মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একটি মানবিক, বিজ্ঞানমনস্ক, কল্যাণমুখী বিশ্বমানস গঠনে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘জাতীয় বাজেট সংস্কৃতিখাতে এক শতাংশ বরাদ্দের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক গোলটেবিলে এ দাবি জানায়।
গোলটেবিলে প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, এম এম আকাশ, ম. হামিদ, মানজারে হাসিন মুরাদ, আসিফ মুনীর তন্ময়, ড. সেলিম, মিজানুর রহমান, আহকামউল্লাহ, মফিদুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ সেলিম।
অমিত রঞ্জন দে বলেছেন, অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বিগত কয়েক বছর ধরে দাবি করা হচ্ছে সংস্কৃতিখাতে জাতীয় বাজেটের নূন্যতম ১ ভাগ বরাদ্দ দেয়ার। কিন্তু তা ০.০৯ থেকে ০.১৬ শতাংশের উপরে ওঠেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৯৯ কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.০৯১ শতাংশ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এবং কপিরাইট অফিসের মাধ্যমে এই বাজেট খরচ করা হচ্ছে। ২০২৪ এ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পূর্বের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং স্মার্ট হাব গড়ে তোলা হবে।’
মামুনুর রশীদ বলেন, পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে যে হামলা হয়েছিল, বিচার হয়নি। এটা কি আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যর্থতা নাকি সংস্কৃত সচেতন মানুষের ব্যর্থতা, নাকি জনগণের ব্যর্থতা এটা ভাবনার বিষয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, আমাদের মধ্যে যে স্বতন্ত্রতা তৈরি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। মিরপুর থেকে বাংলামটর বিশাল জনপদের মধ্যে কোনো বইয়ের দোকান নেই। উত্তরায় কোনো মঞ্চ নেই। মানুষ পত্রিকা পড়ে না। বই পড়ে না। এতে পাঠাভ্যাস থাকবে না। আমাদের সমাজ ভেঙ্গে গেলেও আমরা সমাজ বির্নিমানের কথা ভাবব। ৬০ দশকের মতো আমরা একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা করতে পারি।
এম এম আকাশ বলেন, স্কুল-কলেজের নতুন কারিকুলামকে সহযোগিতা করার জন্য আইসিটির বিশেষ বাজেট থাকা দরকার। ৫০ ধরনের আদিবাসীর জন্য আলাদা বাজেট দরকার। কারণ তারা আলাদা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য লালন করে। বরাদ্দ কাকে দেওয়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
ম. হামিদ বলেন, জাতীয় বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনোদন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও ধর্মে ৫ হাজার ৫৬৮ কোটি বরাদ্দ হয়। সেখাসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬৯৯ কোটি টাকা অর্থাৎ ০.০৯১৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, সংস্কৃতির জায়গাটাকে প্রসারিত করা, সেটাকে অর্থবহ করাই সংস্কৃতি চর্চার মূল লক্ষ্য। স্কুলে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা নামে একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। এখানে এমন সব বিষয়কে যুক্ত করা হয়েছে যা অমানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলবে। যেমন মুসলমান ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে, অমুসলমান কাফের। অন্য ধর্মের ছেলেটি ভাবছে সে কাফের। সনাতন ধর্মের শিক্ষা গ্রন্থে থান্ডবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মানে বন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে। এই বিষয়গুলো বাদ দিয়ে কি আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করা যায় না।
মন্তব্য করুন