বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে চার হাজার ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এ সময়ে ৪১৮ মামলায় ২৮ হাজার ৫৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২ হাজার ৯৫ জনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ১৫ মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও প্রায় ৯০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য তুলে ধরে এসব কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত চার দিনে ১ হাজার ৩৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৩০ জনেরও অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ১৮টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিবরণী তুলে ধরে তিনি বলেন, ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে গত ২৫ অক্টোবর রাত ২টার দিকে সিপাহীবাগের নবীনবাগ ক্যান্ট রেস্টুরেন্টের বিল্ডিংয়ে খায়রুল কবির খোকনের ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। একই দিনে কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের সদস্য মেহেদী হাসান সাকবরকে গভীর রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মনির হোসেন ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্য তাজুল ইসলামকে গভীর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
‘গাজীপুর জেলাধীন কাপাসিয়া উপজেলার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির দূর্গাপুর ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, ঘাগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর, করিহাতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, টোক ইউনিয়ন যুবদল নেতা বিশাল হোসেন, ছাত্রদল নেতা আশিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল কাপাসিয়া উপজেলায় বিপুল সংখ্যক বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে পুলিশ।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, এ ছাড়াও সদর উপজেলার মির্জাপুরে জেলা ছাত্রদলের সদস্য রমজান মেম্বার, ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি মোজাম্মেল, সাবেক ছাত্রদল নেতা হালিম সরকার, রহিম সরকার, মো. হালিম, শ্রীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকরাম হোসেন, জাসাস সদস্য শাহ আলম, কালীগঞ্জ পৌর বিএনপি নেতা ইমাম মাঝি, সদর থানার যুবদল নেতা রমজান, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুস সামাদ মিয়া, শ্রীপুর পৌর বিএনপি নেতা আকরাম হোসেন, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান, কালীগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা নজরুল, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. লোকমান, বিএনপি নেতা লেবু মিয়া, কালীগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা মো. রুহুল আমিন, সদর যুবদল নেতা মো. মোজাম্মেল, ছাত্রদল নেতা হালিম সরকার, রহিম সরকার ও আব্দুল হালিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন মিরপুর থানা বিএনপির সদস্য মো. আকরাম হোসেন, ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম, শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপির সদস্য আলী হোসেন হাবিব, শাহআলী থানা বিএনপির সদস্য মো. আব্দুল মালেক মাস্টার, বিএনপি কর্মী মো. আজমল হোসেন সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন বংশাল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমান, লালবাগ থানাধীন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান পলাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনের ডিওএসচএসের বাসায় গ্রেফতার করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার আপন ছোট ভাই কোরআনে হাফেজ মোহাম্মদ মূসা করিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি হাজী জাহাঙ্গীর ও থানা বিএনপি নেতা লতিফ মেম্বারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়াও থানা বিএনপি নেতা মজিবর রহমান ভূঁইয়ার বাড়িতে গত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ তল্লাশির নামে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। প্রতিদিনের মতো গতকালও নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশির নামে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। গতকাল গভীর রাতে ঢাকা-১৮ এর ধানের শীষের মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের বাসায় গতকাল গভীর রাতে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করে। অথচ এস এম জাহাঙ্গীর গত ৮ মাস ধরে কারাগারে আছেন, তারপরও শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে তার পরিবারকে তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে- যোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মন্তব্য করুন