কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সমবায়গুলোর লক্ষ্যে না পৌঁছানোর পেছনে আইন দায়ী : আফজাল হোসেন

রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন। ছবি : কালবেলা
রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন মনে করেন সমবায় নিয়ে আইনই সমবায়কে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেটে দৈনিক কালবেলার প্রধান কার্যালয়ের সেমিনার কক্ষে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমবায় গঠনে অন্তরায় ও উত্তরণ : প্রসঙ্গ সমবায় সমিতি আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মতামত ব্যক্ত করেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও দৈনিক কালবেলার যৌথ আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ও কালবেলা মাল্টিমিডিয়ার শিফট ইনচার্জ অমিত হাসান রবিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) আহসান কবীর। আলোচক ছিলেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি ও রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম।

আফজাল হোসেন সমবায় আইন সংস্কারের দাবি তুলে বলেন, ‘প্রথম কথাটি বলা যায় যে আমাদের সমবায়গুলো তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না কারণ সমবায় আইনটি একটি বড় অন্তরায়। এটা দিয়েই বোঝা যায় যে আইনটা সমবায়ের জন্য কতটা অনুকূল না প্রতিকূল। আমার মনে হয় ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক পর্যায়ে যারা আছে তাদের অনুকূলে যদি আইন করতে হলে পুরো আইনটাকে নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার এবং এটির সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ওখানে আমরা যারা কাজ করি প্রায় এক দশক হল ওনাদের মতো আমরাও রাজশাহী অঞ্চলে একেবারেই যারা আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা দেখতে চেষ্টা করি, তারা কতটুকু এই সমবায় করে দাঁড়াতে পারে। আমরা সবাই জানি, আদিবাসীদের জমি সমস্যা একটি বড় সমস্যা তাদের তো জমির মালিকানা নিয়েই একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয় তারপরে আদিবাসীদের সেভাবে মর্যাদাও দেওয়া হয় না। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের জমিগুলো বেদখল হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি আপনারা দেখেছেন পত্র-পত্রিকাতে প্রায় গ্রাম পর্যন্ত উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে। কবরস্থানকেও দখল করে দখলদাররাও পুকুর বা অন্য কিছু বানাচ্ছে। সেই জায়গায় এ রকম একটা অবস্থার মধ্যে তাদের টিকে থাকাটাই একটি বড় সংকটের জায়গা।

তিনি বাণিজ্যিক কৃষি নিয়ে বলেন, আমাদের উত্তরাঞ্চলে রাজশাহীতে বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। আপনার ড্রাগনফল থেকে শুরু করে মাল্টা কিংবা পেয়ারা যাই খাই না কেন সবই কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। এটা হয়ত ভাবা যেত হয়ত বা এটি একটি সমবায়ের ভিত্তিতে করা যেত। কিন্তু সেটা না করে শহরের বিত্তশালীদের হাতে বাণিজ্যিক চাষ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ওখানে যন্ত্রপাতির মালিকানাও কিন্তু যারা ধনাঢ্য ব্যক্তি তাদের কৃষকের নয়। যার জন্য হচ্ছে কি? একদিকে যেমন যেভাবে বলা হচ্ছে মেকানাইজ করলে কাজের খরচ কমবে সেটা তো কমছেই না বরং এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে দুই হলো যেটা তাদের মালিকানা তাদের হাতে নেই বলে কৃষকরা সময় মতো পাচ্ছে না। এজন্য অনেক সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, যেটা হয় যে জমির অর্থাৎ কৃষি জমির স্বাস্থ্য হানি হয়। যেসব যন্ত্র এখানে ব্যবহার করা হয়, যন্ত্রগুলো আদৌ আমাদের জমির যে অনুজীবগুলো আছে সেগুলোকে সুরক্ষা করে কি না সেটা নিয়েও একটি গবেষণা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি। এদিকে আমাদের কৃষকের হাতে যদি এই সুবিধা থাকত তাহলে তারা কিন্তু এই বিষয় চিন্তা করত কারণ তাদের মাথায় থাকত যাতে তারা বংশ পরম্পরায় এখানে চাষ করে তাদের জীবিকা নির্ভর করতে পারে। আজকে আমরা প্রায়ই দেখি আমচাষিদের অতিরিক্ত হরমোন ব্যবহারের কারণে যারা বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ করত তারা আর তাদের জমি আর বর্গা দিতে চাচ্ছে না অনেকেই কিন্তু আমবাগান কেটে ফেলার উপক্রম করছে অনেক জায়গায় এত বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা সান্তাহার অঞ্চলে যেখানে গরু, ছাগল বা অন্য প্রাণিসম্পদের যে চারণভূমি যেগুলো ছিল তারা সেখানে যেতে পারছেন না। এমনকি মুরগিও তারা প্রতিপালন করতে পারছে না।

তিনি এরপর সামাজিক সংকট নিয়ে কথা বলেন। তিনি নারীদের কৃষিকাজে যুক্ত হওয়া নিয়ে বলেন, আদিবাসী নারীরা কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীরা তারা নিজেরাও কিন্তু জানে যে আমাদের এখানে অনেক পুরুষ এখন পেশার কারণে শহরমুখী হচ্ছে। নারীরা কিন্তু কৃষি বা সংসারটা দেখছে। তারা কিন্তু ওখানে কৃষি কাজ করতে গিয়ে নানা রকমের সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন সমবায় আইন যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে হয় তাহলে খুব ভালো তবে তিনি তার বাস্তবায়ন দেখতে চান।

তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক কৃষক, চাষি তাদের সমবায়ে নেওয়ার কথা থাকলেও দেখা যাচ্ছে, একটা সমবায় সমিতি হয় কিন্তু তাদের অন্তরালে। যা চলে যায় ধনী লোকদের দখলে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা এর সুবিধা পায় না। আরেকটা হলো নারী কৃষকের স্বীকৃতি। নারীরা কৃষিকাজের সাথে যুক্ত, বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলে তো মানে প্রায় নারীরাই কিন্তু কৃষি কাজের সাথে যুক্ত তবে তাদের স্বীকৃতি নেই।

তিনি আরও সহজ শর্তে কৃষকদের ব্যাংক ঋণ দেওয়ার কথা বলেন।

এ ছাড়াও আফজাল হোসেন গভীর নলকূপের অপারেটরদের নিন্দা করে বলেন, গভীর নলকূপের কথায় এজন্যই আসছে- আপনারা জানেন, গত বছরে দুজন আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। পানির দাবিতে এবারও কিন্তু একজন আদিবাসী বিষপান করেছিল। যদিও সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। গভীর নলকূপ সম্পর্ক নীতিমালায় বলা আছে যে কৃষক সমবায় দিয়ে এটা পরিচালিত করার কথা কিন্তু তাদের কিন্তু এখানে দেখা যায় একটি অপারেটর নিয়োগ করা হয় এই অপারেটর দিয়েই কিন্তু এসব ঘটনা ঘটে। অপারেটররা চায় যে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা যেন আস্তে আস্তে চাষাবাদ থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তারা ওখানে কি করে? ওখানে তারা আলু চাষের সময় দেখবেন ১৫ হাজার করে প্রতি বিঘা এই মাত্র চার মাসের জন্য হয় কোনো কৃষকের পক্ষে সম্ভব না।

১৫ হাজার রেন্ট মানি দিয়ে চাষাবাদ করে সে কোনোভাবেই লাভ পাবে না। কিন্তু আলুচাষিরা তাই করছে এবং এদিক দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে বড় আলুচাষিদের লাভ হচ্ছে। এতে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু ক্ষুদ্র চাষিরা তা পারে না।

এবং এত করে সে সময় সে কৃষিকাজ থেকে বিমুখ হয়ে অন্য জায়গায় চলে যায় এবং শহরে যেসব জায়গায় দেখবেন যে অটোরিকশাচালক তারা কিন্তু অধিকাংশ প্রান্তিকপর্যায় থেকে এসেছে এবং আগে তারা কৃষি কাজ করত।

এই প্রক্রিয়ার জন্য এখানে আরও একটি কথা এখন প্রযোজ্য সেটা হলো পারিবারিক কৃষিকাজ। এটা আমাদের ঐতিহ্য। দীর্ঘদিন থেকে আমরা দেখে আসছি পারিবারিক চাষ ব্যবস্থাটা সেখানে পরিবারের সব মানুষই কিন্তু সদস্য। তারা এই চাষের সাথে যুক্ত হয় এবং এভাবে তার জীবিকা নির্বাহ করে তার নিজের এবং তার সংসারের খরচ করে। কিছু উদ্বৃত্ত বিক্রি করে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করে সেটা কিন্তু আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রান্তিক চাষিরা তারা কিন্তু এখন আর টিকতে পারছে না আদিবাসীরা তো নয়ই। আপনি দেখবেন আজ শহরে যত নির্মাণ শ্রমিক দেখবেন সবগুলো কিন্তু কোনো না কোনোভাবে আদিবাসী তাদের ভ্যানে করে নিয়ে এসে শহরে কাজ করানো হয়।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা চাই যে নাগরিক হিসাবে যদি সত্যিই রাষ্ট্রের মালিক হই তবে নাগরিকদের প্রয়োজনেই এসব আইন প্রণয়ন করা উচিত এবং বিশেষ করে ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা কৃষিকাজের সাথে যুক্ত যারা এখনও গ্রামে আছে গ্রামটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে তাদের রক্ষা করতে হবে। তারা কৃষিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, পরিবেশকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে তাদের অনুকূলে তাদের টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে আইনের সংস্কার করা দরকার। তবে সেই আইনটা সংস্কার করলেই হবে না আইনের তদারকির জন্য একট গর্ভনেন্স বডিও থাকতে হবে যেখানে এটা প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বঙ্গবাজারে মার্কেট নির্মাণকাজের উদ্বোধন ২৫ মে

খুলনায় মিথ্যা অভিযোগে হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

শামসুর রহমানের মৃত্যুতে বে গ্রুপের শোক

কোভ্যাক্সিনের টিকায়ও হচ্ছে ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া!

মঞ্চে বিব্রতকর অবস্থায় মাহিরা খান

বগুড়ায় গরমে স্কুলের ২২ শিক্ষার্থী অসুস্থ

আওয়ামী লীগ সব কিছুই গোপন রাখছে : জি এম কাদের

রাতে ঢাকায় ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা

বাজার থেকে এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ

ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের ৩ কোটি ডলারের ‘ড্রোন ভূপাতিত’

১০

দুই পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা, যুবক আটক

১১

বিদায়ী ম্যাচে স্টেডিয়াম ভর্তি সমর্থকদের বিয়ার খাওয়ালেন রয়েস

১২

বাসের সমান ওজন পুতিনের গাড়িতে কী আছে?

১৩

মাটি খুঁড়তেই পাওয়া গেল কোটি টাকার মূর্তি

১৪

মাদক মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন

১৫

ভদকার বোতলে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ট্যাগ!

১৬

উপজেলা নির্বাচন / এমপিপুত্র দিপুর হুমকিতে ‘শঙ্কিত’ প্রার্থীরা

১৭

ইরানে শয়তান পূজারির দল গ্রেপ্তার

১৮

রাজধানীতে পুলিশ বক্সে আগুন দিল অটোরিকশাচালকরা

১৯

বাড়ির উঠানে গ্রেনেড নিয়ে খেলছিল শিশুরা, অতঃপর...

২০
X