বিশ্বের তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল। তিনভাগ জলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে সাগর আর মহাসাগর বা সমুদ্র। এই সমুদ্র নানাভাবে বিশ্বের মানবজাতির কল্যাণে সর্বদাই নিবেদিত। যদি একটু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, এই সাগর, মহাসাগর বা সমুদ্র কীভাবে মানবসভ্যতায় নীরবে অবদান রেখে চলেছে তা নিচের লেখা থেকে বিশদভাবে জানা যাবে।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা সমুদ্র উপকূলের ৫০ মাইলের মধ্যে বাস করে এবং এটি আমাদের খাদ্যের সংস্থানসহ বিভিন্ন অমূল্য সুবিধা ও পরিষেবা প্রদান করে। বিশ্বের সমুদ্রগুলি মিঠাপানির চক্রের প্রধান ভূমিকা পালন করে। সমুদ্র থেকে মেঘ তৈরি হয়ে তা থেকে বৃষ্টি নিয়ে আসে এবং আমাদের মিঠাপানির সরবরাহ পূরণ করে। সমুদ্র জলবায়ু ও আবহাওয়ার ধরনগুলিকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে, তাপ স্থানান্তর করে এবং বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মান নিয়ন্ত্রণ করে। সমুদ্র পৃথিবীর কার্বন চক্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রের উপরের স্তরগুলির কার্বন অপসারণ করে। সামুদ্রিক গাছপালা সমুদ্রতলের পলিতে কার্বন আলাদা করে কার্বন সিঙ্ক হিসেবেও কাজ করে। এই প্রাকৃতিক স্টোরেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সমুদ্র একটি জলবায়ু পরিষেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
সমুদ্রের গাছপালা শুধু বিশ্বের অক্সিজেনের অর্ধেকই উৎপন্ন করেনা, সমুদ্র মানুষের সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শোষণ করে একটি ‘‘এয়ারফিল্টারিং ডিভাইস” হিসেবে কাজ করে। সমুদ্রগামী শিপিং এর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি হয়ে থাকে। সামুদ্রিক মৎস্য ২০০৭ সালে (বিশ্বব্যাংক ২০১২) বিশ্ব জিডিপিতে আনুমানিক ২৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখে এবং সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের বাণিজ্যে প্রতিবছর প্রায় ১৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (এফএও ২০১৮) অবদান রাখে। মৎস্য ও জলজ চাষ প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয় যারা ভ্যালু চেইনের সাথে কাজ করে এবং ৩ বিলিয়ন মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে যারা তাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মাছের উপর নির্ভর করে (এফএও, ২০১৬)। মহিলারা এই সেক্টরে সরাসরি নিযুক্ত কর্মশক্তির ১৪ শতাংশের কাছাকাছি, কিন্তু প্রক্রিয়াকরণের মতো মাধ্যমিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হলে মহিলাদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশের কাছাকাছি হবে।
সমুদ্র, মালবাহী বার্ষিক আয়ে অর্ধ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অবদান রাখে এবং সমুদ্র ও উপকূল উভয় ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু নীতির প্রভাবের উপর নির্ভর করে ২০৫০ নাগাদ বৈশ্বিক মালবাহী চাহিদা তিন গুন বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১১ বিলিয়ন টন লোডেড যা সর্বকালের সর্বোচ্চ পরিমাণে পৌঁছেছে। মাছ ধরা, পর্যটন, পরিবহনের মতো শিল্পগুলি অপরিহার্য রাজস্ব প্রদান করে এবং শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সমুদ্রের পর্যটন, বিনোদন এবং জীবনযাত্রার সম্পদ থেকে বার্ষিক জিডিপিতে ১২৮ বিলিয়ন ডলারের বেশী যুক্ত হয়। সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উৎস থেকে তৈরি হচ্ছে মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী। সমুদ্র উপকূলে বিনোদন বা সময় কাটানো, শরীর, মন, এবং আত্তার জন্য একটি কার্যকর থেরাপিউটিক।
গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকে। কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো, পশুপালন বৃদ্ধি এবং বন উজাড়ের মাধ্যমে তাদের ঘনত্ব নৃতাত্বিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাক-শিল্প যুগ থেকে, মানুষ ২৫০০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করেছে যা গত ৬,৫০,০০০ বছরে গড় প্রাকৃতিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে (আইপিসিসি ২০২১)। অদ্যাবধি, ১০টি দেশ বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে ৬৯ শতাংশ অবদান রেখেছে এবং ২০টি দেশ ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রায় ৮২ শতাংশ নির্গমন করেছে। যদিও ৫০টি স্বপ্লোন্নত দেশ বৈশ্বিক নির্গমনের ১ শতাংশের কম অবদান রাখে অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করছে।
