নানা আয়োজনে পিতৃগৃহে আসার আমন্ত্রণ জানানো হলো দেবী দুর্গাকে। এ উপলক্ষে সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার (১৪ অক্টোবর)। এ দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চণ্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মহালয়া। এ উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল কালবেলাকে জানান, দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে সকাল ৬-৭ পর্যন্ত মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মহানগর সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর পূজা পরিষদের নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তিল-তর্পণ। সকাল সাড়ে ৮টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠান। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। পরিবেশ করা হয় ভক্তিমূলক গান। নাচে গানে মন্দির প্রাঙ্গণে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। মূলত ভোর সাড়ে ৫টা থেকে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
পুরাণ মতে, মহালয়ার দিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত শনিবার থেকেই দুর্গাপূজার আনন্দধ্বনি শুনতে পাবেন। পূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হবে। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমির মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সব অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস।
পুরাণে আছে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের ১০টি অস্ত্রে সুসজ্জিত দেবী দুর্গা ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে।
মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে এই তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাধারণ সম্পাদক রমেণ মণ্ডল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন