ক্ষমতাসীন সরকার বিএনপি নিয়ে নানামুখী অপপ্রচারে লিপ্ত মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মিথ্যার আতুর ঘরে জন্ম আওয়ামী নেতাদের। অসত্য মিথ্যাচার, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ছড়ানোই যেন তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। এরা ডাকাতিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ব্যাংক ডাকাতি, অন্যের জমি-জিরাত ডাকাতি, মানুষের নাগরিক অধিকার ডাকাতি, ব্যালট বাক্স ডাকাতিসহ সমগ্র নির্বাচন পদ্ধতিকে ডাকাতি করা ছাড়া তাদের রাজনীতিতে কোনো নীতি ও আদর্শ নেই।
আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ও সেলিমু্জ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা ও আক্রোশবশত তৈরি করেছেন নিষ্ঠুর ধ্বংসের পথ। এক ভয়ানক অবিচার আর অনাচারের রাজত্ব কায়েম করে অপপ্রচারের উপরই টিকে থাকতে হয় অবৈধ ক্ষমতাসীনদের। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করে জবাবদিহীন ও অসীম ক্ষমতাশালী সরকার কায়েম হয়েছে জনগণের ক্ষমতাকে হরণ করে। আর এ কারণেই দেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও অর্থপাচারে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করেছে আওয়ামী সরকার। আর এদিকে সরকারী ব্যর্থতায় খাদ্যপণ্যের চরম মূল্যস্ফীতিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে, রোগে শোকে কাহিল সাধারণ মানুষ। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পিরামিড জমেছে, কিন্তু এ বিষয়ে সরকার ভ্রুক্ষেপহীন।
রিজভী বলেন, এখন চরম সংকট বিরাজ করছে জাতীয় জীবনে। এই ক্রান্তিকালে এ দেশে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আশা-আকাঙ্খাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন- বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিবো। এই হুমকি জনগণের বিরুদ্ধে, জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে। অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং অন্যায্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এই ধরণের হুমকি দিয়েছেন। আর সেই কারণেই অপপ্রচার আর বানোয়াট বক্তব্য ছড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা।
তিনি বলেন, সম্প্রতি হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের ১ দফা দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেগে উঠেছে মানুষ। হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য জনগণের সম্মিলিত মিছিল রাজপথকে প্রকম্পিত করছে। বিএনপি’র সভা-সমাবেশ-মিছিল-মিটিং-স্লোগানে চারিদিক থেকে জনগণের মিলিত স্রোত দেখে হতবিহব্বল হয়ে পড়েছে ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ সরকার। বাক-স্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য অনেক মানুষ জেল-জুলুম-হামলা-মামলার শিকার হয়েও রাজপথে তাদের সরব উপস্থিতির কোনো কমতি হয়নি। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন হবে না, তা আরও তীব্রতর হবে।
রিজভী বলেন, মাত্রাছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাস ও পুলিশী আক্রমণের মুখেও গণতন্ত্রকামী মানুষ গণতন্ত্র ফেরানোর প্রচেষ্টায় অক্লান্ত রয়েছে। তাই অত্যাচারী ও অনাচারী আওয়ামী সরকার ও তাদের দোসর’রা বিএনপির সভা-সমাবেশ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। আগামীকাল বুধবার (১৮ অক্টোবর) বেলা ২টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি (ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ) এর উদ্যোগে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি আহুত এই জনসমাবেশ সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছড়ানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হবে না। জনগণ কিন্তু গভীর নিদ্রায় অচেতন নয়। নতুন যুগের জয়যাত্রার পথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সৌধ ভেঙ্গে জনগণ প্রতিষ্ঠা করবে নিজেদের মালিকানা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। আমি ঢাকাবাসীসহ বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থকদের সরকারী চক্রান্ত ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য জনসমাবেশকে সার্থক ও সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের হামলা ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ১৪ অক্টোবর নিউইয়র্কে বসবাসরত নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইমতেয়াজ আহমেদ বেলাল গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিতে বাংলাদেশের অবৈধ সরকারকে নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়ার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার নামে একটি মামলায় দুই বছরের ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শুধু বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকরাই নাজেহাল হচ্ছে না। বর্হিবিশ্বে বসবাসরত প্রবাসী নাগরিকদেরকেও হয়রানি করা হচ্ছে। এই আইনে মানুষ দেশের বাহিরে থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারছে না। ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই মাধ্যমে বসে পৃথিবীব্যাপী মানুষরা নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার এই কালো আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা খর্ব করছে। আমি এই ফরমায়েশি সাজা বাতিলের জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক নেতা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমানকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তারকে জজকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও কোতয়ালী থানাধীন ৩২নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান ও ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা পৌর যুবদলের সদস্য আনোয়ার হোসেন সোহেলকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৫ অক্টোবর লালবাগের ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ ফালান, আজিমপুর বটতলা ইউনিট বিএনপির সভাপতি মো. ইউসুফ, সদস্য মো. ইমন হোসেন ও খিলগাঁও ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও ফেনী জেলাধীন সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব রাসেল হামিদী ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আলাউদ্দীন একটি মিথ্যা মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন থাকা সত্ত্বেও নিম্ন আদালতে জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
রিজভী আরও বলেন, রোডমার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার কারণে এখনো ফেনী জেলায় মিছিলের ছবি দেখে নেতাকমীর্দের বাড়িতে-বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারই ধারাবাহিকতায় ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়- ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা আরমান, এমরান, যুবদল নেতা হৃদয়, রনি, ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা আলতাফ হোসেন রাজু, ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা শাহিন ও ৭নং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাকিব। ১৫ অক্টোবর কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেস আলী বাবু ও ঢাকা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোকারম হোসেন সাজ্জাদসহ এজাহার নামীয় ৫০ জন এবং অজ্ঞাত আরো অনেক বিএনপি নেতাকমীর্দের আসামী করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
রিজভী আরও জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মোট আহত ১৯৫০ জন, মোট মামলা ৩৪৬ টি, মোট গ্রেপ্তার ২৩৫৫ জন এবং মোট আসামি ১৩,১৯০ জন।
মন্তব্য করুন