আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাক্ষাৎকার

সরকারকে বলপূর্বক হটানোর উদ্যোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতা

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। ছবি : কালবেলা
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। ছবি : কালবেলা

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, বিএনপির নির্বাচন বর্জন ও আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

কালবেলা: ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন অন্যদিকে মাঠের অন্যতম বড় বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। নির্বাচনের পরিবেশ এবং আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সর্বান্তকরণে চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে আসলে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর হবে। প্রতিযোগিতা বাড়বে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে নির্বাচন নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা থাকবে না। বিএনপি নির্বাচনে এসে যদি বিজয় অর্জন করে, তাহলে আমরা বিরোধী দলে বসতে প্রস্তুত। আমাদের এমন কোনো মনোভাব নেই যে আমরা চিরকাল রাষ্ট্র পরিচালনা করব। মানুষ যদি আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন, মানুষ যদি আমাদের পছন্দ না করেন তাহলে বিএনপি বা অন্য কোনো শক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তবে নির্বাচনের বাইরে অন্য কোনো পন্থায় বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগ কোনো ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া কোনো রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ কোনো উচ্ছিষ্টভোগী রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগ কৃষকের লাঙলের ফলা থেকে, শরীরের ঘাম থেকে, ছাত্রের কলমের কালি থেকে জন্ম নেওয়া একটি রাজনৈতিক সংগঠন। এই রাজনৈতিক সংগঠনটির শেকড় তৃণমূল পর্যন্ত প্রথিত। এই রাজনৈতিক সংগঠনটি পরিচালিত যে সরকার তাকে আন্দোলন করে ফেলে দেওয়ার মতো সক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপির যারা মাঝ পর্যায়ের নেতা অর্থাৎ যারা জনসম্পৃক্ত নেতা তারা প্রত্যেকেই চান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। আমাদের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় কথা হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানে কথা হয়, টকশোতে কথা হয়, টকশোর বিরতিতে কথা হয়। বিএনপির সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে- বিএনপি এখনো নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত করতে পারেনি। বিএনপি হয়ে গেছে একটি লিমিটেড কোম্পানি। এই কোম্পানির একজনই চেয়ারম্যান এবং এমডি। বাকি সবাই কোম্পানির কর্মচারী। এখানে কোনো এক্সিকিউটিভ নেই, কোনো বোর্ড অব ডাইরেক্টরস নেই। একজনই সবকিছু। এই কোম্পানির মালিক বিগড়ে যাওয়া রাজপুত্র। মালিক যে হুকুম করে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কর্মীরা সেই হুকুম ধারণ করে না। ফলে আন্দোলনে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের অংশগ্রহণ নেই। বাংলাদেশে এখন অনেক দূর এগিয়েছে। একটা সময় ছিল বিএনপি আন্দোলন করতে পারত, ২০১৪ সালে বিএনপি যখন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তখন গ্রামাঞ্চলেও সাইকেল চলতে দেওয়া হয়নি। সেখানে আজ বিএনপির হরতালে দশ চাকার গাড়ি গড় গড়িয়ে চলছে। এই গাড়ি থামাতে গেলে রাজপথে বিএনপির কর্মীদের অংশগ্রহণ লাগবে। সমস্ত রাজপথ পুলিশ দিয়ে আচ্ছাদন করা নেই। সমস্ত রাজপথ র্যাব দিয়ে আচ্ছাদন করা নেই। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে রাজপথে বিএনপির কর্মীদের অংশগ্রহণ নেই।

কালবেলা: আপনি কি বিএনপির রাজনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আন্দোলন করে একটি রাজনৈতিক সরকারকে ফেলে দেওয়ার সক্ষমতা বিএনপির আছে কিনা সেটা বিএনপির আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল। বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা কোনো পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়। বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃত্ব হচ্ছে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন নেতার ছেলে, পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের নেতার ছেলে বা বিভিন্ন ধনী পরিবারের ছেলে। তারা কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করবেন এবং পুলিশ ও অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন সেই উদ্দীপনা বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে নেই।

বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এবার অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। বিএনপির অনেক কর্মী গ্রাম থেকে বা অন্যান্য মফস্বল শহর থেকে এক বুক আশা নিয়ে ঢাকায় এসেছিল। তারা বারবারই ঢাকায় এসেছে। যতবারই বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে ততবারই তাদের কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে যে এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে। ওই বার্তায় উদ্দীপ্ত হয়ে তাদের কর্মীরা ঢাকায় এসে হতাশ হয়। একবার দুইবার সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর তারা হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। এই হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়া কর্মীদেরকে জাগ্রত করার মতো ক্ষমতা বিএনপির নেই।

আন্দোলনে বিএনপি ভালো না করলেও ভোটে বিএনপি ভালো করবে না এমন কোনো কথা নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে গেলে তাদের ক্ষমতায় আসার অনেক সুযোগ ছিল। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচনে ভালো করতে পারতো। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও চেষ্টা করা হয়েছে যাতে বিএনপি নির্বাচনে আসে। নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচনের আয়োজন করবে সেহেতু নির্বাচন কমিশনের হাতে অনেক ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সংবিধান মতে, নির্বাচনী আইনগুলোর মতে এমনকি আমাদের সিআরপিসির মতে নির্বাচনকালীন সময়ের সরকারের মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন পালন করে। ফলে দেশে রাজনৈতিক সরকার থাকল নাকি নির্বাচনকালীন সরকার থাকল, কোন স্বৈরাচারী সরকার থাকল নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকল তার চেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনই সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার। সংবিধান মতে, নির্বাচনী কাজের জন্য নির্বাচন কমিশন যেসব কর্মচারী চাইবেন রাষ্ট্রপতি সেই পরিমাণ কর্মচারী নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করবেন। নির্বাচন কমিশন চাইলে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব পালনরত যেকোনো কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা পক্ষপাতিত্ব, অনৈতিকতা, ঘুষ, দুর্নীতির কারণে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তাদেরকে বদলি করতে পারবেন, তাদেরকে সাসপেন্ড করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের হাতে সব ধরনের এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং বিএনপির উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনের দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।

কালবেলা: বিএনপি বলছে তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সেটা বলার জন্য আপনাকে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ২০১৮ সালে বিএনপি মূলত একই আসনে একাধিক ব্যক্তির কাছে উচ্চমূল্যে নমিনেশন বিক্রি করেছে। একটি রাজনৈতিক দল মনোনয়ন বিক্রিপূর্বক ব্যবসা করবে আবার নির্বাচনে ভালো করবে সেটা তো সম্ভব নয়। এটাতো কোনো ট্রেডিং কোম্পানি বা শেয়ার মার্কেট নয়। রাজনীতি এবং শেয়ার মার্কেট এক বিষয় নয়। বিএনপির বিগড়ে যাওয়া রাজপুত্র মনে করেন, বিএনপির সকল কর্মীরা তার কর্মচারী আর তিনি এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি যা হুকুম করবেন কর্মচারীরা তাই পালন করবে। রাজনৈতিক দল কর্মচারী এবং মালিক দিয়ে চলে না। রাজনৈতিক দলের সকল সদস্যই একে অপরের সহকর্মী। কর্মীরা নেতাকে মানেন কিন্তু নেতাকেও কর্মীদেরকে ধারণ করতে হয়। কর্মীকে স্নেহ করতে হয়, ভালোবাসা দিতে হয়, কর্মীর বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে হয়। কর্মীকে ধারণ করতে হয় এবং কর্মীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হয়। কর্মী আসে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশা থেকে। ফলে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বিভিন্ন ধরনের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে। সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে থাকতে হয়। সেই জায়গায় কী বিএনপি রয়েছে? কর্মচারী দিয়ে কখনো ভোট হয় না আন্দোলনও হয় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনটি পরিপূর্ণভাবে নষ্ট করেছে বিএনপির বিগড়ে যাওয়া রাজ পুত্রের লোভ ও অতি টাকার আকাঙ্ক্ষা। নির্বাচনের আগেই বিএনপি মানসিকভাবে হেরে বসেছিল। যখন জনগণ দেখে একটি দল হেরে বসে আছে এবং অন্য দলটির স্পিড বেড়ে গেছে তখন জনগণ হেরে যাওয়া দলের দিকে যায় না। অনেক মানুষ রয়েছেন যারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তারা বলেন এই দলটি জিতছে, সুতরাং অন্য দলে ভোট দিয়ে ভোটটি নষ্ট করে লাভ নেই।

বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোটের দিন মাঠেই ছিলেন না। তারা ভোটের আগের দিন থেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। বিএনপির হাল ছেড়ে দেওয়ার কারণে সেই নির্বাচনটি তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পেরেছেন। তাদের টার্গেট ছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, এবং সেই জায়গাটিতে তারা আংশিক সফল হয়েছেন। এবারও বিএনপির সকল নেতা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। প্রায় সব নেতা নির্বাচনে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন। একজন মাত্র ব্যক্তি নির্বাচনে যেতে চাচ্ছেন না। তিনি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন। রাজনীতিতে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

কালবেলা: বিএনপিকে নিয়ে যদি নির্বাচন করতে চান, তবে তাদের নেতাদের কারাগারে আটকে রেখেছেন কেন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আওয়ামী লীগ কোনোভাবে কাউকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পক্ষপাতি নয়। তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে। তারা পুলিশ মেরেছেন, পুলিশের গায়ে আগুন দিয়েছেন, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। অনেক সময় ঘটনার একটা দিক দেখা হয়। যেমন হিউম্যান রাইট ওয়াচ কিছু বিবৃতি দিচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে হিউম্যান রাইট ওয়াচ বাংলাদেশে কিছু প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। তারা ডলারের বিনিময়ে তাদেরকে তথ্য সরবরাহ করে। এই প্রতিনিধিরা রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেড। তারা সত্য তথ্যটি সংগ্রহ করছেন না। হেফাজতের আন্দোলনের সময় হাজার হাজার মানুষ গুম ও খুনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে অনুমান নির্ভর এবং মিথ্যা তথ্য দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে বেশকিছু সংস্থা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য প্রকাশ করেছে। এটি বাংলাদেশের গায়ে লাগে। আমি হিউম্যান রাইট ওয়াচকে অনুরোধ করবো আপনারা সত্য তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। না হলে বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের বয়কট করবে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করা এক ধরনের তথ্য সন্ত্রাস। পৃথিবীতে বেশকিছু সংস্থা এবং বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস করছে।

কালবেলা: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিপরীত দিকে বিএনপির কার্যালয় বন্ধ এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে বিষণ্ণতা। এই প্রেক্ষাপটটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো বার্তা বহন করে কি?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: এই পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ বিএনপির নেতাকর্মীরাও নির্বাচনে যাওয়ার জন্য অনেক আগ্রহী। বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন পরে মনে করেছিল এবার তারা ক্ষমতায় যাবে। এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত ছিল। ২৮ অক্টোবর পূর্ববর্তী সময়ে মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের যে উচ্ছ্বাস আমি দেখেছি এবং ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে তাদের যে নীরবতা দেখছি, এটা আসলেই দুর্ভাগ্যজনক। একটি পক্ষ নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর এবং অন্য একটি পক্ষ বিষণ্ণ এটি গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

বিএনপির সব কর্মী নির্বাচন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। কিন্তু বিএনপির মালিক মনে করছেন- তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের এবং কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সুবিধা পাবেন। আমেরিকাসহ অনেক দেশে লবিং বলে এক ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। আমাদের দেশে যেটাকে ঘুষ বলে। বিএনপি এই লবিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সিনেটর বা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তাদের বিবৃতি নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এখন তলাবিহীন কোনো ঝুড়ি নয়। আর বাংলাদেশের নেতা কোনো ভুঁইফোড় নেতা নন। বাংলাদেশের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সন্তান এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা একজন নির্মোহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাকে কেউ ধমক দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করবে এই শক্তি পৃথিবীর কারো নেই। তিনি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেন না। কে কোথায় ধমক দিল, কোথায় বিবৃতি দিল বা উদ্বেগ প্রকাশ করল তাতে বাংলাদেশের জনগণের কিছু যায় আসে না। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছি এবং এগিয়ে যাব। বিএনপির মালিকদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত আপনারা কেন কর্মীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। আপনাদের নেতা বিদেশে আরামের জীবনযাপন করছেন। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের টাকা যায়। সেই টাকায় তাদের নেতা এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা বিদেশে আরামের জীবনযাপন করছেন আর ওখান থেকে সবক দিচ্ছেন।

রাস্তার গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার মতো সক্ষমতা বিএনপির কর্মীদের নেই, সেটি আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু বিএনপির কর্মীদের আগ্রহ নেই। তারা মনে করছেন তাদের মালিক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ কারণে কেউ মাঠে যাচ্ছে না। বিএনপির হরতাল অবরোধের মধ্যে বিএনপির মালিকানাধীন যানবাহনগুলোও রাস্তায় চলছে। সুতরাং বিএনপির মালিকের নির্দেশ নেতাকর্মীরা অমান্য করছেন। এ কারণেই বিএনপির আন্দোলন সফল হচ্ছে না এবং বিএনপি কখনোই এই আন্দোলন সফল করতে পারবে না।

কালবেলা: এখন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে বলে মনে করেন কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আপাত দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। কিন্তু বিএনপি যখনই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে তখই লেভেলে প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে। নির্বাচন কমিশন বারবার বলেছে বিএনপি নির্বাচনে আসলে তারা নির্বাচনের শিডিউল পরিবর্তন বা পরিমার্জন করবেন। আমরা এতটা আশা করিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যদি টাইম ফ্রেম ঠিক রেখে নির্বাচনের তফসিল রিশিডিউল করেন তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

কালবেলা: বিএনপিতে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে....

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: সিদ্ধান্ত যিনি নেবেন তিনি লন্ডনে বসে আছেন। যারা কারাগারে রয়েছেন তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। তারা ফৌজদারি অপরাধে জেলে গেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা অবশ্যই ছাড়া পাবেন, জামিন পাবেন। তাদের জামিন না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। হয়তো প্রক্রিয়াটি চলমান। রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার বিচার তো হবে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। এত কিছুর পর আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে না, সেটা হতে পারে না। বিএনপির যেসব নেতারা কারাগারে রয়েছেন নির্বাচনে আসার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তার ভিডিওটি যদি আপনি ভালোভাবে দেখেন তাহলে দেখবেন তার চোখে মুখে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। বিএনপির মহাসচিবের মধ্যে পুলিশের ভীতি ছিল না। কোনো সরকারি সংস্থার ভীতি তার মধ্যে ছিল না। ভীতিটা ছিল অন্য কোথাও। ভীতিটা ছিল পেছন থেকে কোনো আঘাতের ভীতি। যে স্বপ্ন নিয়ে বিএনপি'র কর্মীরা গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন, মহানগরে এসে নেতাদের ভীতি দেখে তাদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। বিএনপির নেতারা যেভাবে মঞ্চ থেকে পলায়ন করেছেন তাতে কর্মীদের আশার বাতি নিভে গেছে। নেতাকে সাহস করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কিছুদিন আগে একটি ভিডিওতে দেখলাম বিএনপির একজন নেতা যিনি ছাত্র নেতা ছিলেন, পুলিশ আসছে দেখে তিনি কর্মীদের রেখে পালিয়ে গেলেন। নেতা যখন পালিয়ে যায় তখন কর্মী দাঁড়িয়ে থাকে না।

কালবেলা: গত নির্বাচনে আপনারা শরিক দলগুলোকে কিছু আসন ছেড়ে দিয়েছিলেন। এবার আপনাদের পরিকল্পনা কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের এক ধরনের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে আরও কিছু বিষয়ের ওপর। বিএনপি নির্বাচনে আসছে কিনা, নির্বাচনে কি পরিমান প্রার্থী অংশগ্রহণ করে এসব কিছুর ওপর কিছু বিষয় নির্ভর করছে। কারণ সব কিছু নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে আমাদের জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন কাউকে জোটের সমর্থন দিতে হবে সে ক্ষেত্রে আমরা সমর্থন দিতে পারি। কিন্তু এবারে স্ব স্ব প্রার্থী নিয়ে নিজেদের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এতে করে নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হলে ভোটারদের আগ্রহ বাড়বে। ভোটাররা তখন নির্বাচন কেন্দ্রে আসবেন। আমরা অতীতের যে কোনো সময়ের নির্বাচনের চেয়ে এবারের ভোট কাস্টিং বাড়াতে চেষ্টা করছি।

কালবেলা: ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: জোর করে কাউকে নির্বাচন কেন্দ্রে নিয়ে আসার সুযোগ নেই। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করব। আমরা অনুরোধ করব জনগণ যাতে নিজে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আমরা জনগণকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের সংগঠন রয়েছে। আমাদের সংগঠনের নেতারা বিভিন্নভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত। ফলে গ্রামে, ওয়ার্ডে এবং ইউনিয়নে আমাদের যে নেতারা রয়েছেন তারা যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন তাহলে আমার মনে হয় খুব কম মানুষই রয়েছেন যারা এই অনুরোধ উপেক্ষা করবেন।

কালবেলা: নির্বাচনে বিএনপির মতো বৃহৎ বিরোধী দল নির্বাচনের বাইরে থাকে, তাহলে কি ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: এবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৪ সালে বিএনপি ও জামায়াতের যে শক্তি ছিল এবং তাদের নেতা কর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা ছিল, এবার সেটি নেই। বিএনপির পলাতক নেতার নির্দেশনায় গ্রামেগঞ্জে মানুষ সহিংসতা করবে এই দিন আর নেই। ২০১৪ সালে বিএনপি হরতাল দিলে কিছু কিছু এলাকায় সাইকেলও চলতো না। বিএনপির হরতালের মধ্যে এখন শুধু এলাকায় নয়, রাজপথে হাজার হাজার গাড়ি চলছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি পরাজিত হয়েছে। বিএনপি শুধু জেগে উঠতে পারে তাদের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে বিএনপির জেগে ওঠার সম্ভাবনা আছে বলে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি না।

কালবেলা: নির্বাচন পেছানো বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: যারা এমনটা ধারণা করেন সেটি তাদের অলীক স্বপ্ন। বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদের ক ধারা মোতাবেক এদেশে নির্বাচিত কোনো সরকারকে বলপূর্বক হটানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা ২০০৯ সালের সময়কাল নয়। এই দীর্ঘ সময়ে পদ্মা যমুনা ব্রহ্মপুত্র দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৭ এর ক ধারায় বিভিন্ন অংশে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকারকে বলপূর্বক হঠাতে গিয়ে কোনো ব্যক্তি, কোনো সংস্থা বা কোনো বিদেশি যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আসামি হবেন। বাংলাদেশের প্রচলিত পেনাল কোড অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। ফলে কোনো ব্যক্তি তিনি যতই শক্তিশালী হন না কেন, একটি রাজনৈতিক সরকারকে হটানোর উদ্যোগ নেবেন এবং পার পেয়ে যাবেন এই সুযোগ বাংলাদেশে নেই। সংবিধানের ৭ এর খ ধারাতে বলা হয়েছে, ৭ এর ক ধারা একটি মৌলিক দ্বারা এবং এই মৌলিক ধারা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং আজ হোক বা কাল, যদি কেউ বলপূর্বক সরকার পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, সমর্থন করেন অথবা অংশগ্রহণ করেন তারা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আসামি হবেন। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে যে সরকারই দায়িত্বে আসুক সেখানে একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং আরও কয়েকজন উপদেষ্টা লাগবে। সুতরাং যারাই এ সকল দায়িত্বে আসবেন তারা সংবিধানের বিরুদ্ধে যাবেন এবং মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি নেবেন। বিএনপির জন্য এই ঝুঁকিটা কে নেবে? আগের সেই দিন এখন আর নেই। এমনকি যদি কোনো বিদেশি ব্যক্তিও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তাকেও বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী আসামি হতে হবে।

কালবেলা: সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অনেকে আশঙ্কা করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আমেরিকা অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: গ্লোবাল ভিলেজে অবশ্যই আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয় রয়েছে। আমেরিকা কী দক্ষিণ এশিয়ায় বিন লাদেনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়? আমেরিকা কি দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়? সেটা অবশ্যই তারা চায় না। দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের স্বার্থ হলো স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা। আমেরিকার স্বার্থ হলো গণতন্ত্র, আমেরিকার স্বার্থ মানবাধিকার এবং সর্বোপরি আমেরিকার স্বার্থ ব্যবসা। বাংলাদেশ আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দা-কুমড়ার। বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার চীন ব্লকের একটি রাষ্ট্র। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক চমৎকার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়নসহ সবকিছুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ একটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবং আমেরিকার লক্ষ্য অভিন্ন। উভয়েরই লক্ষ্য জঙ্গিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমেরিকার নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই। লবিং এবং ভুলভালভাবে তথ্য উপস্থাপনের কারণে হয়তো আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের বোঝাপড়ায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সেসব সমস্যা দীর্ঘদিন থাকবে না। বৃহত্তর স্বার্থে আমেরিকার সরকার অথবা রাষ্ট্র অবশ্যই আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে বলে আমরা মনে করি না। কৌশলগত এবং নীতিগত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমেরিকার যে একাত্মবোধ রয়েছে তা অন্য কারো সঙ্গে নেই। সুতরাং দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকা কোনোভাবেই একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র চাইবে বলে আমি মনে করি না।

আমাদের পোশাক খাত বা অন্যান্য রপ্তানি খাতের উপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে যে কথা বলা হচ্ছে সেটার সঙ্গে আমি একমত নই। আমরা সকলেই জানি চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। এরপরেও আমেরিকার ট্রেজারিতে চীনের বিনিয়োগ অনেক বড়। আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন। সম্পর্ক খারাপ বলে আমেরিকা চীন থেকে আমদানি বন্ধ করে অন্য কোথাও যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা একটি সিস্টেম ভেঙে ফেলা হবে বলে আমি মনে করি না। এছাড়া আমেরিকা একটি মানবিক রাষ্ট্র। এই মানবিক রাষ্ট্র কোনোভাবেই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষতির মুখে পড়ে। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের অন্যান্য কৌশলগত সম্পর্ক অনেক ভালো। এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করব।

কালবেলা: আগামী নির্বাচন ঘিরে একটি ভিন্ন কৌশলের কথা বলছিলেন আপনি। সেই কৌশলটি কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: দলের সকল কৌশল গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করে দিলে আমরা সেটা তো আর প্রয়োগ করতে পারব না। ফলে সেই কৌশলটি আমি আপাতত বলতে চাই না। আমরা প্রতিনিয়ত নির্বাচনের মাঠ পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ, আমাদের যিনি নেতা রয়েছেন তিনি একই সঙ্গে নেতা একই সঙ্গে কৃষকও। তিনি ছাত্রের সমস্যা ও বোঝেন, তিনি শ্রমিকের সমস্যাও বোঝেন, তিনি গৃহিণীর সমস্যাও বোঝেন। অর্থাৎ সুচ থেকে সাবমেরিন সবকিছুই তার নখদর্পণ। আমাদের নেত্রীর মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহের চমৎকার একটি সিস্টেম রয়েছে। সুতরাং মাঠের মানুষের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের রণকৌশল নির্ধারণ করে থাকি। আওয়ামী লীগ একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ভোট কেন্দ্রে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ২০১৪ সালের মতো ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া, ভোটকেন্দ্রে বোমাবাজি করার মতো সুযোগ বিএনপি-জামায়াত পাবে না। ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারের নিরাপত্তা এবং ভোটারকে অবাধে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা প্রদান করা— এই তিনটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনটি সম্পন্ন করবে।

কালবেলা: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এবার যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত না হয়। আপনারা আসলে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা কাদের সঙ্গে করতে চান?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: অন্যান্য অনেক দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। অনেক দলের ভোটের পার্সেন্টেজ কম সত্যি, তবে ভোটের চরিত্র বদলাতে সময় লাগে না। ঢাকা শহরে ১৯৯১ সালে আটটি আসনের মধ্যে সবকটিতেই আমরা হেরেছিলাম। তিন বছর পর ঢাকা সিটির মেয়র নির্বাচনে আমরা লক্ষাধিক ভোটে জিতেছিলাম। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আমরা ঢাকা শহরের একটি আসন বাদ দিয়ে বাকি ৭টিতে জিতেছিলাম। আবার ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সবকটি আসন হারিয়েছিলাম। ফলে যখন ভোটের মাঠ গরম হয়ে ওঠে তখন নাম না জানা অনেক প্রার্থীও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।

যেহেতু নির্বাচনটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে সেহেতু অনেক বিএনপির ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন। তারা ভোট দিতে এসে আর নৌকায় ভোট দেবেন না। সুতরাং ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেই আমরা আশা করছি। আমাদের দলের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে একটি ছাড় দেওয়া হয়েছে যে দলের কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চান তবে তার ওপর সাংগঠনিকভাবে কোনো কঠোরতা প্রদর্শন করা হবে না। তবে আমাদের একটি অনুরোধ থাকবে, যারা দলের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন তারা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন না করেন।

কালবেলা: উপনির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। অনেকেই এটাকে নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থা হিসেবে দেখছেন। আপনার মত কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: মহানগর এবং নগরগুলোতে ভোটারের পার্সেন্টেজ বাড়বে না। কারণ তারা ভালো রয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে খুব বেশি ভোট কাস্ট হয় না। যত দিন যাবে নগরগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগের হার কমে আসবে। যার গাড়ি রয়েছে তিনি টকশোতে কথা বলবেন কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে যাবেন না। ফলে নগরে ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে খুব বেশি ইতিবাচক কিছু হবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে মানুষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জনগণ ভোট দিতে এগিয়ে আসবেন।

কালবেলা: গত ৫০ বছরে দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে কোনটি সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: অভিযোগ সব সময়ই থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হোক বা দলীয় সরকারের অধীনে, প্রত্যেকটি নির্বাচনের পরেই পরাজিত দল নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনেছে। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনটিকে যারা অবাধ ও নিরপেক্ষ বলবেন, যারা এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলবেন, তাদের চেয়ে পাপী পৃথিবীতে আর কেউ নেই। কারণ ২০০১ সালে নির্বাচন কিভাবে হয়েছে সেটা সকলেই জানে। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে ছিল। ভোটের আগের দিন রাত থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপরে যে অত্যাচার করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। ফলে সেই নির্বাচনটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিস্টেমটিকে দলীয়করণের উদ্যোগ বিএনপি নিয়েছে। তারা অনৈতিকভাবে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে দিয়ে তাদের নির্ধারিত ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য বিএনপি যে অনৈতিক কাজটি করেছে সেটাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না, এটি একটি মুখরোচক কথা।

কালবেলা: অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রশাসনকে যেভাবে সাজিয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ চাইলেও দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে আসলে তারা কী নতুন করে বিসিএস অফিসার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে দিয়ে নির্বাচন করাবেন? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন মূল বিষয়, ব্যক্তি নয়। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। বিএনপি চেষ্টা করেও তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করতে পারেনি। আমাদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে যে আমরা ক্ষমতায় থেকে এ ধরনের রাজনীতিমুক্ত ব্যক্তিদের কেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দিলাম। আমরা কেন এত উদার হলাম! এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কর্মীরাই আমাদেরকে জানিয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত আইন নির্বাচন কমিশনই প্রয়োগ করবে। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিয়েছে। নির্বাচনকালীন সকল আইন এবং সকল বিধি প্রয়োগ করার পরিপূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা। নির্বাচনকালে প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করবেন তাদেরকে পরিচালনা ও জবাবদিহির ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত রয়েছে।

