সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপিতে নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের হিড়িক লেগেছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় 'বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর' তকমা দিয়ে নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত কয়েকদিনে বরিশাল, সিলেট, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭১ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পার্টি যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে না পার্টির সিদ্ধান্ত অমান্য করলে শাস্তি পেতেই হবে।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ১৯ প্রার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। অন্যদিকে, সিলেটে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। খুলনায় একই কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন ৯ জন। উল্লেখ্য, বহিষ্কারাদেশের এসব চিঠির প্রত্যেকটিতেই একই ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাদের বহিষ্কারাদেশের চিঠিতে লেখা হয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয়। আপনার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গত ১৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে করা গুম, খুন ও সরকারি পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন পরিবারসহ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো। এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।”
এর আগে খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৯ নেতাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। চিঠিতে পাঠানো বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অথচ আপনি দলের একজন সদস্য হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে এ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন। ১ জুন আপনাদের কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও নোটিশের জবাব দেননি, যা গুরুতর অসদাচরণ। এহেন অবজ্ঞা ও ঔদ্ধত্যের জন্য বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে আপনাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।’
এসব চিঠির ভাষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নেতাকর্মীদের একাংশ চিঠির এমন ভাষাকে শিষ্টাচারবহির্ভূত ও রূঢ় মনে করছেন। বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের অনেকেই দীর্ঘকাল বিএনপির রাজনীতি করেছেন।
সদ্য বহিষ্কৃত বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম আক্ষেপ করে কালবেলাকে বলেন, ‘বহিষ্কৃত হওয়ায় আমার কোনো দুঃখ নেই। যে দলের পেছনে ৪০ বছর শ্রম দিয়েছি, সেই দল আমাকে যে ভাষায় চিঠি দিয়েছে, তা বেদনার। আমি ১৯৮৪ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতি করি। আমি জনগণের সঙ্গে জড়িত অনেক আগে থেকেই। আমি ছাত্রদলও করেছি।’
তবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। দলটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু কালবেলাকে বলেন, কেউ যদি ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে বিএনপি করেই থাকে তাহলে বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে চলাই তো তার জন্য শ্রেয় ছিল। তাদের এটা উপলব্ধিতে আনা উচিত ছিল যে, এই দলটা ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে করছি তাই এই দলটার সিদ্ধান্ত নীতি আদর্শ তো মানতে হবে। পার্টি নির্বাচন করছে না আমারও নির্বাচন করার দরকার নাই- এই বোধটা তো তাদের থাকার কথা ছিল। এই মুহূর্তে স্ট্যান্ড এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে পার্টির নিয়মনীতি আদর্শ যারা মেনে চলবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্য করুন