৩০টি দেশের ১০০ জনের বেশি বিজ্ঞানীর অবদানের কারণে সেইসাথে আইসল্যান্ডের সমর্থনে ইউনেস্কো স্টেট অব দ্য ওশান রিপোর্ট ২০২৪ প্রকাশ করেছে যা সমুদ্রের উঞ্চতা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, দূষণ, অ্যাসিডিফিকেশন, ডি-অক্সিজেনেশন, নীল কার্বন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসহ চ্যালেঞ্জগুলির প্রমাণভিত্তিক পর্যালোচনা প্রদান করে। বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা ওঠানামা করার প্রবণতা থাকলেও, সমুদ্র স্থিরভাবে এবং ক্রমাগত উত্তপ্ত হয়। ওশান রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, সমুদ্র এখন বিশ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ হারে উষ্ণ হচ্ছে বিশেষ করে ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর নিচে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও, সমুদ্রের তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই গড়ে ১.৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ভূমধ্যসাগর, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগরে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর উপরে পরিষ্কার হটস্পট রয়েছে। এই উষ্ণায়নের একটি নাটকীয় পরিণতি হলো সারা বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। মহাসাগর বায়ুমণ্ডলে নির্গত অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশ শোষণ করে এবং পানি উত্তপ্ত হওয়ার সাথে সাথে এটি প্রসারিত হয়।
১৯৬০ এর দশক থেকে, উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং দূষণকারীর কারণে সমুদ্র তার ২ শতাংশ অক্সিজেন হারিয়েছে, যার মধ্যে বর্জ্য পানি ও কৃষিকাজ রয়েছে। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫০০টি ‘মৃত অঞ্চল” চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে অক্সিজেন কন্টেন্ট হ্রাসের কারণে প্রায় কোনও সামুদ্রিক জীবন অবশিষ্ট নেই। সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান অওতাও উদ্বেগের একটি প্রধান কারণ। ২৫-৩০ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন সমুদ্র দ্বারা শোষিত হয়, কার্বন ডাই অক্সাইড এর এই অত্যধিক পরিমাণ সমুদ্রের রাসায়নিক গঠনকে নতুন আকার দিচ্ছে। প্রাক-শিল্পকাল থেকে, সমুদ্রের অওতা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২১০০ সালের মধ্যে ১৭০ শতাংশে পৌঁছাবে যার কারণে সামুদ্রিক প্রজাতিগুলির ব্যাপক মৃত্যু ঘটবে।
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয় এবং এর ০.৫ শতাংশ অর্থাৎ ১.৭ মিলিয়ন টন সমুদ্রে পতিত হয়। তাছাড়া সিগারেটের বাট, ওশান ডাম্পিং বা জলপথে আবর্জনা ধুয়ে ফেলা, ক্ষতিকর প্রতিরক্ষা অস্ত্রের পরীক্ষাসহ আরও অনেক ভাসমান আবর্জনা সমুদ্রে ফেলা হয়। জাতিসংঘের ২০১৭ এর মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের চেয়ে বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক থাকবে যদি যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুসারে সবচেয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে যে, ম্যানগ্রোভ, সামুদ্রিক ঘাস, জোয়ারের জলাভুমিসহ সামুদ্রিক বন স্থলভাগের বনের চেয়ে ৫ গুন বেশি কার্বন শোষণ করতে সক্ষম। অর্থাৎ জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সেরা প্রাচীর হিসেবে কাজ করে। ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুসারে, প্রায় ৬০ শতাংশ দেশ এখনো তাদের জাতীয় পরিকল্পনায় সামুদ্রিক বন পুনরুদ্বার এবং সংরক্ষনকে অন্তর্ভুক্ত করে নাই যা অতি জরুরিভাবে করা প্রয়োজন। সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকাগুলি (এমপিএ) জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য পরিচিত, আইইউসিএন রেড লিস্টে ১৫০০টি বিপন্ন সামুদ্রিক প্রজাতির ৭২ শতাংশের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। ইউনেস্কোর মতে, মেরিন প্রোটেকটেড এরিয়াতে নিয়ন্ত্রণের স্তর যত বেশি হবে, স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় এটি তত বেশি কার্যকর হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাস বাড়তে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ শতকের দূষণের জন্য প্রায় ৩,০০০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ছিল। বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বজুড়ে নিচু উপকূলীয় অঞ্চলগুলি প্লাবিত হতে পারে এবং এমনকি সমগ্র শহরগুলি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বাংলাদেশে মৌসুমি বন্যা নূতন কিছু নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বঙ্গোপসাগরের নিচু উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে ঘন ঘন তীব্র বন্যা হচ্ছে।
পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে মহাসাগর ও ক্রায়োস্ফিয়ারের ২০১৯ সালের বিশেষ প্রতিবেদনে, বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রের পানির তাপীয় সম্প্রসারণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রধান চালক। যদিও ১৯ শতকের প্রথমদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি শুরু হয়েছিল, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বৃদ্ধির হার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, হিমবাহ ও বরফের সিটগুলো গলে যাওয়ার কারণে। বিশ শতকের বেশিরভাগ সময় জুড়ে, সমুদ্রের উচ্চতা প্রতিবছর ১.৪ মিলিমিটার হারে বেড়েছে এবং দেখা গেছে ২০০৬ এবং ২০১৫ এর মধ্যে, হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে যা বার্ষিক প্রায় ৩.৬ মিলিমিটারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ, আনুমানিক ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান তীব্র বর্ষা মৌসুমের কারণে নদী বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বর্তমান হারে অব্যাহত থাকলে আগামী দশকে প্রায় ১৭ শতাংশ বা প্রায় ৩০ মিলিয়ন বাংলাদেশিকে স্থানান্তরিত করতে হবে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে অবস্থিত একটি নিচু উপকূলীয় দেশ। দেশের ৬০ শতাংশ ভূমির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটার এবং অধিকাংশ শহরে জনসংখ্যা নিচু উপকূলীয় এলাকায় বসতি স্থাপন করে। দেশটি বেশ কয়েকটি নদী দ্বারা অতিক্রম করেছে যেমন ব্রক্ষপুত্র ও পদ্মা হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিমালয়ের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত এমন একটি এলাকা যা বিশেষ করে বর্ষাকালে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অরোগ্রাফিক বৃষ্টিপাতের শিকার হয়। সমুদ্র থেকে আর্দ্র বাতাস যখন পর্বতমালার উপর দিয়ে চলে যায় তখন বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ ও পাকা বাঁধ দেওয়া এবং শহরগুলোকে রক্ষা করার জন্য প্রচুর অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি যার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
আইপিসিসি সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্ট করেছে যে, যে কোনো পরিমাণ নির্গমন হ্রাস সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির নিকটবর্তী এবং মধ্য-মেয়াদি প্রভাবগুলিকে থামাতে পারে না। এমনকি, সমস্ত কার্বন নির্গমনকে নির্মূল করা হলেও ইতিমধ্যে যে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অব্যাহত থাকবে। বন্যা এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়া আগামী কয়েক দশকে তীব্রতর হবে এবং এগুলো প্রশমিত করার একমাত্র বিকল্প হলো অবিলম্বে নির্গমন হ্রাস করা। এর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোসহ পুনর্নবীকরনযোগ্য শক্তি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। আর সে জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্যারিস চুক্তি লক্ষ্য পূরণের জন্য বিশ্বের সকল সরকারগুলি থেকে আরও শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি পাওয়া এবং সকল সরকারকে তাদের সমুদ্র সীমানার ইকোসিস্টেম উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা।
ইউনেস্কো ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের মহাসাগর বিজ্ঞানের দশকের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দশকের শুরু থেকে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫০০টিরও বেশি প্রকল্প চালু করা হয়েছে এবং উন্নয়নের জন্য এক বিলিয়নের ডলারের বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে জ্ঞান ও সমুদ্রের রক্ষায় যা সমুদ্রকে রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য অপর্যাপ্ত। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিকে টেনে ধরার জন্য উল্লেখযোগ্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী তথা উন্নত দেশগুলোকে নির্গমন কমানোর পাশাপাশি সমুদ্রের ইকোসিস্টেমকে স্থিতিশীল রাখার জন্য বা উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কোর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সহযোগিতা করা অত্যন্ত জরুরি।
ড. এম মনির উদ্দিন: এগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন