চট্টগ্রামের আকাশটা আজ যেন একেবারেই মিরাজময়। সেঞ্চুরির উল্লাস শেষ হতে না হতেই বল হাতে ৫ উইকেট! আর সেই অলরাউন্ড ম্যাজিকেই তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ।
কিন্তু কৃতিত্ব একা নিজের ঘাড়ে নিলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। বরং ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে ধন্যবাদ জানালেন কয়েকজন ‘নীরব নায়ক’কে—যাদের সহায়তা ছাড়া হয়তো এদিনটা তার ক্যারিয়ারের সেরা দিনগুলোর একটি হয়ে উঠত না।
সেঞ্চুরির পেছনের গল্পটা বলতেই মিরাজ প্রথমেই স্মরণ করলেন বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার নাফীস ইকবাল ও কোচ বাবুল স্যারকে। সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন কণ্ঠে মিরাজ বলেন, ‘নাফীস ভাই সবসময় আমাকে বলেন, ‘মিরাজ, তুই কিন্তু প্রপার ব্যাটার। তোর কিন্তু ১০০ রান আছে।’ আজ ব্যাটিংয়ে নামার আগেও উনি একই কথা বলেছেন। আমি সত্যি বলি, এই আত্মবিশ্বাসটা অনেক দরকার ছিল।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাবুল স্যার, নাফীস ভাই আর বোলিং কোচ সোহেল ইসলাম ভাই—এই তিনজনকে আজকের দিনে আমি মনের ভেতর থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’
নিজের সেঞ্চুরি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মিরাজ স্পষ্টভাবে বলেন, এটা একক কৃতিত্ব নয়। তিনি বলেন, ‘হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। সাকিব, তাইজুল ভাইও। ওদের জন্যই আমি ১০০ করতে পেরেছি। শেষ দিকে ২ রান নেওয়ার সময় চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু বল ফিল্ডারের হাতে চলে যায়। তখন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিই—থাকলে হবে, না থাকলে কিছু করার নেই।’
চিরচেনা প্রশ্ন—“আপনি কি পরবর্তী সাকিব?” জবাবে মিরাজ শান্ত গলায় বললেন, ‘সাকিব ভাই তাঁর জায়গায় কিংবদন্তি। আমি আমার মতো করে খেলতে চাই। এখন টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ব্যাটিংয়ের ওপর আস্থা রাখছে। আমি চাচ্ছি সেই দায়িত্বটাকে যথাযথভাবে পালন করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বোলিং দিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন ব্যাটিংটা অনেক উন্নত করেছি। এই ভূমিকা এখন গুরুত্বপূর্ণ।’
জিম্বাবুয়ের পেসার মুজারাবানির বাউন্সার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা ছিল। কিন্তু আজ তারই ওভারে মিরাজ ছক্কা মেরে দিলেন স্পষ্ট বার্তা। মিরাজ বলেন, ‘আগে শুনেছি আমি নাকি বাউন্সারে দুর্বল! আজ তো ছয় মেরেছি। আসলে আমি আগেও বাউন্সারে রান করেছি। সব বড় প্লেয়াররাই মাঝেমধ্যে ভুল করে। আমি ওভারটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।’
আজকের দিনটা কি ক্যারিয়ারের সেরা? এই প্রশ্নের জবাবে মিরাজ বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই! জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই এই মাঠে আগেও ১০০ করেছিলাম, কিন্তু ৩ উইকেটে থেমেছিল। এবার ৫ উইকেটও পেলাম, সাথে ম্যাচও জিতলাম। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!’
শেষ সেশনে উইকেট ঝড়ের রহস্য? “(হাসি) কিছু একটা আছে মনে হয়। আগের দিন আমি আর নাঈম ১০ ওভার ভালো করেছিলাম, চাপ তৈরি করেছিলাম। তাইজুল ভাই সেই চাপ কাজে লাগিয়ে উইকেট তুলেছেন। ক্রিকেটে চাপ সৃষ্টি করলেই সুযোগ আসে।’
মিরাজের আজকের পারফরম্যান্স প্রমাণ করে, প্রতিভার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস, সঠিক নির্দেশনা আর দলীয় সহায়তা একজন ক্রিকেটারকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। একদিনে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট—বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন পারফরম্যান্স খুব কমই দেখা গেছে।
এই দিনটা মিরাজের, কিন্তু কৃতিত্ব ভাগ করে নিলেন তিনি, ঠিক যেমন মাঠে দল ভাগ করে নেয় জয়।
মন্তব্য করুন