

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড-কথাবার্তা এবং অযৌক্তিক ও বিভ্রান্ত দাবির কারণে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ উৎসাহিত হচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এরা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিচ্ছে। জ্বালাও-পোড়াও করছে, মানুষ হত্যা করছে। লকডাউনের নামে আওয়ামী লীগ মানুষ পুড়িয়ে মারছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপরে মাসব্যাপী ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণ প্রতিযোগিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, দেশ এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের একটিই পথ, সেটি হলো- একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। অথচ দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজপথে নেমেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করছে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পতিত স্বৈরাচার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত সাড়ে ১৫ বছর দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। বিরোধী মতের সবাইকেই নজিরবিহীন হামলা-মামলা, জেল-রিমান্ড খাটতে হয়েছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম-খুন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শত শত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে। গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে শেখ হাসিনা নিজেই। তাই শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে। লকডাউন দিয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে রায় বন্ধ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে, পাচার করেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিরা লন্ডনে শত শত বাড়ির মালিক, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্টের মালিক, কানাডার বেগমপাড়ায় আলিশান বাড়ির মালিক। এগুলো সবই এ দেশের জনগণের ঘামের টাকা চুরি করে তৈরি করেছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দেশের জনগণ অনেক আগেই এই ভাইরাস আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লকডাউন দিয়ে বসে আছে। এখন পতিত স্বৈরাচার দেশের বাইরে বসে যতই লকডাউনের কর্মসূচি দিক, কোনো লাভ নেই। গত তিনদিনে ফ্যাসিস্টের দোসররা সারাদেশে বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়েছে। আগুনে পুড়ে বাসের ড্রাইভার মারা গেছে। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। যখন ক্ষমতায় ছিল তখনো বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এভাবে আগুন জ্বালিয়ে দোষ চাপাতো বিএনপির ঘাড়ে।
লকডাউনের নামে আওয়ামী লীগ মানুষ পুড়িয়ে মারছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, অবৈধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার ও বিচার প্রতিহত করতে লকডাউনের নামে আওয়ামী লীগ মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার এই সংস্কৃতি যে আওয়ামী লীগের, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি কখনো সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে না। যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করে, তারা জনগণের শত্রু নয়। প্রকৃত শত্রু হচ্ছে সেই স্বৈরাচারী শক্তি, যারা বিগত ১৫-১৬ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রেখে জনগণের কণ্ঠরোধ করেছে।
প্রয়াত জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বনির্ভর অর্থনীতির স্থপতি। তিনি গণতন্ত্র, উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে দেশকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি কখনো স্বেচ্ছাচারী হননি, বরং গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়েই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি সর্বদা শালীন ভাষায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জবাব দেন। দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও জনগণের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে তার অঙ্গীকার সুস্পষ্ট।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনে অনেক আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে দল একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমাদের সবার উচিত দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করা।
এ প্রসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মনোনয়ন নিয়ে ভেতরে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু বাইরে যেন বিভক্তি না দেখা দেয়। আমাদের লক্ষ্য- ব্যক্তি নয়, ধানের শীষের বিজয়। এই বিজয়ের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র জড়িত।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন