কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে : গবেষণা

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য মাস উদযাপন উপলক্ষে ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রাম এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। ছবি : কালবেলা
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য মাস উদযাপন উপলক্ষে ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রাম এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। ছবি : কালবেলা

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গ্রহীত পাইলট প্রকল্পের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্যকে একীভূত করতে এবং তৃণমূল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য গত বছর জানুয়ারি থেকে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ব্র্যাক ইনিস্টিটিউট অফ এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইইডি)। এই কর্মসূচির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য দুটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিআইইডি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনফ্যান্ট, চাইল্ড, অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রিস্ট, অস্ট্রেলিয়া পরিচালিত ইমপ্যাক্ট স্টাডি অন প্যারাকাউন্সেলর মডেল ইন্টিগ্রেটেড ইন প্রাইমারি হেলথ কেয়ার শীর্ষক একটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম কামরুজ্জামান মজুমদার মানসিক স্বাস্থ্য পাইলট প্রকল্পের প্রক্রিয়া মূল্যায়ন অন্য গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। এই দুই গবেষণায় দেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র উঠে এসেছে।

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য মাস উদযাপন উপলক্ষে ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রাম এক অনুষ্ঠানে রোববার এ দুটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে।

গবেণায় দেখা গেছে, প্যারা-প্রফেশনালরা সীমিত জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করলেও প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করেছেন। তারা সেবাগ্রহীতাদের মন খুলে কথা বলা, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এর ফলে সেবাগ্রহীতারা মানসিকভাবে স্বস্থি ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। সেবাগ্রহীতাদের অনেকে ক্রোধ দমনের কৌশলও রপ্ত করতে পেছেন এবং চিকিৎসায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এ ছাড়া প্যারা-প্রফেশনালদের কাছ থেকে মনোসামাজিক সহায়তা পাওয়ার ফলে সেবাগ্রহীতা ও কমিউনিটির সদস্যদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

বিআইইডি থেকে ড. তাবাসসুম আমিনা কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রভাববিষয়ক গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপন করে তিনি জানান পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, মানসিক চাপ এবং কষ্টের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, গুরুতর মানসিক যন্ত্রণা, বিষণ্নতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য, মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা এবং সামাজিক সম্পর্কের মতো ক্ষেত্রগুলোতে জীবনের মান উন্নয়ন হয়েছে। অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান মজুমদার প্রকল্পের প্রক্রিয়া মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে প্যারাপ্রফেশনালদের জন্য তৈরি করা প্রশিক্ষণ মডিউলটির কার্যকারিতা তুলে ধরেন। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে প্যারাপ্রফেশনালদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস তৈরিতে হাতে ধরে শেখানো, তত্ত্বাবধান এবং নিজের যত্ন বিষয়ে তাৎপর্যের উল্লেখ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজেস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এই প্রকল্পটি সেবাগ্রহীতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি প্রতিটি ধাপে অত্যন্ত সফল প্রমাণিত হয়েছে। পরে ধাপে এর পরিসর আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা শুধু সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণিই নয় বরং প্যারাপ্রফেশনাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবার জন্য এটি নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, শুধু শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কার দূর করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোনো স্বাস্থ্যই টেকসই নয়। সরকার এবং এনজিওগুলির মধ্যে অংশীদারত্বের মাধ্যমে সাধারণের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, সরকারের সহায়তা ও কার্যক্রম পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কখনো কখনো পদক্ষেপগুলো ভালোর চেয়ে বরং ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। সেদিকে নজর রাখতে হবে। যত্ন এবং সংবেদনশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্যারাকাউন্সেলর মডেল একটি নতুন বিষয়, বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য অঙ্গনে একে পরিচিত করে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে পথপ্রদর্শক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্তাবধানে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পাইলট প্রকল্পটি কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ দুটি গবেষণা থেকে পাওয়া ফলগুলি বাংলাদেশে কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের গুরুত্ব ও উপযোগিতা তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির হার উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সম্প্রতি যার প্রাদুর্ভাব ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং এদের মধ্যে প্রায় ৯২ দশমিক ৪ শতাংশই চিকিৎসাসেবার বাইরে। জাতিসংঘের ২০২২ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে ১৩ শতাংশ ব্যক্তি এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এটি বেড়ে প্রায় ১৫ শতাংশে বেড়ে যেতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘সিলেটে পাথর লুটে জড়িতদের পুরো তালিকা প্রকাশ করবে প্রশাসন’

নির্ধারিত সময়ে হয়নি ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও মূল্য নির্ধারণ প্রতিবেদন

পরশু, তরশু নাকি আজই?

রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমালে কি ফোনে আগুন লাগতে পারে?

স্ত্রীর প্রতারণার ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন শওকত

যে ৩৩ ওষুধের দাম কমিয়েছে ইডিসিএল

ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী!

বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস হাসপাতালে ভর্তি

দ্বিতীয় ধাপে কলেজ পেতে যা করতে হবে শিক্ষার্থীদের, জানাল শিক্ষা বোর্ড

দেশকে আর তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে দেব না : চরমোনাই পীর

১০

ভারতের মাটিতে আ.লীগের তৎপরতা নিয়ে ২ দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থান 

১১

শিক্ষককে ছাত্রীর ছুরিকাঘাত, থানায় মামলা

১২

৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি

১৩

হোটেলকক্ষে গোপন ক্যামেরা? মোবাইল দিয়ে শনাক্ত করবেন যেভাবে

১৪

আলোচিত সেই কৃষি কর্মকর্তা বদলি

১৫

আমির খানের গোপন সন্তান থাকার অভিযোগ ভাই ফয়সালের

১৬

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজ পায়নি ৫৭৬৫ জন

১৭

শিল্পাকে বিয়ে করতে কঠিন শর্ত মানেন রাজ

১৮

ভুটানকে হারিয়ে সাফে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

১৯

৩১ দফার সমর্থনে বিএনপি নেতা ফয়সাল আলীমের গণসংযোগ ও পথসভা

২০
X