ফাঁসির আদেশের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম নামের এক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মে) ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
তবে কয়েদির মৃত্যুর বিষয়ে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। আবুল কাশেমের ছেলে আশরাফুল আলম মুন্না (বাবলু) কালবেলাকে বলেন, মঙ্গলবার ভোরের দিকে বাবা আবুল কাশেম কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। এখানেই ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাবা।
ফাঁসির আদেশ কাঁধে নিয়ে মারা যাওয়া আবুল কাশেমের বাড়ি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুচরা এলাকায়। তিনি এলাকায় ‘জামাই কাশেম’ নামেই অধিক পরিচিত। দুই দশক আগে বাড়িতে ঢুকে তিন ভাইবোনকে হত্যার মামলায় গত ১৮ এপ্রিল কাশেমের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার।
এ সময় এ মামলার অপর আসামি ইউসুফকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি এলাকায় ‘বাইট্টা ইউসুফ’ নামে পরিচিত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি জামাই কাশেম ও বাইট্টা ইউসুফকে দুই লাখ টাকা করে জরিমানাও করেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন কাশেম ও ইউসুফ। এ সময় কাশেমকে বিমর্ষ দেখা যায়। মৃত্যুদণ্ডের সাজা মাথায় নিয়েই মঙ্গলবার ভোরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জামাই কাশেম খ্যাত আবুল কাশেম।
এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি কাশেমের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া মেলেনি জেলার এমরান হোসেন মিঞারও।
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার ৩৬ শতক সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম এবং ইউসুফ ওরফে বাইট্টা ইউসুফের সঙ্গে সাইফুল ইসলাম এবং তার ভাইবোনদের বিরোধ চলে আসছিল।
২০০৪ সালের ২৯ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাইফুলের বাড়িতে দেয়াল টপকিয়ে ঢুকে পড়েন শিবিরের তৎকালীন দুর্ধর্ষ ক্যাডার গিটু নাছির, ফয়েজ মুন্না, আজরাইল দেলোয়ার, আবুল কাশেম এবং বাইট্টা ইউসুফ। তাদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন সাইফুল আলম, বড় ভাই মো. আলমগীর ও বোন মনোয়ারা বেগম।
এ ঘটনায় সাইফুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ইউসুফ, কাশেম, গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এজাহারে আজরাইল দেলোয়ারের নাম ছিল না।
২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এজাহারভুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন বায়েজিদ বোস্তামী খানার তৎকালীন ওসি আমিনুল ইসলাম।
এর মধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আসামি গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্না। ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তৎকালীন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি বিচার নিষ্পত্তির জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠালে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেন আদালত।
২০১৭ সালের ৫ জুলাই গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয় এবং ইউসুফ ও কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আসামি কাশেম নিজেকে জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারে ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এতে সুপারিশ করেন মরহুম আওয়ামী লীগের নেতা ইনামুল হক দানু। ওই বছর রাষ্ট্রপক্ষের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলা বাতিল করতে বলা হয়। ২০১৩ সালে মামলা বাতিলে আদালতে দরখাস্ত দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন