স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর। একবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারা একসঙ্গে থাকেন। আবার একসঙ্গে থাকতে থাকতে দুজনের সম্পর্ক অনেক সময় বন্ধুর মতো হয়ে যায়। এতে একজন আরেকজনকে নাম ধরে ডাকাও শুরু করেন অনেকসময়। অনেকেই আবার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা নিয়ে অনেক মন্তব্য করেন।
স্বামীর নাম ধরে ডাকার বিষয়টি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও রেওয়াজের ওপর। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, রেওয়াজ থাকলে এবং প্রয়োজন হলে যে কোনো সময় স্বামীর নাম উচ্চারণ করা যাবে।
এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামিতে বর্ণিত আছে, ছেলে কর্তৃক তার বাবাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) ওই বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বরং এমন শব্দের মাধ্যমে ডাকা উচিত- যেটা সম্মান বোঝাবে। যেমন- হে আমার সর্দার, অমুকের বাবা ইত্যাদি অথবা সম্মানসূচক পেশার সঙ্গে সংযুক্ত করে ডাকবে। যেমন- ইমাম সাহেব, ডাক্তার সাহেব ইত্যাদি)। কেননা বাবা ও স্বামী- তাদের উভয়ের হক একটু বেশি। (রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার : ০৬/৪১৮)
ইবরাহিম (আ.) যখন তার স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাঈলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে এভাবে ডাকেন—হে ইবরাহিম! পুরো ঘটনা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আছে—ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহিম (আ.) ও তার স্ত্রী (সারার) মধ্যে যা হওয়ার তা হয়ে গেল, তখন ইবরাহিম (আ.) (শিশুপুত্র) ইসমাঈল ও তার মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সঙ্গে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল।
ইসমাঈল (আ.)-এর মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুর জন্য তার স্তনে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহিম (আ.) মক্কায় পৌঁছে হাজেরাকে একটি বিরাট গাছের নিচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) নিজ পরিবারের (সারার) কাছে ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল (আ.)-এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তিনি পেছন থেকে ডেকে বলেন, হে ইবরাহিম! আপনি আমাদের কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? ইবরাহিম (আ.) বলেন, আল্লাহর কাছে। হাজেরা (আ.) বলেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৫)
মন্তব্য করুন