ঘুম আল্লাহর এক অপার নেয়ামত। সুস্থ থাকতে পরিমিত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। যারা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তারাই বুঝতে পারেন এই নিয়ামতের কত মূল্য। অনেকেই অভ্যাসগতভাবে উপুড় হয়ে ঘুমাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। এমনও দেখা যায়, উপুড় হয়ে না শুলে যেন ঘুমই আসে না!
কিন্তু এই অভ্যাসটি শরীরের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও অপছন্দনীয়। উপুড় হয়ে ঘুমানো সাময়িকভাবে আরামদায়ক মনে হলেও এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, মেরুদণ্ডের ক্ষতি, হজমে জটিলতা এবং ঘুমের গুণগত মানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এই ভঙ্গিতে ঘুমানো আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিষেধ করেছেন। হাদিসে এভাবে না ঘুমানোর দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, এভাবে ঘুমানো আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। দ্বিতীয়ত, এটি জাহান্নামিদের ঘুমানোর ভঙ্গি।
হজরত ইবনে তিখফা আল-গিফারি (রহ.) বর্ণনা করেন, তাঁর বাবা বলেন, ‘আমি আসহাবে সুফফার একজন সদস্য ছিলাম। এক রাতে আমি মসজিদে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। এমন সময় কেউ আমার পায়ে হালকা আঘাত করে ডেকে তুললেন এবং বললেন, ‘ওঠো! এভাবে শোয়া আল্লাহর অপছন্দ।’ আমি ঘাড় তুলে দেখি, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমার পাশে দাঁড়িয়ে। (আদবুল মুফরাদ : ১১৯৯)
অন্য এক হাদিসে আবু জর (রা.) বলেন, আমি একবার উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। রাসুল (সা.) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ঠেলে বললেন, ‘হে জুনাইদিব! এটা তো জাহান্নামের শয়নভঙ্গি।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৭২৪)
রাসুল (সা.) যেভাবে এই ভঙ্গিকে ‘জাহান্নামের শয়ন’ বলেছেন, তা কোরআনের আয়াতের সঙ্গেও মিলে যায়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, সেদিন বলা হবে- জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন কর।’ (সুরা আল-কামার : ৪৮)
তাহলে করণীয় কী? আমাদের উচিত যেসব অভ্যাস আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) অপছন্দ করেন, তা থেকে বিরত থাকা। উপুড় হয়ে ঘুমানো এমনই একটি অভ্যাস, যা ইসলাম এবং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও ক্ষতিকর। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করে রাসুল (সা.) যেভাবে ঘুমাতেন সেভাবে ঘুমাতে হবে। আর রাসুল (সা.)-এর ঘুমানোর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে পড়বে।’ (বোখারি : ২৪৭)
মন্তব্য করুন