প্রকাশ্যে সপ্তম শ্রেণির বই ছেঁড়ার ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক (চাকরিচ্যুত) আসিফ মাহতাবকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। রোববার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সংগঠনের সভাপতিত্ব করেন শাহরিয়ার কবির। এছাড়া বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিশ্ব শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম ও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ মমতাজ লতিফ।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানিয়ে বলা হয়, তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানীকে এবারের সংসদে সংরক্ষিত আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবি মেনে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন না করার আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা বলেন, পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি আছে তা দ্রুত নিরসন করা দরকার। তবে সেই প্রক্রিয়া মৌলবাদী অপশক্তির দাবি মেনে করা যাবে না। এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা কমিটিতে জীববিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের রাখার জন্যেও প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
শাহরিয়ার কবির বলেন, আসিফ মাহতাব সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে তৃতীয় লিঙ্গের শরিফ-শরীফার রচনা ছিঁড়ে ফেলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এটিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তার এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা হেফাজত এবং তাদের সহযোগী জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে। অথচ আমরা বহুবার মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সরকারকে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। আসিফের বক্তব্য ধর্মের অপব্যবহার। তিনি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন। এই সেমিনারে মোল্লারা বলেছেন, তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি তাদের ইসলামে নেই। তৃতীয় লিঙ্গকে ২০১৪ রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবিধানিক, নাগরিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারেন। তাদের মধ্যে এবার একজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীও হয়েছেন।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতিতে যে কাজটি করে থাকে একইভাবে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কাজ শুরু করেছে। বিএনপি ও জামায়াত বলেছে, নতুন কারিকুলাম বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে চরমোনাইর পীর ও হেফাজতও বলেছে পাঠ্যপুস্তকে শরীফা বিষয়সহ গোটা কারিকুলাম বাদ দিতে হবে। সব মিলিয়ে এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আশা করছি, সরকার পিছু হটার আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিক্ষকতা হচ্ছে একটি আদর্শ পেশা। কিন্তু যে ব্যক্তি ধর্ম ব্যবসায়ী তালেবানদের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মা, আদর্শবিচ্যুত ব্যক্তিকে কোনোভাবেই শিক্ষক বলা যায় না। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ তালেবানি শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে তারা চাকরিচ্যুত করেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে ফেলেছে, যার কারণ তাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিচ্যুত করার পর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে।
অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মন্তব্য করুন