ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, সমবায় আইনটি খুবই আমলাতান্ত্রিক আইন। আমার মনে হয়েছে, এটি একটি অগণতান্ত্রিক আইন।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও দৈনিক কালবেলা গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমাদের দেশে আইনগুলো তৈরি হয় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা শব্দটাই দেওয়া ঠিক হয়নি, শব্দটা সাপোর্ট বা পৃষ্ঠপোষক হতে পারে; নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা শব্দটাই খারাপ ও অগণতান্ত্রিক।
সমবায় সমিতি আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনটি দেখে মনে হচ্ছে জনগণ না সরকারি কর্মকর্তাদেরই মালিক সরকার। তাদের যতভাবে সুযোগ-সুবিধা ও সুরক্ষা দেওয়া যায়, সেটাই যেন ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশ এখনও শতভাগ আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমলাতান্ত্রিকতা থেকে আমরা এক চুলও সরতে পারিনি। সমবায় আইনটি খুবই আমলাতান্ত্রিক আইন।
আমার মনে হয়েছে, এটি একটি অগণতান্ত্রিক আইন। একজন সরকারি কর্মকর্তা কতভাবে খবরদারি করতে পারে, তার সবটাই রয়েছে এই আইনে। পৃষ্ঠপোষকতা তো আরও অনেক দূরের ব্যাপার।
পুর পৃথিবীজুড়ে আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়াজুড়ে পোস্ট কলনিয়া স্টেটগুলোর যে বৈশিষ্ট্য তার সবগুলোগুলো বৈশিষ্ট্য আমাদের এখানে রয়েছে। আইসিটি বা সমবায় আইনগুলো দেখেছি। যেখানে তাদের থাকার কথা সেখানে থাকবে না, যেখানে আমলাদের কোনো কাজ নেই সেখানে খবরদারি করবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জমিদারি ভাগ হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অংশটি পড়েছিল নওগাঁতে। সেখানে তিনি কৃষকদের জন্যে একটি সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। এটিই ছিল এ উপমহাদেশে প্রথম সমবায় সমিতি। এমনকি তার ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন এ বিষয়ে পড়াশোনার জন্য।
এ ছাড়া কুমিল্লায় ড. আখতার হামিদ খান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। কাজেই ঐতিহাসিকভাবে সমবায়ের বড় একটি আন্দোলন বাংলাদেশে ছিল। সাগর-নদীতে যখন মাছ ধরা বন্ধ থাকে তখন জেলেদের কার্ড দেওয়া হয়, কিন্তু আমি দেখেছি জেলেরা সেসব কার্ড সরাসরি পায় না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ক্যাডার বা সিন্ডিকেট সাব কন্ট্রাক্টে মাছ ধরায়, ওরাই মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে জেলেদের কার্ড দেয়। এগুলো ঠেকিয়ে যদি সত্যিকারের কৃষক, জেলে, মজুরকে কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, সেটাই আইনের পরতে পরতে থাকলে খুব ভালো হতো।
জেলা প্রশাসন শব্দ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এই শব্দ দিয়ে আমাদের বানানো হয়েছে প্রজা।
সমবায় আইন নিয়ে তিনি বলেন, যারা সমবায় নিয়ে কাজ করে তাদের মতামত না নিয়ে যারা আমলা তাতদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সমবায় আইন বানানো হচ্ছে।
একটি পৃষ্ঠপোষকতা মূলক একটি পরিচালনা সহায়তা মূলক, যারা প্রান্তিক কৃষক তাদের মূল্যায়ন করে আইনের রিভিউ করা দরকার।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ও কালবেলা মাল্টিমিডিয়ার শিফট ইনচার্জ অমিত হাসান রবিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) আহসান কবীর। আলোচক ছিলেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি ও রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন