আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ০৯:৫০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভেষজ শাক কাঁটানটে

ভেষজ উদ্ভিদ কাঁটানটে। ছবি : কালবেলা
ভেষজ উদ্ভিদ কাঁটানটে। ছবি : কালবেলা

প্রকৃতিতে জন্মানো অধিকাংশ উদ্ভিদ ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ। এসব উদ্ভিদ আদিকাল থেকেই মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসার ও বনাঞ্চল সংকুচিত হওয়ার কারণে এসব উপকারী উদ্ভিদ দিন দিন প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। ভেষজ শাক খ্যাত এমনই এক উপকারী উদ্ভিদ কাঁটানটে।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে উদ্ভিদটি। এতে পরিবেশসহ হুমকির মুখে পড়ছে আদিকাল থেকে প্রচলিত গাছগাছালির চিকিৎসা ব্যবস্থা।

জানা গেছে, কাঁটানটে একটি বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় অনাবাদি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যামারান্থাস স্পিনোসা। এর ইংরেজি নাম স্পাইনি অ্যামরান্থ। এটি অ্যামরান্থেসিয়া পরিবারের অন্তর্গত একটি কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটি কাঁটাখুইড়া, কাঁটাখুদুইড়া, খুড়াকাঁটা, খৈরাকাটা, কাঁটাখুরা নামেও পরিচিত। এটি সড়কের পাশে, অনাবাদি জমি, ক্ষেতের আল, জলাশয়ের পাড় ও বাড়ির আশপাশের পতিত স্থানে এমনি এমনিতেই জন্মে। ভারত শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে এ উদ্ভিদ দেখা যায়।

কাঁটানটে উদ্ভিদ এক মিটার পর্যন্ত বা তারচেয়ে সামান্য বেশি লম্বা হতে পারে। এর কাণ্ড ও পাতা সবুজ ও লালচে দাগযুক্ত। পাতার বোঁটায় নরম ও সূচালো দুটি কাঁটা থাকে এবং এর কাণ্ড শক্ত কাঁটাযুক্ত। এর কাণ্ড হালকা গোলাপি ও শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট। এর ফুলের রং ফিকে সবুজ। এর ফুল গুচ্ছবদ্ধ। এর বীজ চকচকে কালো। এরা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে।

কাঁটানটে উদ্ভিদের ব্যাপক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। খোসপাঁচড়া, গনোরিয়া, অ্যাকজিমা, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আগুনে পোড়া, ফোঁড়া, মাতৃদুগ্ধ স্বল্পতায় এ উদ্ভিদের পাতা, শিকড়, মূল ও ডালপালা ব্যবহার করা হয়। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সারাতে ও মহিলাদের ঋতুস্রাব রোগ নিরাময়েও এ উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এ উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

কাঁটানটে শাকে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। আহার উপযোগী কাঁটানটের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, থায়ামিন, রিভাফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড। খনিজ উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজ, সেলেনিয়াম। এছাড়াও এতে রয়েছে হিস্টিডিন, আইসোলিউসিন, লিউসিন, থ্রোনাইন, লাইসিন, ট্রিপ্টোফ্যান ইত্যাদি।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আশ্রাফ আলী বলেন, আমরা স্থানীয়রা এটাকে খুদুইরা মাইল্লা বলি। এটি একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর দেখা যেত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাকটি কমে গেছে। এখন খুব একটা দেখা যায় না। তবে আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম আমাদের মা-চাচিরা শাক রান্না করতো। এ শাকের স্বাদও ভালো। এ ছাড়া নানা রোগে এ গাছ ব্যবহার করা হতো।

প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আধুনিক চিকিৎসা প্রসারিত হওয়ার আগে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ঔষধি গাছের মাধ্যমেই নানা রোগের চিকিৎসা করতো। এসব ঔষধি গাছের মাধ্যমেই আরোগ্য পাওয়া যেত। এখন আধুনিক সময়ে মানুষ গাছগাছালির চিকিৎসা অবহেলা করে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় আস্থা রাখছে। এর ফলে ঔষধি গাছগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কাঁটানটে গাছও একটি ঔষধি গাছ। এ গাছের পাতা একসময় মানুষ শাক হিসেবে ব্যবহার করতো। নানা অসুখ-বিসুখেও এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করতো। তবে গাছটি এখন তেমন একটা দেখা যায় না।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, প্রকৃতির সৃষ্টি গাছগাছালি পরিবেশ ও মানুষের পরম বন্ধু। এটা আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে। এজন্য গাছের প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং মানুষের রোগ নিরাময়ে ভেষজ উৎস বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, কাঁটানটে একটি পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। ইউনানি চিকিৎসায়ও এ গাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে প্রকৃতিতে এ উদ্ভিদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মতবিনিময় সভায় যুব নেতারা / জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে 

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে উদ্বেগ ঐক্য পরিষদের 

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ৪০

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

১০

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

১১

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

১২

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১৩

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১৪

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১৫

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৬

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৭

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৮

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৯

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

২০
X