জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে নদী দখলদারের নাম মুছে দেওয়া এবং নদীর সংখ্যা কমানোর প্রতিবাদ জানিয়ে সব নদী দখলমুক্ত করে দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্ট’।
সংগঠনের নেতারা বলছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদী সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বইটিতে নদ-নদীর সংখ্যা কমানো হয়েছে। এতে প্রায় ৫০০ ভুল তথ্য রয়েছে। অবিলম্বে এই বই প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা নদী দখলকারী ৬০ হাজার জনের নাম ফিরিয়ে আনতে হবে।
আজ শুক্রবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, নদীমাতৃক দেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধান না করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১০০৮টি নদী নির্ধারণ পূর্বক তাড়াহুড়া করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে নদ-নদীর অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা উপস্থাপন করেছে। অথচ নদীমাতৃক এ দেশে আরও ৬০০ এর বেশি নদ-নদীর অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। এ ছাড়াও সম্প্রতি ৩৭ হাজার ৩৯৬ নদী দখলদারের তথ্য মুছে আরও একটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
তারা বলেন, নদ-নদীর খোঁজে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি গত ৩০ বছর ধরে। এই কাজে এখন পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তাতে বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা আলোচিত সব সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক প্রদত্ত নদ-নদীর সংখ্যাটি প্রকৃত সংখ্যার কাছাকাছি বলা না গেলেও তিনি উল্লিখিত গ্রন্থে যে তথ্য দিয়েছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম।
বক্তারা বলেন, গত ১২ বছর ধরে বাংলাদেশের উত্তর জনপদের পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, রায়পুরহাট, গাইবান্ধা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, নবাবগঞ্জসহ রাজশাহীতে সরেজমিন কাজ করেছি। কাজ করতে গিয়ে নতুন করে অসংখ্য নাম না জানা নদ-নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে যার সংখ্যা ১৬৮। যেগুলো এখন অবধি বাংলাদেশের কোনো গ্রন্থে বা মানচিত্রে স্থান করে নিতে পারেনি।
বক্তারা আরও বলেন, এরই মধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল, খুলনা বিভাগ এবং বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে নদ-নদীর তালিকা সংগ্রহ করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে। কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে কোনো তথ্য গ্রহণ করেনি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রকাশিত গ্রন্থের তথ্য এবং অন্যান্য সূত্রের অতিরিক্ত ৩৪৫টি নদ-নদীর নাম পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের সুন্দরবনে নদ-নদীর সংখ্যা ২২৭ উল্লেখ করে তারা বলেন, এর মধ্যে ১৭৯টি নদী এই তালিকায় যুক্ত হয়নি। তা ছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনা, যশোহর, কুষ্টিয়া জেলায় সরেজমিন জরিপ করে ম. ইনামুল হক প্রদত্ত ১২১৬টি নদ-নদীর বাইরে আরও অন্তত ৭০০টি অতিরিক্ত নদ-নদীর সন্ধান মিলেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো জরিপ করলে সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রকৃতপক্ষে নদ-নদীর সংখ্যা দুই সহস্রের কাছাকাছি কিংবা এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান তারা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামসের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনা করেন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আলাউদ্দিন হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. ইজাজ, ইনিশিয়েটিভ ফর পিসের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ, নদী বাঁচাও আন্দোলনের ইফতেখারুল আলম, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন, নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াওদুদ, ইনিশিয়েটিভ ফর পিস (আইএফপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ইবলি সাইন রানা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী।
মন্তব্য করুন