

বাংলার প্রকৃতি ধীরে ধীরে ঋতুবদলের পথে। উত্তরে শিশির ও কুয়াশার আভাসে শীতের আগমন শুরু হলেও ঢাকার বাতাসে এখনো গরমের দাপট টিকে আছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই সারা দেশে শীতের ছোঁয়া টের পাওয়া যাবে। তবে এবারের শীত কেমন হবে—তা জানতে আরও কিছুটা অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
তবে মধ্য হেমন্তেও দিনের গরম যেন কাটছেই না। শেষ রাতে হালকা ঠান্ডা টের পাওয়া গেলেও সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গরমের অস্বস্তি তীব্র। মাঠের কৃষক, শ্রমজীবী কিংবা অফিসযাত্রী সবাই এখন একই প্রশ্নে ব্যস্ত—কবে আসবে প্রকৃত শীত?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের তুলনায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমবে। ফলে গরমের অনুভূতি কিছুটা কমলেও এখনো শীত পুরোপুরি নামেনি।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসিকে জানান, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেই শীতের অনুভূতি স্পষ্ট হয়। এখনো শীতকাল শুরু হয়নি, তবে শেষরাত বা ভোরে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে। সাধারণত দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা কম হলে আমরা একে শীতকাল বলি।
তার মতে, নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকেই উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে শীত নামা শুরু হয়। সে হিসাবে, আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে শীতের আমেজ মিলবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উত্তরে শীতের ছোঁয়া, ঢাকায় গরমের দাপট উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়লেও রাজধানী ঢাকায় এখনো গরমের তীব্রতা বিরাজ করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি। অর্থাৎ তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে না নামায় ঢাকায় শীতের অনুভূতি তেমন পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, নীলফামারীর সৈয়দপুরে একই সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.২ ডিগ্রি, যা উত্তরাঞ্চলে শীতের উপস্থিতি নিশ্চিত করছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড করা হয়েছে সর্বনিম্ন ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা—যা দেশের সবচেয়ে ঠান্ডা এলাকা হিসেবে এবারও এগিয়ে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই তেতুলিয়া, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা প্রভৃতি এলাকায় শীতের অনুভূতি শুরু হয়।’
তিনি আরও জানান, ঢাকায় শীতের ছোঁয়া পেতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। তবে বাতাসের গতি বাড়লে কিংবা সূর্যের আলো কমে এলে রাজধানীতেও ধীরে ধীরে ঠান্ডা অনুভূত হবে।
ঊন বর্ষায়, দুনো শীত? প্রবাদ আছে—‘ঊন বর্ষায়, দুনো শীত’; অর্থাৎ বর্ষায় বৃষ্টি কম হলে শীতে ঠান্ডা বেশি পড়ে। এ বছর কিন্তু তার উল্টো চিত্র। বর্ষায় ও তার পরের মাসগুলোতেও বৃষ্টিপাত হয়েছে তুলনামূলক বেশি। নভেম্বরের শুরুতেও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টি দেখা গেছে।
এ বিষয়ে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘যে বছর বর্ষায় বৃষ্টি বেশি হয়, সে বছর শীতে ঠান্ডা তুলনামূলক কম থাকে। কারণ মাটিতে তখন আর্দ্রতা ও জলীয় বাষ্প বেশি থাকে।’
অর্থাৎ চলতি বছর শীত তেমন কনকনে নাও হতে পারে, এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
চিকিৎসকদের সতর্কতা ঋতুবদলের এই সময়ে সর্দি, কাশি ও জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফরহাদুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে গা ব্যথা, জ্বর, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।’
তিনি পরামর্শ দেন, শীত আসার আগেই বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন