দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থপাচার রোধসহ বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ইশতেহার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে ১৪৪টি উপধারায় আর্থ-সামাজিক অবস্থার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার পাঠ ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল।
বকুল সাংবাদিকদের জানান, ওয়ার্কার্স পার্টির নিজস্ব প্রতীক হাতুড়ি মার্কায় ২৩ জন প্রার্থী ও জোটের প্রার্থী ২ জন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন জাতীয় সংসদকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকারকে স্মরণ করিয়ে বলা হয়, এই নির্বাচনে যে কোনো ধরনের ব্যর্থতা বিএনপি-জামায়াতসহ বিদেশি শক্তি ষড়যন্ত্রের পথকে প্রশস্ত করবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
২৮ দফার ইশতেহারে আরও রয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, দুর্নীতি দমনে বিশেষ আদালত গঠন করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা, পাচার হওয়ার অর্থ ফেরত আনা, ঋণখেলাপি রোধ, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন, স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন, শ্রমিক-কৃষক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি।
নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে সংসদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালুর কথা জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
পলিটব্যুরোর সদস্য বকুল বলেন, সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলায় কর্মসংস্থান স্কিম চালু, আইনি সুরক্ষাসহ জাতীয় ন্যূনতম মজুরির মানদণ্ড নির্ধারণ, পরিকল্পিত ব্লু ইকোনমি, কোচিং ও নোট ব্যবসা বন্ধ, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা, পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইনে নারীর প্রতি যে বৈষ্যম রয়েছে, তা দূর করে ‘ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড’, এবং বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ফড়িয়া প্রথা ও মজুতদারি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে বিরোধী পক্ষ বিএনপিসহ মিত্ররা একটা লড়াই সংগ্রাম করছেন, আন্দোলন করছেন নির্বাচন বাতিলের অথবা সংস্কারের অথবা নানাবিধ তাদের দাবি-দাওয়া সুনির্দিষ্ট নির্বাচন বাতিলের দাবিটাই করছেন। নির্বাচন বাতিলের দাবি করতে গিয়ে তারা দেশটাকে যে জায়গা নিয়ে গেছেন, আপনারা দেখছেন ট্রেনে ছোট্ট শিশু মায়ের কোলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেল। ট্রাক পুড়ছে, মুরগি বহনকারী ট্রাক দাউ দাউ করে জ্বলছে, রেললাইন উপড়ে ফেলা হলো কেটে, এ রকম একটি জটিল পরিস্থিতি।
তিনি বলেন, একটি বিশেষ দেশের রাষ্ট্রদূত তার অসম্ভব রকমের দৃষ্টিকটূ দৌড়ঝাঁপ, যা কূটনৈতিক আচারকে লঙ্ঘিত করে, তা আমরা দেখেছি এবং গোটা বাংলাদেশকে একটা অস্থিরতা পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যাওয়া হলো। ২০০৪ সালে সীমান্ত অঞ্চলে জামায়াতে ইসলামীর ‘তাণ্ডবের’ কথাও তুলে ধরেন এই পলিটব্যুরোর সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য মাহমুদুল হাসান মানিক, আনিসুর রহমান মল্লিক, শরীফ সাফী, এনামুল হক ইমরান, তপন বসু, কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন