গান এবং বাজনার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জিনিস রয়েছে। কোন জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকারক কোন কিছু না থাকলে ইসলাম তাকে হারাম করেনি।
গান হল যেনার রাস্তা স্বরূপ। এ কারণেই বেশীর ভাগ খারাপ কাজ গানের মজলিসে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বালক, বালিকা, পুরুষ ও মহিলা চরম স্বাধীন এবং লজ্জাহীন হয়ে পড়ে। এভাবে গান শুনতে শুনতে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনে। তখন তাদের জন্য খারাপ কাজ করা সহজ হয়ে দাড়ায়, যা মদ্যপানের সমতুল্য বা আরও বেশি।
এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. বলেছেন, বাজনা হচ্ছে নফসের মদ স্বরুপ। মদ যেমন মানুষের ক্ষতি করে, সেই রকম বাদ্যও মানুষের ক্ষতি করে। যখন গান বাজনা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখনই তারা শিরকে পতিত হয়। আর তারা তখন ফাহেশা কাজ ও জুলুম করতে উদ্যত হয়।
তারা শিরক করতে থাকে এবং যাদের কতল করা নিষেধ তাদেরকেও কতল করতে থাকে। তারা যেনা করতে থাকে। যারা গান বাজনা করে তাদের বেশীর ভাগের মধ্যেই এই তিনটি দোষ দেখা যায়। তাদের বেশীর ভাগই মুখ দিয়ে শিস দেয় এবং হাততালি দেয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে।’ (সূরা লুকমান ৩১: ৬ আয়াত)
এ আয়াতে ব্যবহৃত আরবী শব্দ লাহওয়াল হাদীস বলতে বেশীর ভাগ তাফসীরকারকগণ গানকে বুঝিয়েছেন। সাহাবাদের ভেতর উলামা, ফুকাহা এবং মুফাসসীরিন হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)- তিনজনেই এ আয়াতকে বাদ্য-বাজনা হারাম হওয়ার দলীল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
ইমাম হাসান বছরী র. বলেন উহা গান ও বাদ্য শানে নাজিল হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৩/৪৫১)
আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে সম্বোধন করে বলেন: ‘তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর।’ (সূরা ইসরা ১৭: ৬৪ আয়াত)
রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আমার উম্মাতের মাঝে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যভিচার, পশম, মদ ও বাদ্য-যন্ত্রকে হালাল করে নিবে।’ (সহীহ বুখারীঃ ৫৫৯০)
এ হাদীস থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, বাদ্য-যন্ত্র হারাম। যারা হারামে লিপ্ত হবে তারা গুনাহগার হবে আর যারা হারামকে হালাল করে নিবে তারা কুফরিতে লিপ্ত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন নারী ও পুরুষকে এটি শোভা পায়না যে যখন আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয় নির্ধারণ করে দিবেন তখন তারা এর বিরোধিতা করবে। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করবে সে অবশ্যই বড়ই ভুলের মধ্যে নিপতিত হবে।’ (সূরা আল-আহযাবঃ ৩৬)
আয়েশা রা. বলেন, ‘একদা রাসূল সা. তার ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রা. তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল সা. বললেন, তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।’ (বুখারীঃ ৯৪৪, মুসলিমঃ ৮৯২)
উল্লেখ্য যে, ঈদের সময় এবং বিয়ের সময় কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে দফ বাজানোর অনুমতি দিয়েছে ইসলাম।
মন্তব্য করুন