

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতি হচ্ছে সুন্দরের সাধনা। সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে, জীবনের সৌন্দর্যকে বিকশিত করে। সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের মন সুন্দর হয়, হিংসা বিদ্বেষ নাশ হয়, জীবনকে মহিমান্বিত করে। অপসংস্কৃতি যা আমাদের চেতনাকে দীপ্ত করে না, ঐতিহ্যকে মহিমা দেয় না, আচরণকে শালীনতা দেয় না।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি এসব বলেন।
বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অভি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ।
আলোচনায় অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন, বিশ্ব বরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, তাশিক আহমেদ, জিয়াউল কবির সুমন, এরফানুল হক নাহিদ, রাজু আলীম, কামরুল হাসান দর্পণ, রিমন মাহফুজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দুলাল খান ও পান্থ আফজাল।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলা টিপে হত্যা করে, বিবেকের দরজায় কড়া লাগায়। অপসংস্কৃতি মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় অপসংস্কৃতির চমক মরীচিকার মতো। এর চমক মানুষকে বিবেকবর্জিত পশুতে পরিণত করে।
তিনি বলেন, তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক আছে, উত্তেজনা আছে আর আছে ক্ষণিক আনন্দ। এর একটা মোহ আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে একটি দেশের ভবিষ্যৎ হলো সেই দেশের তরুণ সমাজ। অপসংস্কৃতির হিংস্র ছোবলে এ তরুণ সমাজ যদি বিপথগামী হয়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। এ ধরনের স্ববিরোধী সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে কি আমরা খুব বেশি দূর এগোতে পারব? শেকড়ের সন্ধান একদিন আমাদের করতেই হবে। ফিরে যেতে হবে শেকড়ের টানে। সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ, যা জীবনাচরণে ফুটে ওঠে। এটা নিরন্তর চর্চার বিষয়। মুখে এক আর কাজে অন্য- এভাবে আর যাই হোক বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকে বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি এখন আর মানুষের হাতে নেই। এটা চলে গেছে বেনিয়াদের হাতে। চলচ্চিত্র ও টিভি মিডিয়া তো বেনিয়াদের হাতে পুরোপুরি চলে গেছে। এরা ব্যবসায়ী চিন্তাভাবনা আর স্বার্থসিদ্ধি উদ্ধারে সর্বত্র সংস্কৃতির ওপর লাঠি ঘোরাচ্ছে। তারা যা দেখাতে চায় তাই তো দেখছে সবাই। যদি নাটক ইন্ডাস্ট্রির কথা বলি তাহলে বলব, তাড়াহুড়ো করে একগাদা নাটক নির্মিত হচ্ছে এ সময়ে। অভিনয় না শিখে আসা কিছু শিল্পীকে নাটকে যুক্ত করা হচ্ছে। অশ্লীল ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির নাটক নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাষাকে বিকৃত করে আজগুবি ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। ভালো কনটেন্ট খুবই কম; একই রকম গল্প। দায়সারা কাজ। ফলে ভালো নাটক দেখা থেকে দর্শক বঞ্চিত হচ্ছে। ভিউ দিয়ে জনপ্রিয়তা কাউন্ট করা হচ্ছে। দিনকে দিন সিনিয়র চরিত্রের কাটছাঁট করা হচ্ছে। আর সব কিছু নির্দিষ্ট কিছু বিনিয়োগকারী নিয়ন্ত্রণ করছেন।
তবে আশার কথা, থিয়েটার অঙ্গন কিছুটা হলেও সুস্থ আছে। এখানে এখনো শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা হয়, ভালো ভালো স্ক্রিপ্টে কাজ হয়।
বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আমার ঘরের কাজের লোকটিও আমাদের দেশের নাটক-সিনেমা দেখে না। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে, এসব নাটক-সিনেমা দেখতে তাদের ভালো লাগে না। তারা বলে হিন্দি সিরিয়াল বা ভারতের জি বাংলার সিরিয়াল দেখতে তাদের ভালো লাগে। এই যে বিদেশি কনটেন্ট আমাদের দেশে অবাধে প্রবেশ করছে, কারও যেন কিছুই বলার নেই। ভালো সিনেমা বা নাটক বানাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই, তাহলে কীভাবে আগ্রাসন রোধ করবেন?
মন্তব্য করুন