বাসস
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেশে এমন জানাজা আগে কেউ দেখেনি 

বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় মানুষের ঢল। ছবি : সংগৃহীত
বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় মানুষের ঢল। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অধ্যায় রচিত হলো বুধবার। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় রাজধানী ঢাকায় নেমে আসে মানুষের ঢল। জনসমুদ্র শব্দটিও যেন এই বিশালতার কাছে ম্লান হয়ে যায়।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নিতে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয় মানুষের স্রোতে। যেদিকে চোখ যায়, শুধু মানুষের মাথা আর মাথা। লাখো কণ্ঠে কান্নাজড়িত দোয়া ও নীরব শোক পুরো এলাকাকে ভারী করে তোলে।

জানাজাস্থল পূর্ণ হয়ে গেলে ভিড় ছড়িয়ে পড়ে উত্তরে জাহাঙ্গীর গেট, পশ্চিমে মিরপুর রোড এবং পূর্বে ফার্মগেট হয়ে কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও মগবাজার পর্যন্ত। মাইকের আওয়াজ যতদূর পৌঁছেছে, মানুষ ততদূর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জানাজায় শরিক হন। অনেকের চোখে ছিল অশ্রু, কেউবা হাত তুলে নীরবে প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন।

এর আগের দিন মঙ্গলবার রাত থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউ, দলীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জড়ো হতে শুরু করেন। বুধবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই জমায়েত রূপ নেয় এক বিশাল জনসমুদ্রে।

পুরান ঢাকার সত্তরোর্ধ্ব ব্যবসায়ী হাজি আবদুল লতিফ বলেন, ১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজা দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, এমন দৃশ্য আর দেখব না। আজ তার স্ত্রীর জানাজায় এসে মনে হচ্ছে ইতিহাস আবার ফিরে এসেছে। ভালোবাসা জোর করে আদায় করা যায় না, এটা আল্লাহর দান।

জানাজায় শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই নন, অংশ নেন চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, রিকশাচালকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। ভিড়ের চাপে সংসদ ভবনের আশপাশের ফুটপাত এমনকি নিকটবর্তী ভবনের ছাদেও মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।

জানাজার ঠিক আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের আবেগঘন বক্তব্য এবং পরে তারেক রহমানের দোয়া চাওয়ার মুহূর্তে পুরো এলাকায় নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। দেশনেত্রীর বিদায়ে শোক যেন একযোগে ছুঁয়ে যায় সবাইকে।

এ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও কূটনীতিকরা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তান, জাপান, সৌদি আরবসহ ঢাকাস্থ ৩২টি দেশের প্রতিনিধিরা জানাজায় অংশ নেন। নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে তারা প্রত্যক্ষ করেন বাংলাদেশের মানুষের এই আবেগঘন বিদায়।

জানাজায় নারীদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। মূল স্থানে প্রবেশ সীমিত থাকলেও নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে হাজারো নারী অশ্রুসজল চোখে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীকে শেষ বিদায় জানান।

বিশ্লেষকদের মতে, এই জানাজা কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম বড় গণজমায়েত। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, কারাবাস ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ক্ষমতার বাইরে থেকেও কীভাবে একজন নেতা গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেন, এই বিদায় তারই প্রমাণ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

থেমে গেল রোনালদোর টানা ১৪ বছরের ‘হ্যাটট্রিক’ সাম্রাজ্য

রেকর্ড, অবিশ্বাস আর বিস্ময়ের বছর—২০২৫ ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের ঝড়

সবার সহযোগিতায় বাঁচাতে চান মুয়াজ্জিন মাহাবুব

ধূমপায়ীদের জন্য দুঃসংবাদ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান মারা গেছেন

কান্নায় ভেঙে পড়লেন মার্কিন অভিনেত্রী

ইয়েমেনের বন্দরে বোমা হামলার ব্যাখ্যা দিল সৌদি আরব

কবরে খেজুর গাছের ডাল বা অন্য গাছের ডাল গেড়ে দেওয়া কি শরিয়তসম্মত?

তুরস্কজুড়ে ব্যাপক অভিযানে গ্রেপ্তার ১২৫

১৭০ টাকার জন্য ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা

১০

ভারতে বিপুল বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি জব্দ

১১

ডিএনসির বিশেষ অভিযানে অবৈধ মদসহ গ্রেপ্তার ১

১২

খালেদা জিয়ার বাসভবনে পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অঘোষিত বৈঠক

১৩

দিপু দাসের মরদেহ গাছে ঝোলানো সেই যুবক গ্রেপ্তার

১৪

দেশে এমন জানাজা আগে কেউ দেখেনি 

১৫

দিনে-দুপুরে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল বাঘ

১৬

নতুন বছর সবার আগে বরণ করল যেসব দেশ

১৭

আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি সৌদির

১৮

বছরের শুরুতে চাঁদপুরে বই পাচ্ছে না ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী

১৯

চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা

২০
X