গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক ও মজুরি বৃদ্ধিতে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাবুল হোসেনকে মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। আজ ২৩ নভেম্বর, (বৃহস্পতিবার) এ চিঠি প্রেরণ করা হয়।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক ও আমাদের জোট মজুরি বৃদ্ধিতে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাবুল হোসেন গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত শ্রমিক পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে গাজীপুর মেট্রো ডিবি তাকে আটক করে এবং প্রায় ২০ ঘণ্টা তাকে ডিবি অফিসে আটক করে রাখা হয় এবং শারীরিকভাবেও নির্যাতন করা হয়। এ সময় তার পরিবার বা সংগঠন কারও সাথেই যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় নাই যা কোনোভাবেই আইন সম্মত নয় বরং মানবাধিকার লঙ্ঘন।
গত ১ বছর ধরে পোশাক খাতের শ্রমিকরা ২৫০০০/- টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। মালিক পক্ষের স্বার্থে ১২,৫০০/- টাকা মজুরি নির্ধারণ হওয়ার পর থেকে শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় এবং রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে তিনজন এবং একজন আগনে পুড়ে নিহত হন।
বাবুল হোসেনকে গাজীপুর বাসন থানায় এফআইআর নং ৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের একটি মামলায় ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৯/৩০৭/৩২৫/৪২৭/৪৩৬ অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, গত ৩০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে গাজীপুরের মোগড়খাল এলাকায় ইয়ামাহ শোরুমের সামনে অজ্ঞাতনামা ১১০০/১২০০ শ্রমিকের সঙ্গে গাড়িতে ভাঙচুড় ও অগ্নিসংযোগ ঘটানোর যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। শুধু তাই নয় বাবুল হোসেনকে ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এবং গত ২০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বাসন থানায় রিমান্ডে নিয়ে আসা হয়।
এ ধরনের কোনো ঘটনার সাথে বাবুল হোসেনের কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারেনা। কেননা গত ৩০ অক্টোবর বাবুল হোসেন আশুলিয়ায় তার বাসা ও পার্শ্ববর্তী সংগঠনের কার্যালয়ে ছিলেন এবং ৩১ অক্টোবর তিনি ঢাকায় নিহত রাসেল হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে অংশ নেন। এভাবে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ২৫ হাজার টাকা মজুরির আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাবুল হোসেনসহ অসংখ্য শ্রমিককে গ্রেফতার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি প্রতিকার প্রত্যাশা করে।
আমরা পরিষ্কারভাবে মনে করি বাবুল হোসেন তার সাংবিধানিক অধিকার বলে, সাংগঠনিক কাজ এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। শ্রমিক অধিকার কর্মী হিসাবে ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করা তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ। অথচ তাকে যেভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে তাতে তার সাংবিধানিক, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে।
অতএব, আমরা প্রত্যাশা করি মানবাধিকার কমিশন বাবুল হোসেনসহ সকল আটককৃত শ্রমিকদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মন্তব্য করুন