এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সাত শতাধিক মন্দির-মণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। তাই পূজা উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি মন্দির-মণ্ডপে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সনাতনী জোট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা, ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব কারাবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি এবং বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র তথা দেশ বিনির্মাণের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার রাষ্ট্রের কাছে জানিয়ে আসা তাদের আট দফা দাবির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ সময় বৈষম্যের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রসেনজিৎ হালদার।
সনাতনী জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে তথ্য এসেছে- পাঁচটি জেলার সাতটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এ বছর ৭০০-এর উপরে পূজামণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাতক্ষীরা জেলার। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার ৫৫টি পূজামণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ সামগ্রিকভাবে প্রত্যেক জেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারি খরচে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রাখারও দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সকল কারাবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি, আসন্ন দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটিসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এ সময় দুর্গাপূজার আগেই অন্তত জামিনে হলেও চিন্ময় দাসের মুক্তি দাবি করা হয়।
সংগঠনের আরেক প্রতিনিধি পিযুষ দাস বলেন, এখন দুর্গাপূজা কবে জানার জন্য ক্যালেন্ডার দেখতে হয় না, প্রতিমা ভাঙচুরের খবর শুনলেই জানা যায় পূজা এসে গেছে। মণ্ডপে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, বাংলাদেশের বাইরে থেকে তো কেউ এসে হামলা করেনি। বাংলাদেশের ভেতর থেকেই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। কারা এই দুষ্কৃতিকারী, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের নিশ্চয়তা চেয়ে সংগঠনের অন্যতম প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট সুশান্ত অধিকারী বলেন, এই দেশের নাগরিক হিসেবে পূজা-পার্বণ ও অনুষ্ঠান করা আমাদের জন্মগত নাগরিক অধিকার। তাই সবার কাছে প্রশ্ন, আমাদের প্রতিমা কেন পাহারা দিতে হবে? অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তো পাহারা দিতে হয় না।
গত রোববার মহালয়ার মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রতিনিধি সাজেন কৃষ্ণ বল, মহিলা প্রতিনিধি কণা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন