জন্মের পর থেকে মৃত্যুর দুয়ার, প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি মুহূর্তে মানুষ শিখতে চায়। আদম সন্তানের শেখার তাড়না কখনোই কমে না। জমিনের বুকে যা আছে, সব সে জানতে চায়। আর মানুষের এই শেখা বা জানতে চাওয়ার তাড়নাকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামিনও। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইলমে ওহী আহরণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তিনি বলেন, اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ، خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَق ، اِقْرَاْ وَ رَبُّكَ الْاَكْرَم، الَّذِیْ عَلَّمَ بِالْقَلَم، عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ یَعْلَمْ.
অর্থ : পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন; সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। (সুরা আলাক : ১-৫)
জ্ঞানী ব্যক্তিদের সম্মান জানিয়ে অপর দুটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন,قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الَّذِیْنَ یَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ.
অর্থ : বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? (সুরা যুমার : ৯)
ইরশাদ হয়েছে, یَرْفَعِ اللهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجٰتٍ.
অর্থ : তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্যাদায় উন্নত করবেন। (সুরা মুজাদালাহ : ১১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا، سَهّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنّةِ.
অর্থ : যে ব্যক্তি ইলম তলবের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহ পাক এর বদৌলতে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন। (মুসলিম : ২৬৯৯)
হজরত সাফওয়ান ইবনে আস্সাল (রা.) বলেন, আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তখন তিনি মসজিদে বসে ছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.), আমি এসেছি ইলম শিক্ষা করার জন্য। তিনি (সা.) বললেন, তালেবে ইলমকে মারহাবা। নিশ্চয় তালেবে ইলমকে ফিরিশতাগণ বেষ্টন করে রাখে এবং তাঁদের ডানা দিয়ে তাকে ছাঁয়া দিতে থাকে। অতঃপর তাঁরা সারিবদ্ধভাবে প্রথম আসমান পর্যন্ত মিলে মিলে দাঁড়িয়ে যায়। এসব কিছু তাঁরা সে যা অন্বেষণ করছে তার ভালোবাসায় করে। (আখলাকুল উলামা, আর্জুরী ১/৩৭; তবারানী কাবীর : ৭৩৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৫৫০)
হাদিস শরিফে ইলম অন্বেষণের রাস্তাকেও আল্লাহর রাস্তা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى يَرْجِعَ.
অর্থ : যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের জন্য বের হলো, সে আল্লাহর রাস্তায় বের হলো। (তিরমিজি : ২৬৪৭)
আরও পড়ুন -পাথর লুট : পরকালে দেওয়া হবে যে ভয়াবহ শাস্তি
আমাদের দেশের অনেকেই দেশে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চ শিক্ষা বা উচ্চজ্ঞান লাভের জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ অমুসলিম দেশেও গমন করেন। এখন প্রশ্ন হলো, উচ্চ শিক্ষার জন্য কি অমুসলিম দেশে যাওয়া জায়েজ আছে?
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য অমুসলিম দেশে যেতে ইসলাম নিষেধ করে না। যদি আপনার ঈমানকে রক্ষা করার মতো পুঁজি থাকে, সেখানে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন সেগুলো মাথায় রেখে নিজেকে সমৃদ্ধ করে যান, দাওয়াতি মিশন নিয়ে যান- তাহলে শরিয়তের অনুমোদন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু অমুসলিম দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ইসলামের নির্দেশনা ভিন্ন। ইসলামের ভাষ্য, যেখানে থাকলে আপনার ইমান-আমল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে থাকা জায়েজ নয়। আর যদি ওই দেশগুলোতে মুসলিমদের গ্রহণযোগ্য সোসাইটি থাকে এবং ঈমান-আমল নষ্ট হওয়ার মতো শঙ্কা না থাকে, তবে বসবাস করা যাবে।
মন্তব্য করুন