সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাতক্ষীরা মেডিকেলে রোগীকে বলে সাপ্লাই নেই, টাকায় মেলে ওষুধ

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। টাকা দিয়ে হাসপাতালের সরকারি ওষুধ নেওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো, কমিশন বাণিজ্য, হুইলচেয়ার বাণিজ্য ও প্রথমে সাপ্লাই নেই বলে রোগীকে ওষুধ না দেওয়াসহ নানা অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। এসব কারণে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে বিপাকে রয়েছেন রোগীরা।

মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।

এদিকে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর একটি দল। এ সময় তারা সরকারি ওষুধ বিক্রি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রোগীকে দেওয়ার অভিযোগে মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ড বয় হরষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

হরষিতের কাছ থেকে সরকারি ওষুধ কিনে বিপাকে পড়া সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী বলেন, ঈদের পরদিন আমার স্ত্রীকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেছি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা বলেছে, এ ওষুধ বর্তমানে সাপ্লাই নেই, আপনি বাইরে থেকে নিয়ে আসেন। আমি প্রথম থেকেই সব ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসছি।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ওয়ার্ড বয় আমাকে বলল চাচা এ ওষুধটা বাইরে থেকে কত টাকা করে কিনছেন? আমি বললাম ৮৫০ টাকা। সে বলল আমার কাছে ওষুধ আছে, প্রতি পিস ৫০০ টাকা করে দিলে এ ওষুধ পাবেন। আমি তার কাছ থেকে ওষুধ নিয়েছি। এ ওষুধগুলো সরকারি।

মোহাম্মদ আলী বলেন, চারটা ওষুধ আমার স্ত্রীর শরীরে পুশ করলে সে জ্বালা যন্ত্রণার অনুভব করে। এক পর্যায়ে জ্বর আসে। এক সময় আমার এক আত্মীয় ওষুধগুলো দেখে আমাকে জানায় ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ।

সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে ওষুধ বিক্রির কথা স্বীকার করে মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ড বয় হরষিত বলেন, আমি ছয়-সাত মাস আগে হাসপাতালে ডাস্টবিন থেকে কয়েকটি ওষুধ কুড়িয়ে পাই। সুযোগ বুঝে এখন ওষুধগুলো বিক্রি করেছি।

এদিকে হরষিতের কাছ থেকে কেনা ছয়টি ওষুধের অবশিষ্ট দুটি ওষুধে দেখা গেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মেয়াদ শেষ।

তালা উপজেলার জাতপুর এলাকা থেকে আসা রবিউল ইসলাম জানান, আমরা গরিব মানুষ, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমাদের পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এখানে এসে পড়তে হয় বিপাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার প্রেশার মাপাসহ কোনো কিছু পরীক্ষা করতে বললেই দিতে হয় টাকা।

আরেক রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার আম্মা স্ট্রোকের রোগী। প্রথমে এসে জরুরি বিভাগে কথা বললে তারা তিন তলার মেডিসিন বিভাগে যেতে বলে। এ সময় আমরা হাসপাতালে হুইলচেয়ার ও লিফট ব্যবহার করে তিন তলায় আসি। হুইল চেয়ার ব্যবহার করে আমার আম্মাকে তিনতলায় আসা মাত্রই হুইল চেয়ার বাবদ একজন ওয়ার্ড বয় আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। এরপর প্রেশার আর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার সময় আবার টাকা নেয়।

তিনি আরও বলেন, আজকে দুপুরে প্রেশার মেপে ডাক্তারের কাছে গেলে, ডাক্তার পুনরায় প্রেসার মেপে তার কাছে যেতে বলে। এ সময় আমি এসে ওয়ার্ড বয়কে বলি আমার আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তার বলেছেন আবার প্রেশার মেপে যেতে। সে বলল আমি এখন পারব না আধা ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট পরে আমার সঙ্গে দেখা কর। আমি বললাম, আমার আম্মুর অবস্থা খুব খারাপ আপনি এখন একটু আসেন। তখন সে আমাকে বলে আপনার আম্মু মারা যাক তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসে না।

আব্দুল গফুর নামে একজন বলেন, টাকা ছাড়া এখানে কোনো কাজই হয় না। রোগীর যদি কোনো পরীক্ষা করতেই হয় টাকা দিতে হয়। এরপর হুইল চেয়ারে যদি টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে ১০০ টাকা করে দিতে হয়। টাকা নিয়েই সব কাজ করে তাহলে এটি সরকারি হাসপাতাল হলো কিভাবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, আমরা এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিটিং করেছি। হাসপাতালে ডাক্তাররা ঠিকমতো ডিউটি না করা, গাড়ির গ্যারেজে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি। ওষুধ থাকবে হাসপাতালের স্টোরে। যেখান থেকে সুষ্ঠুভাবে রোগীর হাতে পৌঁছাবে। সেই ওষুধ কীভাবে ওয়ার্ড বয়ের মাধ্যমে বিক্রি হলো এটার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরতে খোদা বলেন, ওষুধ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনারা রোগীর লোককে একটু বলেন, আমার কাছে একটা অভিযোগ দিতে। তাহলে আমি যে এ কাজ করেছে তাকে আউট করে দেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যশোর-৫ / মিন্টুকে বরণ করে নিলেন মতুয়া সম্প্রদায় হাজারো নারী-পুরুষ

‘জামায়াতের বিরুদ্ধে বেহেস্তের টিকিট বিক্রির অপবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে : সাকি

পাওনা টাকা চাওয়ায় মোবাইল ব্যবসায়ীকে খুন, গ্রেপ্তার ১

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবরুদ্ধ

শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জামায়াত কর্মীর মৃত্যু

৮৩ ইনিংস পর বাবরের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের সিরিজ জয়

আইওজেএইচের পুরস্কার প্রত্যাহার করল ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম

আঙ্গোলায় অদ্ভুত প্রীতি ম্যাচে গোল–অ্যাসিস্টে আলো ছড়ালেন মেসি

মোহাম্মদপুরে গোপন ককটেল কারখানার সন্ধান, যা পাওয়া গেল

১০

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের নৈশভোজে বিএনপি মহাসচিব

১১

পরকীয়ার জেরে ব্যবসায়ীর মরদেহ ২৬ টুকরা : এবার প্রেমিকা শামীমা গ্রেপ্তার

১২

বিএনপির এক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৩

ব্যবসায়ীর মরদেহ ২৬ টুকরা করার কারণ জানা গেল

১৪

ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসুন : মোশারফ হোসেন

১৫

বিরোধ মিটালেন সালাউদ্দিন আহমদ, বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন জানালেন দোলা

১৬

রাজশাহীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু

১৭

ডিসেম্বরে তপশিল না হলে ফেব্রুয়ারির প্রথমে নির্বাচন সম্ভব নয় : দুলু

১৮

ইন্দোনেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সিভাসুর সমঝোতা

১৯

প্রত্যাহার করা ২০ ডিসিকে যেসব মন্ত্রণালয়ে পদায়ন

২০
X