কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে সরকার : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুরোনো ছবি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুরোনো ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। এ ধরনের বর্বরোচিত অমানবিক কাজ পুরো সংকটকে আরও ঘণীভূত করবে।

শনিবার (২৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার জনরোষের ভয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে দেশে কারফিউ দিয়ে রেলসহ সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করেছে। জনগণকে কর্মহীন রেখে অনাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য করছে, দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই এই সরকারকে বলবো, সব হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ এবং দেশের মানুষকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন। এ অবস্থা থেকে জাতি দ্রুত মুক্তি চায়, এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানসহ অসংখ্য মানুষের বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক সাঈদ খানকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে গ্রেপ্তার করা, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুকে রিমান্ড শেষে আদালতে আনার সময় গণমাধ্যমে যে চিত্র এসেছে তা যে কোনো বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। রিমান্ডে এমনভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছেন না। সাংবাদিক সাঈদ খানকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মগবাজারের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং রাতভর নির্যাতন চালিয়ে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নওয়াব আলীর একটি চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত বিএনপির প্রায় ৩৫ জন জাতীয় নেতা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, সরকার অবৈধ পথে ক্ষমতায় এসে আবারও একইভাবে ক্ষমতা আগলে রাখতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, পিলখানা ট্র্যাজেডিতে সেনাবাহিনীর ৫৭ চৌকস অফিসারকে হত্যা, সাজানো রায় দিয়ে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান, ৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে হয়রানি এবং খুন-গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা-নির্যাতনের পর এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদের হত্যা, গ্রেপ্তার, গুলি করে আদালতে ওঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করা হচ্ছে। বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারো নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেখানে রিমান্ডের ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, গ্রেপ্তারদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনি রচনা করা হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও ব্লক রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের যেভাবে গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে তা তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই অনুধাবন করা যায়। সরকার প্রথম থেকেই সরকারি গুণ্ডাবাহিনীকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়। তারা এতই রক্তপিপাসু হয়ে গেছে যে, আরও হতাহত ও আরও বেশি রক্তপাত কেন হলো না এর দায় এবং ব্যর্থতায় বিভিন্ন কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে সরকারপ্রধানসহ আওয়ামী নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কল্পকাহিনি জনগণের সামনে তুলে ধরছে, কিন্তু দেশের জনগণ তা বিশ্বাস করে না। আমি সরকারের মিথ্যা প্রচারণার নিন্দা জানাই। দেশের মানুষ গত ১৭ বছর ধরে পৈশাচিক নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে এই সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়েছে। জনগণ বারবার সরকারকে বার্তা দিয়েছে পদত্যাগ করার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলছে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়নি, যদি তাই হয় তাহলে জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় শিশু সামির কীভাবে নিহত হলো? এ প্রশ্ন দেশবাসীর।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারি বাহিনীর হাতে মাত্র এক সপ্তাহে ৪ জন সাংবাদিক হত্যা এবং দুই শতাধিক সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার বিচার না করে সাংবাদিক নেতা সাঈদ খানকে গ্রেপ্তার করা সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটি কু-নজির। এ সরকারের আমলে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শত শত। অনেক সাংবাদিক প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরিত হয়েছেন। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সরকার প্রতিবাদী ও গণতন্ত্রকামীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের খেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা সরকারকে এ ভয়ঙ্কর গ্রেপ্তার খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে সাংবাদিকসহ এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আফগানিস্তানে কেন বারবার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানছে

সাদাপাথরে যে সৌন্দর্য ফিরবে না আর

আগস্টের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আসেনি ৯ ব্যাংকে

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে ঢাকা

মাথায় টাক পড়ছে? ৫ অসুখের লক্ষণ হতে পারে চুল পড়া

৪৭তম ট্রফি জেতা হলো না মেসির, ফাইনালে মায়ামির লজ্জার হার

১৩০ বছরের ‘জিয়া বাড়ি’ আজও অবহেলিত

ফের আলোচনায় ভারতের সুপার স্পাই অজিত দোভাল

বিবিসি নাকি ভাই ভাই চ্যানেল, নারী সংবাদিক ভাইরাল

সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

১০

তাহসানের সংগীতের রজতজয়ন্তী পালন হবে অস্ট্রেলিয়ায় 

১১

পাকিস্তানের বিপক্ষে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চাইলেন মোদি

১২

১ সেপ্টেম্বর: কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

বিদ্যুৎ কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই

১৪

ডিএমপির দুই অতিরিক্ত কমিশনারের দপ্তর বদল

১৫

মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে যে জেলায়

১৬

উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ফেলোশিপ পেলেন মহিলা দল নেত্রী সুমাইয়া

১৭

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে বড় নিয়োগ

১৮

আজ বিশ্ব চিঠি দিবস : হারিয়ে যাওয়া আবেগের দস্তাবেজ

১৯

বিতর্কিত পেনাল্টির পরও রায়োর সঙ্গে বার্সার ড্র

২০
X