অর্থোপেডিক সার্জনরা স্পাইন সার্জারিতে অতীতকাল থেকেই অবদান রেখে চলেছেন। অধ্যাপক আর জে. গার্স্ট, যাকে বাংলাদেশের আর্থোপেডিক সার্জারির জনক বলা হয়, যক্ষ্মাজনিত স্পাইনাল রোগের ডিকস্প্রেশন এবং ফিউশন সার্জারি শুরু করেন। এরপর অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ইমান উদ্দিন এবং অধ্যাপক আবদুস সামাদ শেখের মতো বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জনরা স্পাইন সার্জারিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
পরবর্তীতে অধ্যাপক ইদ্রিস আলী স্পাইন সার্জারিকে বিকশিত করার চেষ্টা করেন এবং বর্তমানে অধ্যাপক শাহ আলম স্পাইন সার্জারির বিকাশ ও আধুনিকতা আনার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান অবস্থা
বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইউনিট : বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত মানের স্পাইন সার্জারি ইউনিট রয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনে (NITOR) একটি নিবেদিত স্পাইন সার্জারি ইউনিট রয়েছে, যেখানে অভিজ্ঞ সার্জনরা কাজ করছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ স্পাইন অ্যান্ড অর্থোপেডিক হাসপাতালের (BSOH) মতো বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উন্নতমানের স্পাইন সার্জারি সেবা প্রদান করছে।
উন্নত প্রশিক্ষণ ও গবেষণা : বাংলাদেশের তরুণ স্পাইন সার্জনরা দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। স্পাইনাল সার্জারির ওপর গবেষণা এবং নতুন নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশের স্পাইন সার্জারি উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে পৗঁছানোর চেষ্টা করছে।
স্পাইন সার্জারির অগ্রযাত্রা, অতীত থেকে ভবিষ্যৎ : বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে, বিশেষ করে স্পাইন সার্জারির ক্ষেত্রে, গত কয়েক দশকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এক সময় স্পাইন বা মেরুদণ্ডের কোনো সমস্যার জন্য উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবলে দেশের বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু এখন সে চিত্রটা অনেকটাই পাল্টে গেছে। মেরুদণ্ডজনিত রোগ বা আঘাতের আধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব।
অতীতের সীমাবদ্ধতা এবং প্রথম যাত্রা : আমাদের দেশে স্পাইন সার্জারির শুরুটা খুব সহজ ছিল না। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত স্পাইনাল সার্জারির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ছিল প্রকট। সে সময় মেরুদণ্ডের আঘাত বা রোগের চিকিৎসা মূলত প্রাথমিক পর্যায়ের ডিকস্প্রেশন এবং ফিউশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থোপেডিক সার্জনরা মেরুদণ্ডের চিকিৎসায় নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে থাকেন।
বর্তমান পরিস্থিতি, সাফল্যের নতুন দিগন্ত : বর্তমানে বাংলাদেশের স্পাইন সার্জারি অতীতের সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বহুদূর এগিয়েছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্পাইন সার্জারি ইউনিট রয়েছে। মাইক্রোস্কোপিক এবং অ্যান্ডোস্কোপিক স্পাইন সার্জারির মতো উন্নত পদ্ধতি এখন নিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে রোগীর অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি কমেছে এবং সুস্থ হওয়ার সময়ও দ্রুত হয়েছে।
বিশেষ করে, ডিস্ক প্রলাপস, স্পাইনাল স্টেনোসিস, মেরুদণ্ডের টিউমার এবং ফ্র্যাকচারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় আমরা এখন আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিচ্ছি। এছাড়া, স্কোলিওসিস (মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বাঁকা হওয়া) এবং কাইফোসিসের মতো জন্মগত বা জটিল সার্জারিও বাংলাদেশে সম্ভব হচ্ছে।
সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে স্বতন্ত্র স্পাইন ইউনিট চালু করার বিষয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে দেশের সব অঞ্চলের মানুষ উন্নত স্পাইন চিকিৎসার সুযোগ পাবে এবং চিকিৎসার জন্য ঢাকার ওপর চাপ কমবে।
পদক্ষেপগুলো : ১. বিশেষায়িত জনবল তৈরি ও প্রশিক্ষণ
* বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি : প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজে স্পাইন সার্জারিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্পাইন সার্জন নিয়োগ দেওয়া। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে স্পাইন সার্জারির ওপর বিশেষায়িত কোর্স (Fellowship) চালু করা।
* সহযোগী জনবল তৈরি : সার্জনদের পাশাপাশি স্পাইন ইউনিটের জন্য প্রশিক্ষিত নার্স, টেকনিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করা। এ ধরনের দলগত প্রচেষ্টায় উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত হবে।
২. অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তি সরবরাহ
* স্বতন্ত্র ইউনিট স্থাপন : প্রতিটি মেডিকেল কলেজে একটি স্বতন্ত্র স্পাইন ইউনিট তৈরি করা, যেখানে স্পাইন সার্জারি, ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
* আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার : অপারেশন থিয়েটারে নিউরো-নেভিগেশন সিস্টেম, মাইক্রোস্কোপ, সি-আর্ম, এবং অত্যাধুনিক আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করা। মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশনগুলো নির্ভুলভাবে করার জন্য এই প্রযুক্তিগুলো অপরিহার্য।
৩. গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
* গবেষণার সুযোগ : স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি এবং অন্যান্য মেরুদণ্ডজনিত রোগ নিয়ে গবেষণার জন্য ফান্ড বরাদ্দ করা। এর ফলে চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা সহজ হবে।
* আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা : বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথভাবে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। এর মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসকরা বিশ্বমানের স্পাইন সার্জারির কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন। সরকারি মেডিকেল কলেজে স্পাইন সার্জারিতে কর্মরত সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের যদি সরকারি ব্যবস্থাাপনায় বিদেশের উন্নত স্পাইন সেন্টার থেকে ৩ থেকে ৬ মাস মেয়াদি ফেলোশিপ করিয়ে আনা যায় তবে তারা স্পাইন সার্জারির বিকাশে আরো ভূমিকা রাখতে পারবেন।
যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে : সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে, স্পাইন সার্জারির মতো উন্নত চিকিৎসা দেশে সহজলভ্য হওয়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অতীতে, মেরুদণ্ডের জটিল চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি রোগীদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে যেতে হতো। এর ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বাইরে চলে যেত।
* চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস : বিদেশে স্পাইন সার্জারির জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, দেশে সেই একই চিকিৎসা তার তুলনায় অনেক কম খরচে করানো যায়। বিদেশে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচও যোগ করলে মোট ব্যয় আরও অনেক বেড়ে যায়। দেশের ভেতরে চিকিৎসা করানোর ফলে এই অতিরিক্ত ব্যয় এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।
* আস্থার সংকট দূরীকরণ : এক সময় দেশের স্পাইন চিকিৎসকদের ওপর মানুষের আস্থা কম ছিল। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি এবং দক্ষ সার্জনদের কারণে সেই আস্থার সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। বর্তমানে, দেশেই আন্তর্জাতিক মানের মাইক্রোস্কোপিক, এন্ডোস্কোপিক এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক স্পাইন সার্জারি হচ্ছে। এর ফলে রোগীরা দেশেই উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন, যা বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছে।
* স্বাস্থ্য পর্যটনের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের স্পাইন সার্জারি খাত উন্নত হওয়ায়, এখন শুধু দেশীয় রোগীরাই নয়, বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর রোগীরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসতে পারে। যদি আমরা চিকিৎসার মান আরও উন্নত করতে পারি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করি, তাহলে বাংলাদেশও স্বাস্থ্য পর্যটনের একটি কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।
ভবিষ্যতের জন্য করণীয় : বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের এই ধারা বজায় রাখতে বাংলাদেশের চিকিৎসা খাত নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। তবে, শুধু স্পাইন সার্জারির জন্য ঠিক কত সংখ্যক মানুষ বিদেশে যান, তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। কারণ, সরকারি বা বেসরকারিভাবে এই ধরনের আলাদা কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না।
তবে, কিছু তথ্য থেকে একটি ধারণা পাওয়া যায় :
* মোট স্বাস্থ্য পর্যটন : বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, যাদের অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যান। তাদের মধ্যে স্পাইন, কার্ডিয়াক, অর্থোপেডিক, ক্যানসার এবং কিডনি রোগের মতো জটিল চিকিৎসার জন্য রোগীর সংখ্যা বেশি।
* খরচের পরিমাণ : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (DCCI) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশি রোগীরা প্রতি বছর বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেন। এর মধ্যে একটি বড় অংশ ব্যয় হয় জটিল সার্জারির জন্য, যার মধ্যে স্পাইন সার্জারি অন্যতম।
* কেন বিদেশে যান : রোগীরা বিদেশে যান মূলত উন্নত প্রযুক্তির অভাব, দক্ষ চিকিৎসকের স্বল্পতা, স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রতি আস্থার অভাব এবং দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে। যদিও বাংলাদেশে এখন উন্নত স্পাইন সার্জারি সম্ভব, তবুও অনেকেই পুরোনো ধারণার ওপর ভিত্তি করে বিদেশে যেতে পছন্দ করেন।
পদোন্নতির বাধা দূরীকরণ : স্পাইন সার্জারি একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত এবং জটিল চিকিৎসা শাখা। এর চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে, যা দূর করতে সরকার কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। চিকিৎসকদের পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকরী করে তোলার মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়ন সম্ভব।
চিকিৎসকদের পদোন্নতির বাধা ও সরকারের সম্ভাব্য পদক্ষেপ :
স্পাইন সার্জারি চিকিৎসকদের পদোন্নতি মূলত তিনটি কারণে বাধাগ্রস্ত হয় : বিশেষায়িত পদের অভাব, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশিক্ষণের সুযোগের অভাব। এই সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নিতে পারে।
১. বিশেষায়িত পদ তৈরি ও পদোন্নতির নীতিমালা পরিবর্তন
* স্বতন্ত্র স্পাইন সার্জারি পদ সৃষ্টি : বর্তমানে স্পাইন সার্জনরা নিউরোসার্জারি বা অর্থোপেডিক বিভাগের আওতায় কাজ করেন। সরকার স্পাইন সার্জারির জন্য স্বতন্ত্র সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদ তৈরি করতে পারে। এতে স্পাইন সার্জনরা নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পদোন্নতি পেতে পারবেন।
* সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা বিবেচনা : পদোন্নতির সময় শুধু সাধারণ সার্জারির অভিজ্ঞতা নয়, বরং স্পাইন সার্জারিতে তাদের বিশেষ দক্ষতা, প্রকাশনা এবং গবেষণামূলক কাজগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জটিল স্পাইন সার্জারি সম্পন্ন করাকে পদোন্নতির একটি পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু স্পাইন সার্জারি সাবজেক্ট নতুন সেক্ষেত্রে ফিডার পদের সময়কালকে প্রমার্জনা দিয়ে যদি দ্রুত সহযোগী অধ্যাপকদের পদায়ন করা যায় সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র স্পাইন ইউনিট চালু করা সরকারের জন্য সহজতর হবে এবং দ্রুত স্পাইন সার্জারি বাংলাদেশে বিকাশ লাভ করবে, নতুন নতুন স্পাইন সার্জন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের স্পাইন সার্জারি খাতে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত চিকিৎসকদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। তারা কেবল রোগী দেখেই দায়িত্ব শেষ করেন না, বরং নতুন প্রজন্মের সার্জনদের প্রশিক্ষণ, গবেষণায় অংশগ্রহণ এবং নতুন প্রযুক্তির প্রচলনেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বাংলাদেশের স্পাইন সার্জারিকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ :
সহযোগী এবং সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। তারা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের, অর্থাৎ যারা স্পাইন সার্জারিতে বিশেষজ্ঞ হতে চায়, তাদের সরাসরি প্রশিক্ষণ দেন। এই প্রশিক্ষণ কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান নয়, বরং জটিল অস্ত্রোপচারের সময় তাদের পাশে থেকে হাতে-কলমে শেখানোর মাধ্যমেও সম্পন্ন হয়। এর ফলে নতুন স্পাইন সার্জনরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে।
নতুন প্রযুক্তির প্রচলন :
এই স্তরের চিকিৎসকরা প্রায়ই বিদেশ থেকে উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন এবং সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশে প্রয়োগ করেন। যেমন, মিনিম্যালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি (MISS), যেখানে ছোট কাটা দিয়ে অপারেশন করা হয় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে, এ ধরনের আধুনিক পদ্ধতির প্রচলনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া, তারা নিউরো-নেভিগেশন, এন্ডোস্কোপিক সার্জারি এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই চিকিৎসকদের অনেকেই সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে দেশের বাইরে থেকে ফেলোশিপ বা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন এবং দেশের চিকিৎসার মানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সারসংক্ষেপ :
যদিও শুধু স্পাইন সার্জারির জন্য বিদেশগামী মানুষের সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব নয়, তবে এটা স্পষ্ট যে, প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান এবং এর জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। বাংলাদেশের স্পাইন সার্জারি খাতকে আরও উন্নত ও সুসংগঠিত করা গেলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে রাখা সম্ভব হবে। এজন্য সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যমান সহকারী অধ্যাপকদের পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক করে প্রতিটি সরকারি মেডিকেলে স্বতন্ত্র স্পাইন ইউনিট চালুর কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক (স্পাইন সার্জারি) খুলনা মেডিকেল কলেজ, সংযুক্তি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মন্তব্য করুন