বিশেষজ্ঞদের জন্য এই সম্মেলন ছিল একটি সময়োপযোগী আয়োজন, যেখানে তারা জলবায়ু-সহিষ্ণু টেকসই উন্নয়ন অর্জনে স্থানীয় শাসনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। সেশনে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন, কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম, উন্নত নীতি ও বিধান প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থিত সুইস দূতাবাস ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্টকে ‘জিও৪আইএমপ্যাক্ট’ শীর্ষক একটি বহু-বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে গণতন্ত্রের উন্নয়ন এবং পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ন্যায়সঙ্গত ও জলবায়ু-সহিষ্ণু সেবা নিশ্চিত করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এ প্রকল্প প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, দরিদ্র, তরুণ প্রজন্ম ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেয়। এ ছাড়া, সবার জন্য জবাবদিহিতামূলক ও ন্যায়সঙ্গত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সেবা প্রদানকারীদের সাথে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করে।
মন্তব্য করুন