সরকারের রাজস্ব আয়ের বৃদ্ধিকে টেকসই করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতে নীতিগত ধারাবাহিকতা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: উচ্চ-সম্ভাবনাময় খাতের জন্য অগ্রাধিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ অভিমত জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান সমস্যার প্রেক্ষিতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য আগামী বাজেটে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ। তিনি বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে কৃষি, তামাক, তৈরি পোশাক, নিত্যপণ্যের বাজার ও ডিজিটাল অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য বাস্তবসম্মত নীতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
অর্থনীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আর্থিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে সমৃদ্ধ করার জন্য জনকল্যাণের পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। যেমন, মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ১২-১৩ শতাংশ যোগান দেয় তামাক খাত। এটি বিশ্বে সর্বোচ্চ কর প্রদানের অন্যতম রেকর্ড। দেশে তামাকের কর হার ডব্লিউএইচও’র প্রস্তাবিত স্তরের উপরে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে তৈরি সিগারেটের দাম বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম। জনগণকে ধূমপান থেকে বিরত রাখতে এবং টেকসই রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সকল স্তরের সিগারেটের দাম বাড়াতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সাবেক বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু বলেন, ‘পরোক্ষ করের ওপর যত নির্ভরতা কমানো যায় তত ভালো। কর ব্যবস্থায় ডিজিটাইলাজাইশন করতে হবে। এসব বিষয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা কো হলে সবাই কর দিতে আগ্রহী হবে।’
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য লুৎফুল হাসান বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের উদ্দেশ্য হবে রপ্তানি বাড়ানো, আমদানি কমানো। সেজন্য এ খাতে যতটা সম্ভব ভর্তুকি দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে তামাক রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।’
এসিআই এগ্রিবিজনেস ও মেশিনারিজ বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, কৃষিখাতে বর্তমানে তিনটি বিষয়ের ওপর সরকারকে নজর দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, ফুড ভ্যালু চেইন ও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে হবে। এসব বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে সমন্বয় থাকা উচিত।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, ভ্যাট আইনে অসংগতি দূর করতে হবে। যে উদ্দেশে আইন হয়েছে তা কাজে না এলে লাভ নেই। সাধারণ করদাতার কাছে তা জটিল হয়ে গেছে। অসংগতি দূর করলে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি পণ্য হিসেবে তামাককে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার যেন ধান উৎপাদনে ঝুঁকি না আসে।
ডিজিকন টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরিফ বলেন, ডিজিটাল খাতে কর আরোপ করা হলে বাজার মন্থর হবে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল খাত পিছিয়ে পড়বে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়া না হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ নেবে। এতে করে স্থানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস, বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, নেসলে বাংলাদেশের ডিরেক্টর দেবব্রত রায় চৌধুরী, স্নেহাশীষ-মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, পিকার্ডের ডিএমডি অমৃতা ইসলাম, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াকার চৌধুরী, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন