আইপিএলের ২০২৫ মৌসুমের ফাইনাল। স্টেডিয়ামের উত্তেজনা তুঙ্গে, আলো-ঝলমলে রাতের আবহে ব্যাট হাতে মাঠে নামে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। একটা ফাইনাল মানেই ঝুঁকি নিতে হবে, সাহস দেখাতে হবে। কিন্তু রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু যেন সেদিকে গেল না। পরিকল্পনা ছিল নিরাপদ খেলা, ধাপে ধাপে রান তোলা। তবে সেই টেমপ্লেট-নির্ভর ব্যাটিং শেষ পর্যন্ত যেন নিজেরাই বুমেরাং হিসেবে পেল। পাওয়ারপ্লে থেকে ডেথ ওভার—প্রতিটি ধাপে সুযোগ ছিল আরও কিছু রান তোলার, কিন্তু বারবার থেমে যেতে হলো শৃঙ্খলাপূর্ণ পাঞ্জাব কিংস বোলিংয়ের সামনে।
আরসিবির সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯০ রান। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ থাকা সত্ত্বেও দলটির ইনিংস যেন বারবার আটকে গিয়েছিল পরিকল্পিত বোলিং ও স্মার্ট ফিল্ড সেটআপে। ম্যাচের প্রথম ভাগটা কার্যত নিজেদের করে নিয়েছে পাঞ্জাব কিংস।
ইনিংস শুরুতে আগ্রাসী মেজাজে নামেন ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্ট। মাত্র ৯ বলে ১৬ রান করে আশা জাগিয়েছিলেন, কিন্তু কাইল জেমিসনের নিখুঁত বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে বেঙ্গালুরুর সংগ্রহ ছিল ৫৫/১—একটি শক্ত ভিত্তি হলেও গতি ছিল নিয়ন্ত্রিত।
দলের হাল ধরেন বিরাট কোহলি ও মায়াঙ্ক আগরওয়াল। আগরওয়াল দ্রুত রান তুললেও চাহালের ঘূর্ণিতে আবারও ধরাশায়ী হলেন তিনি (২৪ রান)। কোহলি তখন একপ্রান্তে ধীরগতির ইনিংস চালিয়ে যান—৩৫ বলে করেন ৪৩, যার স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১২২। মাঝে অধিনায়ক রাজত পাটিদার (২৬) কিছুটা গতি ফেরানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু দ্বিতীয়-তৃতীয় গিয়ারেই আটকে ছিল তাঁর ইনিংসও।
শেষ পাঁচ ওভারে আরসিবির স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ৫৮ রান, কিন্তু তাতেই হারায় ৫ উইকেট! লিভিংস্টোন (২৫), জিতেশ শর্মা (২৪) ও শেফার্ড (১৭) দ্রুত রান তুললেও ধারাবাহিক উইকেট পতনের কারণে চাপে পড়ে যায় দল। অর্শদীপ সিং শেষ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ভেঙে দেন টেলএন্ড। এক ওভারে তুলে নেন ক্রুনাল, ভুবনেশ্বর ও শেফার্ডকে। সেই ওভারে দেন মাত্র ৩ রান।
তীরন্দজের মতো লক্ষ্যভেদ করেছেন শ্রেয়াস আইয়ারের বোলাররা। কাইল জেমিসন ও অর্শদীপ সিং ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়ে আরসিবির রানের গতি থামিয়ে দেন। তবে জেমিসন রান দেন অনেক। চাহাল, ওমরজাই ও ভায়শাকও ছিলেন কার্যকর। বোলিংয়ের পাশাপাশি শ্রেয়াসের বোলার রোটেশনও ছিল দুর্দান্ত—মাঝের ওভারগুলোয় কোনোভাবেই বড় শট খেলার সুযোগ দেননি।
ম্যাচ এখন পুরোপুরি খুলে গেছে। ১৯১ রানের লক্ষ্য বড় হলেও অসম্ভব নয়, বিশেষ করে ফাইনালের মঞ্চে যদি পাঞ্জাবের ব্যাটাররা ধৈর্য ও মেজাজ ধরে রাখতে পারেন। বেঙ্গালুরুর জন্য এখন বোলারদের ওপরই ভরসা—এই স্কোর তারা রক্ষা করতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা। আর যদি পারে তবে প্রীতির দল পাবে প্রথম ট্রফির স্বাদ।
মন্তব্য করুন