

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ রায়ের পর ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। চিঠিতে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই হয়, যা ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। এ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে পলাতক আসামিদের দ্রুত ও সহজে বিনিময়ের জন্য করা হয়েছে। ঢাকা এই চুক্তির আওতায় হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করতে ফেরত চায়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার প্রায় ঘণ্টা তিনেক পর ভারত এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, এই রায় তাদের নজরে এসেছে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে লেখা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে ভারত এই নামকরণের সঙ্গে একমত না-ও হতে পারে।
কী আছে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা আছে। আর সেটা হলো, যার হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগটা যদি 'রাজনৈতিক প্রকৃতি'র হয়, তাহলে সেই অনুরোধ খারিজ করা যাবে।
তবে কোন কোন অপরাধের অভিযোগকে 'রাজনৈতিক' বলা যাবে না, সেই তালিকাও বেশ লম্বা–এর মধ্যে হত্যা, গুম, অনিচ্ছাকৃত হত্যা ঘটানো, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ও সন্ত্রাসবাদের মতো নানা অপরাধ আছে।
এখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছিল, তার মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনেরও নানা অভিযোগ আছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে 'রাজনৈতিক' বলে খারিজ করা কঠিন।
তার ওপর ২০১৬ সালে যখন মূল চুক্তিটি সংশোধন করা হয়, তখন এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল, যা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বেশ সহজ করে তুলেছিল।
সংশোধিত চুক্তির ১০(৩) ধারায় বলা হয়েছিল, কোনো অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেসব অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করলেও চলবে। শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে।
কিন্তু এরপরও চুক্তিতে এমন কিছু ধারা আছে, যেগুলো প্রয়োগ করে অনুরোধ-প্রাপক দেশ তা খারিজ করার অধিকার রাখে।
যেমন, অনুরোধ-প্রাপক দেশেও যদি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো 'প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে'র মামলা চলে, তাহলে সেটা দেখিয়ে অন্য দেশের অনুরোধ খারিজ করা যায়।
শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে অবশ্য এটা প্রযোজ্য নয়, কারণ ভারতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হচ্ছে না বা অচিরে হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।
দ্বিতীয় ধারাটি হলো, যদি অনুরোধ-প্রাপক দেশের মনে হয় ‘অভিযোগগুলো শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি’ তাহলেও তাদের সেটি নাকচ করার ক্ষমতা থাকবে।
অভিযোগগুলো যদি 'সামরিক অপরাধে'র হয়, যা সাধারণ ফৌজদারি আইনের পরিধিতে পড়ে না, তাহলেও একইভাবে অনুরোধ নাকচ করা যাবে।
ফলে ভারত এখনো অনায়াসেই বলতে পারে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছের বলে তারা মনে করছে না এবং সে কারণেই তাকে হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।
অর্থাৎ ‘অভিযোগগুলো শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি’– এই ধারাটি ব্যবহার করেই তখন প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করা যাবে বলে দিল্লিতে অনেক পর্যবেক্ষকের অভিমত।
মন্তব্য করুন