বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী লক্ষ্মীপূজা আজ সোমবার। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূর্ণিমাকে বলা হয় কোজাগরী। সেজন্য এই পূজা শ্রীশ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা নামেও পরিচিত।
শাস্ত্রমতে, দেবী লক্ষ্মী ধনসম্পদ তথা ঐশ্বর্যের প্রতীক। উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দর্যের দেবী হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মী। তাই লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের দেবী। তিনি বিষ্ণুর পত্নী, বিষ্ণুর শক্তিরও উৎস।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, সোমবার (০৬ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৫৪ মিনিট থেকে পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে। আগামী মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে এই তিথি শেষ হবে।
বিষ্ণু রাম ও কৃষ্ণরূপে অবতার গ্রহণ করলে লক্ষ্মী সীতা ও রাধারূপে তাদের সঙ্গিনী হন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে দেবী লক্ষ্মী ধনধান্যে ভরিয়ে দিতে ভক্ত গৃহে আসেন। প্রাচীনকাল থেকেই রাজা-মহারাজা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহস্থ সবাই দেবী লক্ষ্মীর পূজা দিয়ে আসছেন। সরায়, ঘটে বা মূর্তিতে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। এ পূজা ব্যক্তিগত বা সর্বজনীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তবে ব্যক্তিগতভাবেই এই পূজা বেশি হয়ে থাকে। বার্ষিক এই পূজা ছাড়াও প্রতি বৃহস্পতিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক পরিবারে লক্ষ্মীপূজা হয়।
লক্ষ্মীপূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে উপবাসব্রত পালন করেন। সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে লক্ষ্মীপূজায় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। লক্ষ্মীপূজার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো- সিঁদুর, ঘট, ধান, মাটি, আম্রপল্লব, ফুল, দূর্বা, তুলসীপাতা, হরীতকী, চন্দন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, আতপ চাল ও জল। লক্ষ্মীপূজায় মঙ্গলঘট, ধানের ছড়ার সঙ্গে গৃহস্থের আঙিনায় শোভা পায় চালের গুঁড়োর আলপনায় লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ।
লক্ষ্মীপূজা ঋগ্বেদে শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী অর্থে লক্ষ্মীর নাম পাওয়া যায়। তৈত্তিরীয়সংহিতায় লক্ষ্মী ও শ্রীআদিত্যের দুই স্ত্রীরূপে কল্পিত। শতপথব্রাহ্মণে প্রজাপতি থেকে এবং রামায়ণে সমুদ্রস্নানের সময় পদ্মহস্তে তিনি উত্থিত হন বলে বর্ণিত হয়েছে। পৌরাণিক যুগে লক্ষ্মী নানাভাবে বর্ণিত হয়েছেন। তিনি কখনো বিষ্ণুশক্তি লক্ষ্মী, আবার কখনো কমলা, গজলক্ষ্মী, মহালক্ষ্মী ইত্যাদি নামে পরিচিত। লক্ষ্মীদেবীর রূপবৈচিত্র্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, তিনি কখনো দ্বিভুজা, কখনো বা চতুভুর্জা। তবে তিনি সর্বত্রই পদ্মা সেনা ও পদ্মহস্তা। প্রভাত সূর্যের মতো তার জ্যোতি। তিনি বিভিন্ন অলংকারে অলংকৃতা। তার বাহন পেঁচক বা প্যাঁচা।
মন্তব্য করুন