মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম দিনেই যেন চমক খেলেন টনি হেমিং। বিসিবির নতুন কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব নিতে এসে পিচের অবস্থা খুঁটিয়ে দেখছিলেন, আর তখনই নজরে আসে এক অদ্ভুত দৃশ্য—পিচের পাশেই সবজির বাগান! সেখানে রয়েছে পুঁইশাক, ঢ্যাঁড়শের গাছও। বিস্মিত হেমিং রসিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই বিশেষ শাক কে খায়?’ পরে একটু শ্লেষ মিশিয়ে মন্তব্য, ‘পৃথিবীর আর কোনো স্টেডিয়ামে কি পিচের পাশে সবজির বাগান আছে?’ কথাটা শুনে মাঠকর্মীরা তখন চুপচাপ।
অস্ট্রেলিয়ান এই অভিজ্ঞ কিউরেটরকে বিসিবি নিয়োগ দিয়েছে দুই বছরের জন্য—দেশের সব আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেট ভেন্যুতে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি, আন্তর্জাতিক মানের কিউরেটর গড়ে তোলা এবং মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব তার কাঁধে। তার প্রথম লক্ষ্য মিরপুরের ‘স্লো’ উইকেটের রোগ সারানো।
হেমিংয়ের আগমনের মধ্য দিয়ে মূলত গামিনি ডি সিলভার দীর্ঘদিনের দায়িত্বের অবসান শুরু হয়েছে। শ্রীলঙ্কান কিউরেটর গামিনি নানা বিতর্কের কারণে সমালোচিত ছিলেন—খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিরূপ আচরণ, ব্যক্তিগত জীবনে কেলেঙ্কারি, এমনকি একাডেমি মাঠের গ্রিন শেডে ভুলভাবে উইকেট বানানো, যার ফলে বর্ষাকালেও সেই সুবিধা ব্যবহার সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক পাকিস্তান সিরিজের উইকেট নিয়েও তীব্র সমালোচনা ওঠে, এবং বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রকাশ্যেই মিরপুর থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
আইসিসি একাডেমি ও অস্ট্রেলিয়ার পার্থে উইকেট বানানোর অভিজ্ঞতা থাকা হেমিংকে ফিরিয়ে আনার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আনাম। সভাপতি বুলবুলেরও পূর্ণ সমর্থন ছিল, কারণ আইসিসিতে কাজ করার সময় থেকেই তিনি হেমিংকে চেনেন।
তবে গামিনিকে আপাতত চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। তিনি স্বেচ্ছায় পদ না ছাড়লে ঢাকার বাইরে অন্য কোনো ভেন্যুতে তাকে কাজ করতে হতে পারে। গুঞ্জন ছিল, শ্রীলঙ্কায় ফেরার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু বিসিবি সূত্রে জানা গেছে—এখনো তেমন কিছু ঘটেনি।
প্রথম দিনেই পুঁই বাগান দেখে অবাক হওয়া হেমিং এবার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন মিরপুরের উইকেট ফের আন্তর্জাতিক মানে ফিরিয়ে আনার। এখন দেখার বিষয়—তার হাত ধরে পিচে কতটা বদল আসে, আর পিচের পাশে সেই ‘সবজির বাগান’ কতদিন টিকে থাকে!
মন্তব্য করুন