দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা যখন কাশ্মীরের পেহেলগাম ঘটনার পর নতুন করে চাঙ্গা, তখন ভারত সরকার এমন এক নীতির আশ্রয় নিয়েছে, যাতে জনগণের কাছে পাকিস্তানের ভিন্নমত পৌঁছাতে না পারে। একে অনেকেই বলছেন ‘তথ্য যুদ্ধ’।
প্রসঙ্গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) নয়াদিল্লি ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে। এসব চ্যানেলের মধ্যে দেশটির মূলধারার ডন নিউজ, এআরওয়াই নিউজ, জিও নিউজের মতো জনপ্রিয় গণমাধ্যমও রয়েছে।
শুধু তাই নয়, কিছু ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ক্রিকেট বিশ্লেষকের অ্যাকাউন্টও ব্লক করা হয়েছে। ভারত সরকারের দাবি, এসব চ্যানেল ‘উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল’ কনটেন্ট প্রচার করছিল।
তবে অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এই অজুহাত নেহাতই হাস্যকর। কারণ, ভারতীয় মূলধারার অনেক গণমাধ্যমে যেখানে প্রতিনিয়ত পাকিস্তান ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার চালানো হচ্ছে, সেখানে এধরনের নিষেধাজ্ঞা দ্বিমুখী নীতিরই পরিচায়ক।
এছাড়া ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে— যেমন, পাকিস্তানি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ব্লক করা, পাকিস্তানি সংস্কৃতি ও খেলাধুলার প্রতি বয়কট নীতি চালু করা। এসব পদক্ষেপ দেখে অনেকে বলছেন, যেন ভারত সরকার, কিছু গণমাধ্যম ও অংশবিশেষের নাগরিক সমাজ যুদ্ধকালীন মানসিকতা তৈরি করতে চাইছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র দাবি করা রাষ্ট্র যদি পাকিস্তানি গণমাধ্যমের ভিন্নমত শোনাকে ভয় পায়, তাহলে বোঝাই যায় পরিস্থিতি কতটা সংবেদনশীল।
পাকিস্তানের দিকেও নিঃসন্দেহে যুদ্ধবাজ কিছু কণ্ঠস্বর রয়েছে। কিন্তু ভারতের গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রভাব ও পৌঁছানোর ক্ষমতার কারণে যুদ্ধ-উন্মাদনা সহজেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কাশ্মীরে পেহেলগামে হামলার এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের জড়িত থাকার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ভারত পেশ করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি গণমাধ্যমকে চুপ করিয়ে দেওয়ার পেছনে আসল উদ্দেশ্য হতে পারে— জনসাধারণ যাতে প্রশ্ন না তোলে বা বিকল্প মতামত না জানতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে কাশ্মিরি মুসলমানদের ওপর প্রতিশোধপরায়ণ হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রায় ২ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি পেহেলগাম ঘটনার অজুহাতে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধেও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে।
এই সবকিছু ‘তথ্য যুদ্ধ’কেই সামনে এনে দিচ্ছে— যেখানে সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে যুদ্ধ-উন্মাদনা ও ঘৃণার রাজনীতি বেছে নেওয়া হচ্ছে। এখনই সময় ভারত রাষ্ট্র ও তার গণমাধ্যমের আত্মসমালোচনার এবং শান্তিপূর্ণ, যুক্তিভিত্তিক অবস্থানে ফিরে আসার।
তথ্য যখন নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই খর্ব হয় না, শান্তি ও সহাবস্থানও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের সম্পদকীয় । ইংরেজি থেকে অনুবাদ : উমর শরীফ সোহাগ
মন্তব্য করুন