যে কোনো খেলায় ভাগ্য অনেক বড় কিছু। ভাগ্য সহায় না থাকায় বিশ্বের অনেক বড় বড় দলও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যের দেখা পায়নি। এরকম দলের তালিকা করা হলে সবার উপরের দিকেই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের নাম। ক্রিকেটে সবচেয়ে দুর্ভাগা দল যদি প্রোটিয়াদের বলা হয় তাহলে আপত্তি করার লোক খুব বেশি থাকবে না। পুরো বিশ্বকাপে ভালো খেলে সেমিফাইনালে গিয়েই কেনো জানি ভাগ্য আর সহায় দেয়না বাভুমাদের। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তার ব্যতিক্রম হলো না অস্ট্রেলিয়াকে বাগে পেয়েও ভাগ্য আর ক্যাচ মিসের মহরায় ফাইনাল আর যাওয়া হলো না প্রোটিয়াদের। অনেক কাছে এসেও দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তিন উইকেটের পরাজয় বরণ করে নিতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকার।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১২ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০১ রান করেছেন মিলার। তাছাড়া ৪৭ রান এসেছে হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। অজিদের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক।
জবাবে খেলতে নেমে ৪৭ ওভার ২ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান এসেছে ট্রাভিস হেডের ব্যাট থেকে। তাছাড়া ৩০ রান করেছেন স্মিথ। প্রোটিয়াদের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন জেরাল্ড কোয়েটজে ও তাবরাইজ শামসি।
এই ম্যাচ হারের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি দোষ ধরতে পারে নিজেদের তারপর হয়তো ভাগ্যের। পুরো ম্যাচে তারা যতগুলো ক্যাচ মিস করেছে তার অর্ধেক ধরলেও ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত।
ছোট পুঁজি নিয়েও বোলাররা দারুণ লড়াই করলেও বাজে ফিল্ডিং ও প্রথমে বাজে ব্যাটিংয়ের জন্য সেমি-ফাইনালে হেরে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
২১৩ রানের লক্ষ্যে শুরুটা উড়ন্ত করেছিলেন ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছিটকে দেওয়ার আভাস দিয়েছিল তাদের ব্যাটিং। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে ফিরে এসেছে বারবার। কলকাতার উইকেটে টার্ন ছিল, মহারাজ ও শামসি সেখানে ছড়ি ঘুরিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারের ওপর।
শুরুতে পেসাররা মার খাওয়ায় ইনিংসের সপ্তম ওভারেই স্পিনারের দ্বারস্থ হন টেম্বা বাভুমা। বোলিংয়ে এসে উইকেট এনে দেন মার্করাম। একটু জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ওয়ার্নার। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ওপেনার আউট হয়েছেন ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি মিচেল মার্শ।
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরও অস্ট্রেলিয়াকে চাপে পড়তে দেননি হেড ও স্মিথ। ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন হেড। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা হেডকে ফেরান মহারাজ। বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরে যান ৬২ রানের ইনিংস খেলে।
মার্নাস ল্যাবুশেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শামসি। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি ১৮ রান করা এই ব্যাটারের। দ্রুতই ফিরে গেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শামসির শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বলের লাইন মিস করে ফিরে গেছেন বোল্ড হয়ে।
নিজের সবশেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল এদিন আউট হয়েছেন ১ রানে। সবশেষ ৬৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে সাউথ আফ্রিকা। তবে তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও জশ ইংলিস জুটি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭ রান। স্মিথকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জেরাল্ড কোয়েতজে। লম্বা সময় টিকে থাকা স্মিথকে ফিরতে হয় ৬২ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে।
স্মিথ ফেরার পর স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইংলিস। তখনও হাতে পর্যাপ্ত বল থাকায় চাপ নেয়ার তেমন প্রয়োজন ছিল না তার। অস্ট্রেলিয়া যখন জয় থেকে ২০ রান দূরে তখন সাজঘরে ফেরেন ইংলিস। কোয়েতজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৪৯ বলে ২৮ রান করা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করেন কামিন্স ও স্টার্ক।
এর আগে ইডেন গার্ডেন্সের উইকেট আজ তার নিজস্ব রূপ বদলে মৃত্যু ফাঁদ হয়ে যেন অপেক্ষা করছিল প্রোটিয়াদের জন্য। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েন কুইন্টন ডি কক-টেম্বা বাভুমারা। নতুন বলে বাড়তি বাউন্স আর সুইংয়ে রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখেছেন তারা।
১৪ ওভারের মধ্যেই আউট হয়ে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক, টেম্বা বাভুমা, রাসি ফন ডার ডুসেন এবং এইডেন মার্করাম। প্রথম ওভারের শেষ বলেই মিচেল স্টার্ক ফিরিয়ে দেন টেম্বা বাভুমাকে। উইকেটের পেছনে জস ইংলিশের হাতে ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ৪ বলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি।
৬ষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন কুইন্টন ডি কক। জস হ্যাজলউডের বলে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দেন ডি কক। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে আসা ডি কক একেবারে জায়গামত এসে ব্যর্থ হলেন। দলীয় রান ছিল তখন ৮ রান।
দলীয় ২২ রানের মাথায় ফিরে যান এইডেন মার্করাম। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন তিনি। ১০ রান করে তিনি আউট হন হ্যাজলউডের বলে। ২৪ রানের মাথায় আউট হন রাসি ফন ডার ডুসেন। তিনি করেন ৬ রান।
এর পর বেরসিকের মতো হানা দেয় বৃষ্টি। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর প্রোটিয়াদের ইনিংস গড়ার দায়িত্ব কাধে তুলে নেন দুই হার্ড হিটার ব্যাটার ক্লাসেন ও মিলার। দুজনের প্রায় ১০০ রানের জুটিতে ৩০ ওভার শেষে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১১১ রান দাড়ায়।
ক্লাসেন এবং মিলার অজিদের প্রধান অস্ত্র অ্যাডাম জাম্পাকে মাঠের চার পাশে আছড়ে ফেলতে থাকেন। যেভাবে তারা খেলছিল তাতে বাধ্য হয়েই অজি অধিনায়ক কামিন্স বোলিংয়ে নিয়ে আসেন পার্ট টাইম বোলার হেডকে। আর এসেই অজি ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরান হেড। টানা দুই বলে ফেরান বিপদজনক ক্লাসেন ও জানসেনকে
তবে তখনও ক্রিজে ছিলেন কিলার মিলার। দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পর জেরাল্ড কোয়েটজেকে সঙ্গে নিয়ে আবারও ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন ডেভিড মিলার। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোয়েটজে। ৩৯ বলে ১৯ রান করেছেন তিনি।
এক পাশে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল চললেও অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিলার। ১১৪ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন তিনি। অবশ্য সেঞ্চুরি তুলে আর বেশি দূর যেতে পারেননি। ১১৬ বলে ১০১ রান করে ফিরেছেন তিনি।
শেষ দিকে কেশব মহারাজ-কাগিসো রাবাদারা দ্রুত ফিরলে নির্ধারিত ৫০ ওভারের আগেই অলআউট হয় প্রোটিয়ারা।
মন্তব্য করুন