গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে দল থেকে অপসারণ প্রতারণামূলক ও অবৈধ বলে জানিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণঅধিকার পরিষদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ফারুক হোসেন বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে প্রবাসে অবস্থানরত অবস্থায় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অসাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আহ্বায়ককে অব্যাহতির নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর তিনি তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁনকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন। একই দিনে দলের ৪৫ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উভয়ের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন এবং পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সুপারিশ করেন।
তিনি আরও বলেন, ২১ জুন নুরুল হক নুর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরেকটি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে উপস্থিত সবাই সমঝোতার জন্য অনুরোধ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনজনকে আহ্বায়কের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২২ জুন ব্যক্তিবর্গ আহ্বায়কের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, ২৬ জুন দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কিন্তু এ তিনটি দিন অপেক্ষা না করে ২৩ জুন নুর আবারও দপ্তর সমন্বয়কে দিয়ে সভা ডাকেন। সভায় নুর আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের প্রক্রিয়া নিয়ে সদস্যদের কাছে মতামত চান। অধিকাংশ সদস্য এ সময় দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করার অনুরোধ করেন। পরে সভা শেষে নুর গণমাধ্যমকে বলেন, ৮৭ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহ্বায়ক অপসারণ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
অভিযোগ তুলে ফারুক বলেন, ২৫ জুন ড. রেজা কিবরিয়ার কাছে শাকিল উজ্জামানের সই করা অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ পাঠানো হয়, যাতে ৮৪ জনের সই যুক্ত করা হয়। ওই তালিকার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বাক্ষর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের যথাযথ অনুমোদন না নিয়েই সংযুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ১ জুলাই জরুরি সভায় ৪০ থেকে ৪৫ জন সদস্য উপস্থিত হন। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্রের ৩৮ ধারা অনুযায়ী আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস ও অপসারণ করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২১ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৮১ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। কাজেই মাত্র ৪৫ জন সদস্য উপস্থিতি বিশিষ্ট সভায় আহ্বায়ককে অপসারণ অসম্ভব।
সভায় সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোটগ্রহণের আহ্বান জানালে তা না করে প্রকাশ্যে হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলা হয়। ফলে অনেকেই ভোটদানে বিরত থাকেন। কিন্তু সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে রেজা কিবরিয়াকে দুই তৃতীয়াংশের ভোটে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও প্রতারণামূলক।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই, সুস্পষ্টভাবে ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে নুরুল হক নুরের সব তৎপরতা দলীয় গঠনতন্ত্রের এবং মূলনীতির পরিপন্থি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ড. রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অপসারণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি না এবং তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে যারা কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করেছেন; তারা পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।’
গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ন্যাবিচার, অধিকার ও জাতীয়স্বার্থ রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাব। তারই অংশ হিসেবে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করছি।’
দাবিগুলো হলো
অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। অবিলম্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ পাসপোর্টে আগের মতো এক্সেপ্ট ইসরাইল লেখাটি পুনর্বহাল করতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গোপন কোনো সম্পর্ক থাকলে তা তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন