

করোনাকালে অতিরিক্ত মুসল্লি নিয়ে জুমার নামাজ আদায়ের অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া ইমামকে স্বপদে বহালের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আদালতের আদেশ অনুযায়ী যোগদান ও বকেয়া বেতনের জন্য আবেদন করেন ওই ইমাম মওলানা আজিজার রহমান।
জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিল। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ তখন তুঙ্গে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়, জুমার নামাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমসহ ১০ এবং অন্যান্য নামাজে ৫ জনের বেশি জামাতে নামাজ পড়া যাবে না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পর থেকে নিয়ম মেনেই চলছিল নামাজ। ১৭ এপ্রিল, শুক্রবার। হঠাৎ বাধ সাধেন মুসল্লিরা। জুমার খুতবার পর মুয়াজ্জিন ও অন্যান্য মুসল্লিসহ ঠিক ১০ জন নিয়েই নামাজ শুরু করেন প্রখ্যাত এ আলেম। পরে মসজিদের পাশাপাশি থাকা মুসল্লিরা দৌড়ে এসে পেছনে দাঁড়িয়ে যান নামাজ পড়তে। আর সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় ৩২ বছর ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করা মওলানা আজিজার রহমানের। মুসল্লিদের দায় এসে পড়ে তার ওপর। কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই বরখাস্ত করা হয় ইমামকে।
এমন অপমান সইতে না পেরে অনেকটা ভেঙে পড়েন তিনি। পরে ২০২০ সালের ২৩ জুন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের শরণাপন্ন হন। শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই বেতনসহ স্বপদে বহাল রাখার আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে একই সালের ২৩ জুলাই জেলা জজ আদালতে আপিল করেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২৭ অক্টোবর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়া ওই রায় বহাল রাখেন আদালত।
ভুক্তভোগী ইমাম মওলানা আজিজার রহমান কালবেলাকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে আদেশ জারির দিন থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জামাতে নামাজ পড়ে আসছিলাম। কিন্তু ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জুমার খুতবা শেষে ঠিক ১০ জন নিয়েই নামাজ শুরু করি। পরে বাইরে থেকে কিছু মুসল্লি এসে পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজে অংশ নিয়েছিলেন কি না তাও আমি জানি না। কারণ, আমার তো পেছন ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এরপর ১৯ এপ্রিল হঠাৎ করেই আমাকে ইমামের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেন মসজিদের তৎকালীন সভাপতি। আমি মর্মাহত হই। পরে আমি আদালতের শরণাপন্ন হই। আশা করি, মসজিদ কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাকে কোনো ধরনের হয়রানি না করে স্বপদে বহাল এবং আমার বকেয়া বেতনও দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এদিকে, ওই ইমামকে নিয়ে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক নুর আলম মিয়া নুর লিখেন, ‘সত্যের জয় হবেই, শুধু অপেক্ষা। রাজনৈতিক ট্যাগের কারণেই এতদিন তাকে ইমামতি থেকে বিরত রাখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অফিসিয়ালি এখনো আদালতের কোনো লিখিত নির্দেশনা আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন