কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘বহুত্ববাদী সমাজে ফ্যাসিবাদী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না’ 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

বহুত্ববাদী সমাজে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দু’দিনব্যাপী সাংগঠনিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

সাইফুল হক বলেন, রক্তে ভেজা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিদায় নিয়েছে, কিন্তু গোটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রয়েছে। কেবল তাই নয়, ভিন্ন ভিন্ন চেহারায়, ভিন্ন ভিন্ন আদলে রাষ্ট্র ও সমাজের নানা স্তরে নতুন ফ্যাসিবাদী ধ্যান-ধারণা আবার জায়গা করে নিচ্ছে। গণজাগরণ, গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব মানুষকে মুক্ত করে, তাদের অধিকার ও মুক্তির পথ প্রশস্ত করে। কিন্তু এবার গণঅভ্যুত্থানের বিশাল অর্জনের পরেও তার স্ববিরোধিতা এই যে, এই গণঅভ্যুত্থান মতাদর্শ, রাজনীতি, সংস্কৃতি বা সামাজিক মনস্তত্ত্বের দিক থেকে এক ধরনের দক্ষিণপন্থার উত্থানের জমিন তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের বহুত্ববাদী সমাজে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারের দৃশ্যমান কিছু সাফল্যের পরও মানুষের প্রত্যাশা ইতোমধ্যে ফিকে হতে শুরু করেছে। নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ক্রমে এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তৃতি ঘটছে। খুন, রাহাজানি, সংঘাত, সহিংসতা থামছে না। জবরদস্তি, জবরদখল, মাস্তানি, চাঁদাবাজি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্তা এখনো বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকা নানা দিক থেকে হুমকির মুখে।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে গঠিত শ্বেতপত্র কমিশন ছয় মাস আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে লুটপাট ও দুর্নীতির রোমহর্ষক রিপোর্ট জমা দিলেও এ ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে কিছু বিপ্লবী সম্ভাবনার স্ফুরণ দেখা গেছে সত্য, কিন্তু এটা কোনো বিপ্লব বা বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান ছিল না। সে লক্ষ্যে দৃশ্যমান কোনো মতাদর্শিক, রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক প্রস্তুতিও ছিল না। ছিল কোটি কোটি মানুষের বঞ্চনা আর নিপীড়নজনিত সীমাহীন পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও অসাধারণ স্বতঃস্ফূর্ততা। আওয়ামী দুঃশাসনের পতনের পর নতুন কোনো শ্রেণি বা তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় বসেনি।

তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে এখন জাতীয় সমঝোতা গড়ে তোলার এক অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সহজতর হবে। এই ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সাইফুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আট মাস পার হলেও দেশের ভিতরে ও বাইরে এই গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তিসহ নানা অশুভ গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। ৫ আগস্টের পরিবর্তনকে এখনো তারা মেনে নিতে পারেনি। তাদের বাংলাদেশবিরোধী বহুমাত্রিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে আরও অস্থিশীলতা বেড়ে যেতে পারে, আমাদের সম্মিলিত অর্জনও বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে আট মাস পার হলেও এখনো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ও বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত থাকলে এই বছরের মধ্যেই এমনকি ডিসেম্বরের আগেও দেশের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের শহীদ, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সনজিদা খাতুন, পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাপোলো জামালী, গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় নিহত ৬০ হাজার নারী-পুরুষ-শিশু, সম্প্রতি কাশ্মীরে নিহত পর্যটকসহ বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের কারণে নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক রিপোর্টের উপর আলোচনা করেন- শহীদুল আলম নান্নু, মাহবুবুল করিম টিপু, খলিলুর রহমান খলিল, আসাদুল ইসলাম আজাদ, আবদুর রউফ, নির্মল বড়ুয়া মিলন, আউয়াল মাহমুদ, সাবিনা ইয়াসমিন। এছাড়া আলোচনা করেন শাহজাহান সিকদার, শমর আলী, মুনসুর রহমান, ডা. মৃদুল বড়ুয়া, আবদুল হাকিম, শিউলি বেগম, জামাল সিকদার, ইউসুফ হাসান, তিতাস সরকার, পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মাহমুদ হোসেন প্রমুখ। বিকালের অধিবেশনে পার্টির সংগঠন সংক্রান্ত রিপোর্ট উপস্থিত করেন সংগঠন বিভাগের ইনচার্জ আকবর খান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুমিল্লায় দুই মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবীদের না দাঁড়ানোর নির্দেশ

বিদ্যুৎ সংকটের অবসান, পুরোদমে চলছে ডিইপিজেডে উৎপাদন

মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ

বন‍্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করলেন প্রধান উপদেষ্টা 

২০২৪ সালের বন্যা স্বাভাবিক ছিল না : প্রধান উপদেষ্টা 

তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আনসার উদ্দিন 

হলুদ ছেড়ে লাল জার্সির খবরে প্রশ্নের মুখে ব্রাজিল!

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

যে কারণে আলিয়ার সঙ্গে অভিনয়ে আগ্রহী ইমরান হাশমি

আশুলিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৬ সদস্য আটক

১০

ঢাবির বাসে হামলা, ৫ জন গ্রেপ্তার 

১১

চীন সফর করেছেন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা

১২

টানা ৫ দিন সারা দেশে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

১৩

আপিল বিভাগের রায় / সরকারি চাকরিজীবীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরাও পাবেন উচ্চতর গ্রেড

১৪

চট্টগ্রামে টাইগারদের দাপট, বৃষ্টির আগেই বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে ম্যাচ!

১৫

আনিসুল, সালমান ও চৌধুরী মামুন ফের রিমান্ডে 

১৬

অল্পতেই পার পেলেন রুডিগার!

১৭

রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ৮ মে 

১৮

চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে মাথা বের করার চরম পরিণতি

১৯

কাশ্মীরের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বললেন কারাবন্দি ইমরান খান

২০
X