ইসলামে অজু শুধু নামাজের প্রস্তুতি নয়, এটা আসলে এক বিরাট নিয়ামত। অজুর পানির ফোঁটা ঝরার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ছোট ছোট গোনাহও ঝরে যায়। (মুসলিম : ২৪৪)
তাই অজুকে বলা হয় পবিত্রতার চাবি। আবার হাদিসে আছে, অজু ছাড়া নামাজ হয় না, আর নামাজ হচ্ছে জান্নাতের চাবি। অর্থাৎ, অজু এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে দাঁড়ানোর যোগ্য হয়ে যায়।
আমরা প্রতিদিন কতবার অজু করি- নামাজের সময়, কোরআন তেলাওয়াতের আগে কিংবা পবিত্র হওয়ার জন্য। কিন্তু অনেকে মনে করেন, ওজু করার পর কিংবা ওজুকালীন হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে ওজু নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রশ্ন জাগে, আসলেই কি হাঁটু দেখা গেলে বা হাঁটুর উপর কাপড় উঠলে ওজু ভেঙে যায়? চলুন তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জেনে নিই-
অজু করার নিয়ম হলো, পূর্ণ মুখ বা চেহারা ধোয়া, দুই হাত কনুইসহ ধোয়া, মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা, দুই পা টাখনুসহ ধোয়া।
এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। (সুরা মায়েদা : ৬)
হাঁটুর উপর কাপড় উঠে গেলে কি অজু ভেঙে যায়?
হাদিস শরিফের বরাত দিয়ে রাজধানীর জামিয়া ইকরার ফাজিল মুফতি ইয়াহইয়া শহিদ কালবেলাকে বলেন, অজু ভঙ্গের প্রধান সাতটি কারণ রয়েছে, এই কারণগুলো পাওয়া গেলে অজু ভেঙে যাবে এবং অজু সংশ্লিষ্ট ইবাদতগুলোর জন্য নতুন করে অজু করতে হবে। অজু ভঙ্গের সাতটি কারণের মধ্যে হাঁটুর উপর কাপড় উঠে যাওয়ার বিষয়টি নেই। এজন্য কোনো কারণে কারো হাঁটুর উপর কাপড় উঠলে অজু ভাঙবে না। ঠিক তেমনি নারীদের ক্ষেত্রেও অজু করার পর মাথার কাপড় পড়ে গেলে অজু ভাঙবে না। তবে কেউ দেখলে (নন মাহরাম) গোনাহ হবে।
তবে একজন পুরুষের জন্য সবসময় নাভীর উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং একজন নারীর জন্য পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরজ, তাই এ বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
অজু ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো
১. প্রাকৃতিক পথ দিয়ে কিছু নির্গত হওয়া : পায়খানা, প্রস্রাব, পায়ুপথ দিয়ে বায়ু বা এমন কিছু নির্গত হওয়া। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও নামাজ হবে না, যদি তার ‘হাদাস’ হয় আর অজু না করে।’ (সহিহ মুসলিম : ২২৫)
‘হাদাস’ মানে পায়খানা, প্রস্রাব, পায়ুপথ দিয়ে বায়ু বা এমন কিছু নির্গত হওয়া।
২. ক্ষতস্থান থেকে বের হওয়া তরল : শরীর কোথাও থেকে রক্ত, পুঁজ বা হলুদ পানি এতটুকু যদি বের হয়, যা গড়িয়ে পড়ার মতো, তাহলে তা অজু ভঙ্গ করে।
৩. গভীর ঘুম : গভীর ঘুমে পড়ে গেলে অজু ভেঙে যায়; কারণ, এ সময় শরীরের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে বসে বা হালকা ঘুমে অজু ভাঙে না। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘চোখ জাগ্রত থাকলে পায়ু বন্ধ থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৬,৮৯৩)
৪. সংজ্ঞা হারানো : মূর্ছা যাওয়া, মদ্যপান বা অন্য কারণে সংজ্ঞা হারালে অজু ভেঙে যায়।
৫. জননাঙ্গ স্পর্শ : পুরুষ বা নারী সরাসরি যৌনাঙ্গ দিয়ে অন্যের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভাঙে। (সুনানে আবু দাউদ : ১৮১)
৬. বমি : প্রবল বেগে মুখ ভরে বমি হলে অজু ভেঙে যায়।
৭. নামাজে হাসা : নামাজে জোরে হাসলে অজু ও নামাজ দুটিই ভেঙে যায়। তবে মৃদু হাসলে শুধু নামাজ নষ্ট হয়।
মন্তব্য করুন