আমাদের দেশে এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। বর্ষার সঙ্গে আমাদের সবারই শৈশবের কিছু স্মৃতি আছে। বর্ষার কথা এলেই আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভৈরবনদের কথা মনে পড়ে। কারণ, নদটি বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে কানায় কানায় ভরে যেত। এই পানি আবার ঠ্যাল ধরত আমাদের বাড়ির দিকে। সে সময় কয়েক দিন ধরে মুষল ধারে বৃষ্টি হওয়ায় এমনটা হতো। গ্রামের পুকুর, বিল ও মাঠ পানিতে টইটম্বুর থাকত। তখনকার সময় গ্রামগুলো এত উন্নত ছিল না। ফলে, গ্রামে কাঁচা বাড়ির সংখ্যা বেশি ছিল। মাঝে মাঝে আমরা খবর পেতাম কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে গ্রামের কোথাও না কোথাও বাড়ির দেয়াল ধসে পড়েছে। তবে এগুলো সবই এখন স্মৃতি। কারণ গ্রামগুলো উন্নত হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এখন আর আগের মতো কাঁচা বাড়ি দেখা যায় না। গ্রামে এখন দালান বাড়ি, পাকা রাস্তা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও জীবিকার তাগিদে পরিবেশের ক্ষতি করে চলছে নিয়মিত। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে—সঙ্গে বৃষ্টিপাতের ধরন আর আগের মতো থাকছে না।
আমাদের দেশে বার্ষিক ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয় বর্ষা মৌসুমে। স্থানভেদে গড় বৃষ্টিপাতের তারতম্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয় ২০৩ সেমি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। কয়েক বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর একটি গবেষণার তথ্য সংগ্রহে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, আগের তুলনায় এখন বৃষ্টিপাত কমে গেছে। কখনো বর্ষার আগেই বৃষ্টি হচ্ছে আবার বর্ষার মৌসুম কিছু সময় বৃষ্টিহীনতা থাকছে। স্পারসো ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ বলছে, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। এতে কৃষি কাজে বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে। বিবিসি ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলছে, গত ৪০ বছরের মধ্যে এই বছর বর্ষায় বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা একই আভাস দিচ্ছেন।
বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন বিভিন্ন সেক্টরে সঙ্গে কৃষিতে বেশ প্রভাব ফেলছে। কারণ কৃষকরা বলছেন, এক সময় তারা চাষাবাদে বৃষ্টির পানি ওপর ভরসা করতেন কিন্তু এখন বর্ষার সময়ও মাঝে মাঝে সেচ যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গ্রামে নদীতে পানি না থাকায় নদীর পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। তবে, এ বছর নদী খননের ফলে অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে। আবার, অতি বা অনাবৃষ্টি ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে ফলস্বরূপ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে এবং এতে উত্তরাঞ্চলে বেশি ক্ষতি হবে, বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত দিচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ দিনে দিনে হুমকির মুখে পড়বে। সরকারকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই সমস্যা উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সামিয়া চাঁদ : শিক্ষক, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।
মো. শাহিন রেজা : সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা।
নিবন্ধে প্রকাশিত সকল মতামত ও বিশ্লেষণ লেখকের একান্ত নিজস্ব। কালবেলা’র সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে।
মন্তব্য করুন