রহমত, বরকত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে বরকতময় এ মাসে বান্দা ক্ষমা পেতে পারেন। তাই বলা হয়, পাপ ক্ষমার সর্বোত্তম মাস রমজান।
বরকতময় রমজান প্রসঙ্গে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে বান্দা খোদার পথে এক দিন রোজা রাখে, আল্লাহতায়ালা তার চেহারা থেকে আগুনকে দূরে সরিয়ে দেন’ (সহিহ মুসলিম)।
অন্য এক হাদিসে হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সঙ্গে সওয়াব এবং এখলাসের সঙ্গে ইবাদত করে, সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছিল’ (সুনানে নিশাই, কিতাবুস সাওম)।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া বাতিল করা হয় না, তাদের একজন হলো সিয়াম পালনকারী, যতক্ষণ না সে ইফতার করছে’ (তিরমিজি, দোয়া অধ্যায়, হাদিস নম্বর-৩৫৯৮)।
রমজানে সিয়াম সাধনায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়াও ক্ষমা প্রাপ্তিতে রয়েছে আরও তিনটি সুযোগ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্বের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭)
হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সূরা মুমিন, আয়াত ৬০)। অন্যদিকে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯)।
তাই বলা যায়, দোয়া মুমিন জীবনের হাতিয়ার। এমনকি দোয়ার ফলে বান্দার ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটে। তাই, দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু কারণ জেনে রাখা প্রয়োজন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি, হাদিস: ৬৩৪০)
দোয়া কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। রাসুল (স.) বলেন, ‘সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে?’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮৯৬৯)
হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগির তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৯)
হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন।
১. হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন
২. অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন
৩. অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন
সাহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগীব, হাদিস : ১৬৩৩)
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)
মন্তব্য করুন