কালবেলা: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সরকারদলীয় ব্যক্তিরা কি বাড়তি সুবিধা পাবেন না?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: প্রটোকল মেকানিজম কোথাও নেই। নির্বাচনের একটি আচরণবিধি রয়েছে যেটা সকলেই মেনে চলবেন। আমি জাতীয় সংসদের হুইপ। আগামী পার্লামেন্ট শপথ নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি এই দায়িত্বে থাকব। ফলে আমি হুইপ থাকব কিন্তু জাতীয় পতাকা উড়িয়ে আমার প্রোটোকল ব্যবহার করে আমি নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবো না। আমাকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে আর দশজন সাধারণ প্রার্থীর মতো। বরং আমাকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয় যাতে আমার কোনো ভুল হয়ে না যায়। যেহেতু আমরা সরকারি ক্ষমতায় রয়েছি সেহেতু আমাদের আরও বেশি চাপে থাকতে হয়। আমরা কোনো ভুল করে ফেললে সেটা মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। বিরোধী দলের ভুলটাকে কখনো এভাবে দেখা হয় না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়েই আমাদেরকে ভোট করতে হবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমাদের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।

কালবেলা: আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আপনারা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। আপনাদের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে কী থাকছে?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আমাদের একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রয়েছে। সেটা হলো ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। ২০৩৭ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে ২০তম অর্থনীতির রাষ্ট্রের পরিণত করতে চাই। এই ধারাবাহিক উত্তরণের জায়গাগুলো আমাদের সামনে রয়েছে। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে এবং আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে। আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে মানুষের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানুষ কথা বলতে পারছে না বলে অনেকে দাবি করেন। কোথায় কোন মানুষটি কথা বলতে পারছে না? টেলিভিশন খুললে যে মাত্রায় সরকারের ও রাষ্ট্রের সিস্টেমের সমালোচনা হয় এই মাত্রায় সমালোচনা পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্রে হয় না। এরপরেও কী বলবো মানুষ কথা বলতে পারছে না? বাসে, ট্রেনে, আড্ডায় প্রতি জায়গায় মানুষ কথা বলছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ বিক্ষোভ করছে। সুতরাং মানুষ কথা বলতে পারছে না এটি এক ধরনের মিথ্যাচার।

এই সরকারের আমলে বাচ্চারা রাস্তায় আন্দোলন করেছে। এই সরকারের আমলে কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। এই সরকারের আমলে শিক্ষকদের আন্দোলনসহ আরও অনেক আন্দোলন হয়েছে। প্রত্যেকটা আন্দোলন তারা অবাধে করেছেন। সরকার চেষ্টা করেছে আন্দোলনের সব ইস্যু সমন্বয় করার। আন্দোলন করতে কখনো কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ করতে কী বাধা দেওয়া হয়েছে? মহাসমাবেশে এসে পুলিশ মারতে কী কেউ তাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছিল? আওয়ামী লীগ কী তাদের শিখিয়ে দিয়েছিল গাড়িতে পেট্রলবোমা মারতে? আপনি ভুল করবেন, আপনি অপরাধ করবেন আবার আপনি বলবেন আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করুক। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কখনোই বাধা দেওয়া হয়নি।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এপ্রিলে সীমান্তে ১০১ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ বিজিবির

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে সর্বদলীয় কনভেনশনের আহ্বান এবি পার্টির

আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে : সপু

সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘুর ওপর নিরাপত্তা নির্ভর করে না : তারেক রহমান

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হবে না : আমিনুল হক

কেশবপুরে পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কর্মীসভা

আ.লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে পানি ছেটানো নিয়ে যা জানাল ডিএনসিসি

স্কুল পড়ুয়া ৩৭ শিক্ষার্থী পেল বাইসাইকেল

স্বাস্থ্য পরামর্শ / হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে

বাবাকে হত্যায় মেয়ে শিফার দোষ স্বীকার

১০

সুন্দরবন দিয়ে ৬২ জনকে পুশইন বিএসএফের

১১

বগি লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ

১২

নরসিংদীতে সাংবাদিকের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা, প্রাণনাশের হুমকি

১৩

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন নিয়ে এনসিপির বিশেষ বার্তা

১৪

পিবিপ্রবিতে গুচ্ছভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

১৫

ডিআইইউসাসের দিনব্যাপী সাংবাদিকতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

১৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ

১৭

শিক্ষার্থীদের জন্য পানির ফিল্টার দিলেন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

১৮

ঢাকা ছাড়াও আ.লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন হয়েছে যেসব জায়াগায়

১৯

পাক-ভারত উত্তেজনা : অতীতে কারা পেয়েছে সুবিধা, এবার সামনে কে?

২০
X