আবু সালেহ মুসা
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জেল খেটে, চাকরি হারিয়ে অবশেষে সফল প্রেমিক জুটি

আব্দুল আজীম ও মাইমুনা জান্নাত রাইসা। ছবি : কালবেলা
আব্দুল আজীম ও মাইমুনা জান্নাত রাইসা। ছবি : কালবেলা

ভালোবাসায় প্রথম প্রয়োজন আস্থা ও বিশ্বাস। যাদের সম্পর্কে এই দুটো সম্বল ছিল তাদের ভালোবাসাতে এসেছে পূর্ণতা। আর যাদের ছিল না তাদের প্রেম হারিয়ে গেছে অতলে। ঠিক তেমনই শূন্যতার প্রেম পূর্ণতায় সমাপ্তি হয়েছে এমনই এক জুগল আব্দুল আজীম ও মাইমুনা জান্নাত রাইসার গল্প তুলে ধরেছেন আবু সালেহ মুসা।

প্রথমে ভালো লাগা-

শুরুটা ২০১৮ সালে, কোনো এক প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করতে ছিলাম। সেই প্রোগ্রামে ছিল সে। কে উপস্থাপনা করছিল দূর থেকে তা দেখার সুযোগ হয়নি। শুধু কণ্ঠ শুনেই প্রেমে পরেছিল। কার কণ্ঠের প্রেমে সে পরেছে, সে বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, মানুষটা সাদা নাকি কালো কিছুই জানা নেই তার।

আরও মজার বিষয়, এভাবে ভালোবাসা মনের মধ্যে পুষে রেখে কেটে যায় বছর। তখনো জানে না মানুষটা কে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে নানা বিষয়ে বিশেষ করে সাংবাদিকতা করার সুবাদে আমার নামটি শুনতে থাকায় ওর আরও কৌতূহল তৈরি হয়।

ওই সময়ে আমি সাংবাদিকতার পাশাপাশি নানা প্রোগ্রামে অংশ নিতাম। যার কারণে কোনো একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্দেশে আমিই ওর বাসায় গিয়েছিলাম। তখনই সে আমায় প্রথমবার দেখতে পায়। আর হ্যাঁ, সে আমায় পছন্দ করে এটা আমিও জানতাম না। তার সাথে কখনো আমার দেখা বা কথাও হয়নি। ওই দিন প্রথম দেখায় ওর কথা বলা, তাকানোর মধ্যে কিছুটা ভালোবাসার প্রকাশ পায় আমার কাছে। তবে তখন আমি অন্য একটা রিলেশনে আবদ্ধ।

বলে রাখি, আমার তখন অন্য আরেকজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। ওর বিষয়টি জানার পর একদিন কৌশলে আমার বর্তমান প্রেমিকাকে নিয়ে ওর বাসায় যাই। যাতে আমার প্রতি ওর আসক্তি কমে যায়। যেই বলা সেই কাজ। ওই দিন আমার সাথে অন্য আরেকটি মেয়ে দেখে ও ব্যথিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ভালোবাসাটা রেখে দিয়েছিল। যার কারণে গোপনে খোঁজখবর রাখত আমার সম্পর্কে।

এরপর প্রথম সম্পর্কের অবনতি-

২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি আমার প্রথম ভালোবাসার বিচ্ছেদ ঘটে। এদিকে এটা শোনা মাত্রই সময় নষ্ট করেনি সে। আমার এখনো মনে আছে, ১০ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানের ভেতর কৌশলে প্রোপোজ করে ফেলে আমাকে। তবে প্রোপোজের ধরনটা ছিল ভিন্ন। এসেই জানতে চাইল, আপনার নাকি ব্রেকাপ হয়েছে? এদিক ঐদিক তাকিয়ে আস্তে করে বললাম হ্যাঁ। কিছুটা বিব্রত আমি।

তখন ও বলে উঠে আমি কি আপনার সাবেক প্রেমিকার থেকে খুব বেশি ছোট? আমি বললাম, কেন বলুন তো? সে বলল, আপনি আমাকে প্রোপোজ করেন, সাত দিন পর আমি রাজি হয়ে যাব। মজার সুরে জিজ্ঞেস করলাম, তা সাত দিন পর কেন? বলল, মেয়ে মানুষ কি প্রোপোজ করে? করে ছেলেরা, তাই আপনি আমাকে প্রোপোজ করবেন। আর প্রোপোজ করার সাথে সাথে মেয়েরা তা গ্রহণ করে না, একটু সময় নেয়। তাই সাত দিন পরে রাজি হব।

এরপর ওর চেষ্টার ওপর নির্ভর করে মাঝে মাঝে কথা হতো আমাদের। এ দিলে আমারও আগের সম্পর্কটার পুরোপুরি সমাপ্তি ঘটে। ফলে ওর সাথে প্রতিনিয়ত এসএমএসএ কথা বলা শুরু হয় আমার। এরপর ১৩ এপ্রিল আমাদের সম্পর্কটা প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়।

নানা বাধা :

আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ওর বাবা-মায়ের কোনো সমস্যা ছিল না। তারা ভালো-মন্দ কিছুই বলতেন না। তবে ওর কিছু নিকট আত্মীয় বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা নানাভাবে আমাদের সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করে।

একদিন আমরা দুজন কুয়াকাটায় ঘুরতে যাই। সেই সুযোগে ওর চাচা ও মামারা একটি অপহরণ মামলা দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করায়। আমার গ্রেপ্তারের ঘটনায় ও প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। টানা সাত দিন কোনো খাবার মুখে নেয়নি। স্যালাইন লাগিয়ে কোনো রকম বাঁচিয়ে রাখে ওর পরিবার।

এদিকে মামলার পর কতিপয় মানুষ আমাকে চাকরিচ্যুত করতে চক্রান্ত শুরু করে। চালায় নানা মিথ্যাচার। বিভিন্ন ধরনের চাপ আসতে থাকে আমার পরিবারের ওপরেও। সবকিছুর মধ্য দিয়ে শুধু ওর একক প্রচেষ্টায় তারা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন দিতে বাধ্য হয়েছিল।

জেলে কাটাতে হয়েছে প্রায় ২ মাস ১৬ দিন। সেই সময়টাতে জেলের মধ্যেও অনেক বাধা আসে। দীর্ঘ সাংবাদিকতায় বিভিন্ন আসামির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছি। এদের অনেকেই জেলবন্দি। আমি জেলে আসতে দেখা হয় তাদের সাথে। পরে তাদের চক্রান্তের কারণে আমাকে রাখা হয় ফাঁসির আসামিদের সেলে।

পরবর্তীতে আমাকে মুক্ত করতে আমার পরিবারের সাথে ওর পরিবারও ছুটতে থাকে দিগ্বিদিক। আমাকে মুক্ত করতে গিয়ে চাকরি হারায় আমার ভাই, বন্ধ হয়ে যায় তার নিজের গড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিও। কিছুদিন পরে জানতে পারি আমার চাকরটিও আর নেই।

সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে। চেনা মানুষগুলো ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে। নিজের পকেটও শূন্য হতে শুরু করে। জীবিকার তাগিদে চাকরি খুঁজতে ঢাকায় আসি। কিন্তু মামলা আর নানা অপবাদের বোঝা মাথায় থাকায় কোথাও মিলছে না চাকরি। শূন্য পকেটে মানবেতর জীবন কাটতে থাকে আমাদের।

এরপর দিনরাত এক করে চেষ্টার পর স্বপ্ন যেন ধরা দিতে শুরু করে। আবারও ফিরি আপন ঠিকানায়। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে মিলে যায় চাকরি। প্রথমেই ওকে ফোন দিয়ে সুরে সুরে বলেছিলাম- চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো! এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না।

শূন্যতার গল্পটা এবার পূর্ণতায় সমাপ্তি-

এত ঝড়ঝাপটার মধ্যেও ওর কোনো পরিবর্তন আসেনি। যেন ভালোবাসাটা আরও বেড়েছে। চাকরি হবার পর ঘুরতে থাকে জীবনের মোড়। পরিবর্তন আসে অবস্থার। শূন্য পকেটে আসতে শুরু করে টাকা। এখন আর বাধা কোথায়। সবই যেহেতু ঠিকঠাক তাবে পূর্ণতা আসুক সম্পর্কে। বিয়ে করি আমরা। এখন প্রতিটি শীতল নিশ্বাসে আমরা ভালোবাসার স্বপ্ন বুনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীসহ শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক

তরুণীদের দুবাই নিয়ে করানো হতো অনৈতিক কাজ

কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া ও পদ্ধতি

মুক্তিযোদ্ধা শফিউল্লাহ মিয়ার ইন্তেকাল

আবারও চালু হচ্ছে ‘কক্সবাজার স্পেশাল’ ট্রেন

দুর্ভোগ কমাতে ফরিদপুরে ভারতীয় ভিসাকেন্দ্র স্থাপনের দাবি

প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় রাস্তা আটকে দিল আ.লীগ নেতা

ইসরায়েলকে সামরিকভাবে জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি মিশরের

সড়ক নয়, বাড়ির উঠান

জামায়াতের গোপন বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার ৭

১০

মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা!

১১

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগেুলোকে এগিয়ে আসতে হবে : চরমোনাই পীর

১২

অশ্রুসিক্ত চোখে পালমেইরাসকে বিদায় জানালো এনড্রিক

১৩

রোহিঙ্গাদের নিয়ে আশঙ্কার কথা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

১৪

রাজনৈতিক অপপ্রচার / বাংলাদেশ থেকে ১৪৮ অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক

১৫

বেতন-বোনাসের দাবিতে জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের মানববন্ধন

১৬

পাহাড়ি নারীদের পাচার করা হয় চীনে

১৭

চীনে ইয়ুথ স্কলারস ডেলিগেশনে যাচ্ছেন ডুজা সভাপতি-সম্পাদক

১৮

অর্থনৈতিক চাপ আছে, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

১৯

ফিফার বিরুদ্ধে ফুটবলারদের ধর্মঘটের হুমকি 

২০
X