চীন থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য ২৭ হাজার কোটি টাকায় ২০টি আধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে সরকার। খবরটি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে তুমুল আলোচনা চললেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকরা যখন তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’ সাংবাদিকরা আরও জানতে চাইলে তিনি হেসে জবাব দেন, ‘জানলে যে সব বলে দিতে হবে, সেটা তো না।’
তার এই মন্তব্যে বোঝা যায়, সরকার বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চায় না।
২৭ হাজার কোটি টাকার বড় চুক্তি
এর আগে সরকারি সূত্রের বরাতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, বাংলাদেশ সরকার চীনের কাছ থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি জে-১০সিই মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ) কিনতে যাচ্ছে।
এই জে-১০সিই যুদ্ধবিমানগুলো চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি—এগুলো ৪.৫ প্রজন্মের উন্নত ফাইটার জেট, যা একই সঙ্গে আকাশে যুদ্ধ, স্থল আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে সক্ষম।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একটি নথি অনুসারে, প্রতিটি বিমানের প্রাক্কলিত মূল্য ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২০টির মোট দাম প্রায় ১২০০ মিলিয়ন ডলার বা ১৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।
তবে বিমানগুলোর সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশ, বিমা, ভ্যাট, প্রশিক্ষণ ব্যয়, এজেন্সি কমিশন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামসহ সম্পূর্ণ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
এই বিপুল অঙ্কের অর্থ আগামী ১০ অর্থবছরে (২০৩৫-২০৩৬ পর্যন্ত) পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকেই অর্থ সঙ্কুলান করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের পেছনের প্রেক্ষাপট
চীনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব প্রথমে ওঠে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মার্চ মাসের চীন সফরের সময়। সেই সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরসংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে জে-১০সিই মডেলটি বেছে নেওয়া হয়।
এরপর বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়, যারা এখন ক্রয় প্রক্রিয়া, সরবরাহ সময়সীমা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হলেও, সরকার এখনো চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন