রাজধানীর মালিবাগে যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোববার (২৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আদনান আসিফ (২০) এবং মো. শাকিল (২০)। রাজধানীর উত্তরা (পূর্ব) এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, গত ২১ জুলাই রাতে শাহজাহানপুর থানার মালিবাগ বাজার রোড বিভাবরী বাড়ির সামনে অলিউল্লাহ রুবেলকে কতিপয় দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার আর্ত-চিৎকারে তার পরিবারের লোকজন ও পথচারীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন : হিরো আলমের ওপর হামলার তদন্তে নামছে ডিবি
তিনি বলেন, এই ঘটনার পরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল রাতে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত মো. আদনান আসিফ এবং মো. শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ননা দিয়ে তিনি বলেন, নিহত অলিউল্লাহ রুবেল শাহজাহানপুর ও মালিবাগ এলাকায় পরিবারের সাথে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি শান্তিবাগ এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা করতেন এবং সম্প্রতি ওই এলাকায় পানির ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিলেন। মূলত স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে শাহজালাল নামক ব্যক্তির সাথে তার শত্রুতার সৃষ্টি হয়। এই শত্রুতার প্রেক্ষিতে ঘটনার একদিন আগে মালিবাগ পিডবিউডি সরকারি কলোনির মাঠে শাহজালালের নির্দেশে হাবিব, সানি, আলিফ, শাকিল, আসিফ এবং আরও কয়েকজন মিলে রুবেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা সাজায়। ঘটনার দিন যে রাস্তা দিয়ে রুবেল বাসায় যাবে সেই গলির মুখে অবস্থান নেয় আসিফ এবং শাকিল। সেখান থেকে আর একটু সামনে একই গ্রুপের অন্যান্য সদস্য হাবিব, সানি, আলিফসহ অন্যান্যরা রুবেলকে মারার জন্য দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহকারে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। শাকিল ও আসিফ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে প্রতিনিয়ত রুবেলের অবস্থানের আপডেট দিতে থাকে। এরপর রুবেল সামনে এগিয়ে গেলে সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান নেয়া হাবিব তার দলবল সহকারে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে রুবেলের ওপর আক্রমণের চেষ্টা চালায়। তখন রুবেল বাঁচার জন্য দৌড়াতে শুরু করে এবং হাবিব ও অন্যান্যরাও তার পেছনে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। কিছুদূর দৌড়ে যাওয়ার পর মালিবাগ বাজার রোড বিভাবরী বাড়ির সামনে গিয়ে হাবিব ও তার দল রুবেলকে ধরে ফেলে এবং তাকে রাস্তায় ফেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এলোপাতাড়িভাবে মাথা, দুই হাত, পা, পিঠসহ সারা শরীরে কোপাতে থাকে। বাঁচার জন্য রুবেল রক্তাক্ত শরীর নিয়েই এগিয়ে গিয়ে মালিবাগ সরলতা ভবনের সামনে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন : ড. ইউনূসকে ১২ কোটি টাকা কর দিতেই হবে
আসামিদেরপ্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, মূল পরিকল্পনাকারী শাহজালালের পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। শাহজালালের সাথে স্থানীয় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রুবেলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এতে শাহজালাল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে দায়িত্ব দেয়। এরই জের ধরে হত্যাকারীরা রুবেলকে হত্যার নীলনকশা সাজায় এবং সে অনুযায়ী নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি সম্পন্ন করে।
মন্তব্য করুন