রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
এস এম আব্রাহাম লিংকন
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এস এম আব্রাহাম লিংকনের সাক্ষাৎকার

মুক্ত চিন্তার, অসাম্প্রদায়িক এবং সাম্যের দেশ গড়ে উঠুক

এস এম আব্রাহাম লিংকন। ছবি: সংগৃহীত
এস এম আব্রাহাম লিংকন। ছবি: সংগৃহীত

একজন আইনজীবী, সমাজসেবক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করে। ২০২৪ সালে সম্মানজনক স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন গুণী এ মানুষ। স্বাধীনতা পদকে মনোনীত হওয়ার পর কালবেলাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানিয়েছেন—

কালবেলা: আপনি স্বাধীনতা পদক ২০২৪-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। আমাদেরকে আপনার অনুভূতি জানাবেন।

এস এম আব্রাহাম লিংকন: যে কোনো সম্মাননাই এক ধরনের ভালোলাগার বিষয়। কিন্তু একই সঙ্গে সেটা দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। যারা কাছ থেকে দেখেছেন তারা জানেন আমি এই জনপদের মানুষকে নিয়েই কাজ করি এবং আমি মনে করি, রাষ্ট্র আমাকে যে সম্মাননায় মনোনীত করেছে তার মালিকও এই দেশের জনগণ। আমি নিজে কিছু করিনি আমি শুধু পূর্বপুরুষদের ইতিহাসটাকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। এই ইতিহাসের যে অর্জন তার মালিকানা আমাদের পূর্বপুরুষদের, মালিকানা এই জনপদের মানুষের। তাই এই সম্মাননা আমি তাদেরই উৎসর্গ করি।

তাদের সম্মানটা আমার হাতে এসেছে। আর এই সম্মানটা শুধু আমার নয় বরং তা এই জনপদের। আমাদের এই পিছিয়ে পড়া জনপদকে যারা খুঁজে বের করেছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

কালবেলা: স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির পর আপনি মানুষকে কি বার্তা দিতে চান?

এস এম আব্রাহাম লিংকন: আমি মনে করি, মানুষের জীবনটা শুধু তার নিজের বা তার পরিবারের জন্য নয়। বরং এই জীবনটা সকল মানুষের জন্য। আমরা সবাই মিলে আমাদের এই সমাজ। আমাদের শিকড়ে ফিরতে হবে। আমরা যে যেখানে রয়েছি সেখান থেকেই যদি সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করি তাহলে এই বাংলাদেশটা আরও সুন্দর হবে। আমি তরুণ প্রজন্মকে তাদের শিকড় সন্ধানী হওয়ার জন্য অনুরোধ করব। তাদের বলব পড়ালেখা এবং শিকড় সন্ধানের কোনো বিকল্প নেই।

কালবেলা: আপনি আপনার নিজের বাড়িকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে তৈরি করেছেন। আপনি এর জন্য এতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

এস এম আব্রাহাম লিংকন: আমি যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা শুরু করি তখন এটা কোনো জাদুঘর ছিল না। আমি কার থেকে সাহায্য পাব বা কে সাহায্য করবে না সেটাও চিন্তা করিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা করা দরকার তাই আমি উদ্যোগী হয়েছিলাম। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধটা হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতি করছি, অথবা আমাদের অবহেলায় মুক্তিযুদ্ধ হারিয়ে যাচ্ছে।

সেই জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করার এই কাজটি কষ্টকর হলেও সেটা করা দরকার। আমি এক্ষেত্রে আমার পরিবারের সহযোগিতা অবশ্যই পেয়েছি। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া এটা আমি করতে পারতাম না। সুতরাং আমার পরিবারের, আমার জেলার নাগরিকদের, এই উত্তরবঙ্গের মানুষের এবং সকলের সমর্থনের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।

কালবেলা: আপনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে একা উদ্যোগী হয়ে অনেক কিছু করেছেন। সরকারের প্রতি আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

এস এম আব্রাহাম লিংকন: মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার সব সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল না। এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সরকারি ক্ষমতায় রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এই প্রজন্ম যদি সমাজ, মাটি, তার দেশ ও জনপদের প্রতি তাদের দায় অনুধাবন করতে না পারে তাহলে সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। এই তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হবেন বলে আমি আশা করি। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে প্রতিটা জেলায় জেলায় মুক্তিযুদ্ধের পাঠাগার, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠান ও জাদুঘর গড়ে তুলে তা প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসা জরুরি।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এখনো অনেক কিছু হারিয়ে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের সেই তথ্যগুলো বের করে নিয়ে আসা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। স্বাধীনতাবিরোধীরা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধকে নষ্ট করে দিয়েছে।

কালবেলা: তারামন বিবিকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে আপনার প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করেছি।..

এস এম আব্রাহাম লিংকন: তারামন বিবির স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুর সরকারই দিয়েছিল। আমাদের তাঁর স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টার প্রয়োজন হয়নি। প্রান্তিকে থাকায় তিনি অনাবিষ্কৃত ছিলেন। অধ্যাপক বিমল কান্তি দে তাঁকে তালিকা ধরে খুঁজে বের করেছেন। পরিমল মজুমদার ভোরের কাগজে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতীয়ভাবে তুলে ধরেন। পরবর্তীকালে তাকে পুনর্বাসন এবং তার নামে কুড়িগ্রামে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করা, কুড়িগ্রাম শহরে তার জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ করা এই কাজগুলো আমি করেছিলাম। তার সম্বন্ধে যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ জানতে পারে সেজন্য আমি লেখালেখি করেছিলাম। একজন গ্রামীণ প্রান্তিক অবহেলিত মানুষ মুক্তিযুদ্ধ কেমন আলোকিত ভূমিকা রেখেছিলেন তা সকলের জানা প্রয়োজন ছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে।

কালবেলা: বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে আপনার কী বার্তা থাকবে?

এস এম আব্রাহাম লিংকন: তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন দেশকে জানতে চেষ্টা করে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম শুধু উপরের দিকে তাকাচ্ছে তারা এই দেশের মাটির দিকে তাকাচ্ছে না। তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন শিকড়ের দিকে তাকায়, তারা যেন তাদের পূর্বপুরুষদের ত্যাগ তিতিক্ষা সেগুলো স্মরণ করে। এই রাষ্ট্র নির্যাতনের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল চেতনা ও স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন দেশকে জানতে চেষ্টা করে।

তারা যেন দেশের ইতিহাস জানার চেষ্টা করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে কীভাবে গড়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা করে। একটি স্বনির্ভর ও প্রাচুর্যময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তরুণরা যেন ভূমিকা রাখতে পারে। একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, মুক্ত চিন্তার, অসাম্প্রদায়িক এবং সাম্যের দেশ গড়ে উঠুক এটাই আমার চাওয়া।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বন্ধ হচ্ছে ইউরোপের দরজা

লঞ্চের ধাক্কায় নদীতে পড়ে নারী নিখোঁজ

বিএনপিতে যোগ দিলেন জাতীয় পার্টির ২ শতাধিক নেতাকর্মী

ঢাবিতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে জ্ঞান হারালেন ছাত্রী

মে’র তাপমাত্রা নিয়ে ভয়াবহ দুঃসংবাদ

নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে যুবদল

ধান কাটতে গিয়ে হিটস্ট্রোকে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

আগামীকাল দেশের পথে রওনা হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ 

সেই নাবিকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাল ইরান

১০

কুবি কোষাধ্যক্ষের গাড়ি আটকে দিল শিক্ষক সমিতি

১১

অলৌকিক ‘জাদুর কলের’ দেখা মিলেছে

১২

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজেও ক্লাস শুরু রোববার

১৩

অভিভাবক ঐক্য ফোরাম / দাবদাহে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হলে দায় সরকারের

১৪

ধান বাঁধছিল রেজাউল, হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

১৫

‘১০০ সাংবাদিক হইয়া গেছে, নির্বাচনে আর সাংবাদিক লাগবে না’

১৬

শহীদ শেখ জামালের জন্মদিন রোববার

১৭

নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করায় অর্থদণ্ড

১৮

বর্ষায় দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ করবে ছাত্রদল

১৯

নিভৃতে চলে গেল সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মৃত্যু বার্ষিকী

২০
*/ ?>
X