বিদেশে চিকিৎসাশেষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আগমনে দেশের গণতন্ত্রে উত্তোরণের পথ আরও সুগম হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, নির্বাচন ছাড়া তো গণতন্ত্র হয় না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা, জটিলতা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি সংকট উত্তোরণে সহায়ক হবে। কারণ, তিনি একজন সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধেয় নেত্রী এবং গণতন্ত্রের জন্য তার দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম রয়েছে। সুতরাং তার আগমনের ফলে জাতীয় নির্বাচনের দাবিটা আরও জোরাল হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, রাজপথে ও সরকারে উভয় অবস্থায় গণতন্ত্রের জন্য অবদানের কারণে গত চার-পাঁচ দশক ধরে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটা প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া, মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে তিনি আশা ও প্রত্যাশার স্থলেও পরিণত হয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তিনি হলেন বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। তাই দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে এমন একটা মানুষের খুব প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েক মাস ধরে এক ধরনের মতবিরোধ, জটিলতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনও একটু বিলম্বিত হচ্ছে এবং নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি, এমন পরিস্থিতিতে জটিলতা নিরসন এবং বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে তার মতো একজন অভিজ্ঞ নেত্রীর দেশে উপস্থিতিটাই অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। সব মিলিয়ে এই সময় দেশে তার আগমনটা প্রয়োজন ছিল। তিনি সেই প্রয়োজনটা বুঝতে পেরেছেন এবং স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশে এসেছেন।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, আমার মনে হয়- খালেদা জিয়া কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির হাল ধরবেন। তবে রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় হবেন, সেটা জানি না। কিন্তু বুদ্ধি-পরামর্শ বা অন্যভাবে সাধারণ মানুষ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করবেন। এমনকি তিনি কোনো কথা না বললেও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে পেয়ে উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশের বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার উপস্থিতিটাই এই ঐক্যকে অটুট রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, উনার বক্তব্য এবং উনার যে কোনো ভূমিকা বাংলাদেশের যে কোনো সংকট মোকাবিলা এবং সংকট উত্তোরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক কালবেলাকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দেশব্যাপী একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এটা শুধু তিনি যে বিএনপির চেয়ারপারসন, সেজন্য নয়; তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তাছাড়া এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য তার দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও ভূমিকা রয়েছে। তাই উনি শুধু বিএনপি নয়, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে একজন গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
তিনি বলেন, বেগম জিয়া এমন সময়ে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে এসেছেন, যখন নির্বাচন এবং সংস্কার ইস্যুতে দেশে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের মতবিরোধ চলছে। তাই এই সময়ে দেশে তার মতো একজন অভিজ্ঞ নেত্রীর উপস্থিতিটা খুব দরকার ছিল। তিনি আরও দুমাস পরেও আসতে পারতেন, কিন্তু তিনি এই সময়ে এসেছেন। তিনি আসাতে বিএনপির নেতাকর্মী ও মানুষের মাঝে এক ধরনের উৎফুল্লতা, স্বতঃস্ফূর্ততা কাজ করছে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনের দাবিটা আরও জোরালো হবে। কারণ, নির্বাচন ছাড়া তো আর গণতন্ত্র হয় না।
মন্তব্য করুন