পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা বুধবার (৪ জুন) থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পবিত্র হজের উদ্দেশে সৌদি আরবে যাওয়া ২০ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান বৃহস্পতিবার (৫ জুন) একত্রিত হবেন আরাফাতের পবিত্র ময়দানে। সৌদি আরবে ৯ জিলহজ হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন হাজিরা আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে নামাজ, খুতবা, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। এ দিন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেন সৌদি সরকার নির্ধারিত ইমাম। হজের খুতবা শোনার পাশাপাশি হাজিরা পুরো দিন আল্লাহর দরবারে দোয়া ও ইসতেগফারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করেন।
আরাফার দিনের দোয়ার বিশেষ গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের দোয়াই শ্রেষ্ঠ দোয়া। দোয়া-জিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই দোয়া, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো— لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির।’ অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।’ (জামে তিরমিজি : ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি : ৩৭৭৮)
আরাফার দিন জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করা হয়। এর পরের সময়টি আরাফা দিবসের দোয়া করার সর্বোত্তম সময়।
এই সময় হাজিরা আরাফার ময়দানে নিজেদের নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করেন। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতে থাকেন, হাত উঁচিয়ে বিনয় ও ভক্তিসহকারে আল্লাহর দরবারে আবেদন জানান। আরাফার দিন জোহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিদের দোয়ার আমল অব্যাহত থাকে। এই সময়টি দোয়ার করার উত্তম সময়।
দোয়া করার পদ্ধতি
*দোয়া শুরুর আগে আল্লাহর প্রশংসা ও তার গুণাবলির বর্ণনা করা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠ করা উত্তম।
*এরপর মানুষ নিজের প্রয়োজন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মনের ইচ্ছামতো দোয়া করতে পারে।
*দোয়ার সময় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরাফার দিনের দোয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করাও সুন্নত; সেই দোয়াগুলোর মধ্যে অনেক কল্যাণ ও বরকতের বার্তা রয়েছে।
আরাফার দিনের আমল
*মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে একনিষ্ঠ তাওবার সঙ্গে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হওয়া।
*৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম ফরজ কাজ।
*খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ জোহরের ওয়াক্তের আগেই সেরে নেওয়া। সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জোহর নামাজের পূর্বে উকুফে আরাফার উদ্দেশে গোসল করা সুন্নাত।
*নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে নামিরাসহ আরাফাতের ময়দানের যে কোনো জায়গায় অবস্থান করা এবং নিজ নিজ জায়গায় নামাজ আদায় করা। অর্থাৎ জোহরের সময় জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নামাজ আদায় করার এবং দোয়া-ইসতেগফার করা।
উল্লেখ্য, এ বছর সারাবিশ্ব থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার হজযাত্রী হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে এসেছেন। স্থানীয় হজযাত্রী মিলে এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হতে পারে বলে সৌদি সরকার জানিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৯৫৮ জন।
মন্তব্য করুন