দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই ও তার চার সমর্থকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে তার সমর্থক শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকু শিকদার, শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা, ফুলহরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জামিনুর রহমান বিপুলের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করতে বলা হয়েছে। এর আগে এই আসনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দুই মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার রাতে ইসির উপসচিব (আইন) আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই গত ১৬ ডিসেম্বর শৈলকুপার মির্জাপুর ইউনিয়নের চড়িয়ারবিল বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করে ছবি ভাঙচুর করেন এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭(১)(ক) এর বিধান লঙ্ঘনের দায়ে অপরাধ বিবেচনায় অনুচ্ছেদের ৭৩ এর অধীনে সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দায়েরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আব্দুল হাইয়ের সমর্থক ফুলহরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বিপুল গত ১৫ ডিসেম্বর ওই ইউনিয়নের কাজীপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত জনসভায় নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেবেন না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেন। এতে তিনি ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ এর বিধি ৮(খ) এর বিধান লঙ্ঘন করায় অ-আমলযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আব্দুল হাইয়ের সমর্থক শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকু শিকদার ও শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যাসহ অন্যরা ওই ইউনিয়নের কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের কোন পোস্টার মারতে দিচ্ছেন না এবং কোনো প্রচারণার মাইক প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এ ছাড়া, ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণের জন্য ২৫০ প্যাকেট বিরিয়ানি জব্দ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এতে তারা 'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২' এর অনুচ্ছেদ ৭৭(১)(ক) এবং ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮' এর বিধি ১০(চ) এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন। বিধি লঙ্ঘন করায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭(১)(ক) এর বিধান লঙ্ঘনের দায়ে অনুচ্ছেদের ৭৩ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ১০(চ) এর অধীনে সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
এর আগে ইসির নির্দেশনায় গত ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন শৈলকূপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তায়জুল ইসলাম। একটি মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। আব্দুল হাই ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন— শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম ও সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন। অন্য মামলায় শুধু আব্দুল হাইকে আসামি করা হয়।
শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজারে গত ১০ ডিসেম্বর আব্দুল হাইয়ের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহাসড়কে মহড়া দেওয়া ও জনগণের মনে ভীতি সঞ্চার করেন। ১২ ডিসেম্বর শৈলকুপা উপজেলারর সারুটিয়া ইউনিয়নের কাতলাগাড়ী বাজারে ওই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম এবং সারুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন তাদের অনুসারীদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী এজন্টেদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এসব ঘটনায় আব্দুল হাই ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সেসময় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
মন্তব্য করুন